The Mighty INDIA CALLING: খুব ভোরে একদিন পন্ডিচেরিতে (পর্ব ৩৫)

পন্ডিচেরিতে পৌঁছালাম ভোর বেলা। আমাদের বাস এসে থামল এমন একটা জায়গায় যার নাম ‘মারাইমালাই আদি গাসালাই’ । আমরা এসি বাসে আরাম করে চোখ বুজে পড়ে রইলাম। আমাদের কমিটির লোকজন নামলো হোটেল ঠিক করতে। দুই একটা হোটেলের পাশে বাস পার্ক করা হলো। কিন্তু ঠিকঠাক হচ্ছিলো না। অবশেষে ইশতিয়াক আমাদের সবার উদ্দেশ্যে বললো যে হোটেল একটা পাওয়া গেছে কিন্তু হোটেল ওয়ালাদের একটু ‘শুচি’ সমস্যা আছে। একসাথে ছেচল্লিশজনকে তারা থাকতে দিচ্ছে কিন্তু তাদের একটাই শর্ত যেন রুম আর বাথরুম পরিষ্কার থাকে। শুনে আমাদের হাসি পেল। ওরা আমাদের পরিষ্কার রুম আর বাথরুম দিলে আমরাও পরিষ্কার রুম আর বাথরুমই ফেরত দিবো- এ আর এমন কি?

আমরা লাইন ধরে বাস থেকে নামতে লাগলাম। আমাদের লাগেজগুলো বের করে নিয়ে লাইন ধরে মালপত্র টানতে টানতে দুইটা গলি পার হয়ে আমাদের হোটেলের দিকে যেতে লাগলাম। আর রাস্তাঘাটে স্কুলের বাচ্চারা ব্যাগ কাঁধে নিয়ে অবাক হয়ে আমাদের দেখতে লাগলো। যে হোটেলে আমরা ঢুকলাম তার নাম ‘হোটেল সর্বমংগলম ইন’ । ভেতরটা বেশ পরিপাটি করে সাজানো। ঠিক কমার্শিয়াল হোটেলের মতন না, বরং বাসাবাড়ির মত ঘরোয়া। আমাদের রুম ঠিক করা হয়েছে তিন তলায়। সব চেয়ে বড় যে সমস্যায় পড়লাম যখন টের পেলাম যে হোটেলে কোন লিফট নাই। কাঠের রেলিং দেওয়া চকচকে সিড়ি বেয়ে আমরা আমাদের মালপত্র টেনে উঠাতে লাগলাম। তিন তলায় যখন পৌঁছালাম, তখন আর আমাদের গায়ে কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই। খুঁজে খুঁজে আমাদের রুম বের করলাম। ছোট্ট একটা পরিপাটি রুম যার একটা মাত্র জানালা করিডরে খুলে, আর সাথে ঝকঝকে একটা বাথরুম। বরাবরের মতই রুমে ঢুকে ফ্যান ছেড়ে আমরা চারজন বিছানায় ফ্ল্যাট হয়ে পড়ে গেলাম।

'হোটেল সর্বমঙ্গলম ইন' এর অ্যাট্রিয়াম
‘হোটেল সর্বমঙ্গলম ইন’ এর অ্যাট্রিয়াম

একজন একজন করে গোসল করতে ঢুকলাম বাথরুমে। মজুমদার আর মৌলি আগে গোসল করে বের হয়ে পড়লো। আমি আর রুবাইদা বের হলাম খানিক্ষণ পরে। হোটেলের নিচে রিসেপশনে আমাদের প্রত্যেককে একটা করে ফর্ম ফিল আপ করে সাথে পাসপোর্ট সাইজের ছবি জুড়ে দিতে হলো। বিদেশি নাগরিকদের নাকি এসব করতে হয়! আমরা মুখ টিপে হাসলাম। সারা ইন্ডিয়ার কোথাও এরকম ঝামেলা করতে হয় নাই দেখে বুঝলাম উনারা অন্য সবার চাইতে বেশি সাবধানী। এই সব করে বের হতে হতে বেশ দেরি হয়ে গেলো। আমি, রুবাইদা, মিম আর অন্তরা বের হলাম একসাথে। মোবাইলে দেখলাম কাছেই আছে আন্না সালাই রোড। খাওয়া দাওয়া করতে সেদিকেই হাঁটা ধরলাম।

রাস্তাঘাট একদম নির্জন। আশেপাশে দোকানপাট প্রায় সবই ফাঁকা। একটা ফাস্ট ফুড টাইপের দোকানে গিয়ে ঢুকলাম আমরা। কোন কাস্টোমার নাই। আমাদের দেখে একজন লোক এগিয়ে এসে তামিল ভাষায় কি যেন বলেই বের হয়ে গেলো। আমরা একটু অবাক হয়ে গেলাম – এ কি ব্যাপার রে ভাই? কাস্টোমারকে রেখে দোকানদার বের হয়ে যায় কখনও তো দেখি নাই! কি আর করা, খালি দোকানে বসে আমরা মেনু উল্টাচ্ছিলাম। মিনিট পাঁচেক পর অন্য একজন লোক ঢুকে আমাদের কাছে এসে অর্ডার নেওয়ার ভংগিতে দাঁড়ালো। আমরা অর্ডার দিতে লাগলাম। কিন্তু লোকটা ভাঙ্গা ভাঙ্গা হিন্দিতে কথা বলে অদ্ভূতভাবে ডানে বামে মাথা নাড়াতে লাগলো। আমরা বুঝলাম না সে কি অর্ডার নিচ্ছে নাকি নিচ্ছে না? খানিক পরে বুঝলাম এইরকম ভঙ্গিতে মাথা নাড়ানোর অর্থ ‘হ্যাঁ’। আমি আর রুবাইদা ভেজ নিচ্ছিলাম দেখে কেন যেন সে বলে উঠলো, ‘চিকেন হালাল’। বলেই সে কাঁচের দরজায় লাগানো একটা স্টিকার দেখালো, ‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট হালাল’। আমি শিওর হবার জন্য আরেকবার জিজ্ঞেস করলাম সত্যিই হালাল কিনা? উনি আবার কনফিউসড ভঙ্গিতে মাথা নাড়িয়ে উত্তর দিলেন, ‘হ্যাঁ’।

যাই হোক অর্ডার দিয়ে আমরা গল্পগুজব করতে লাগলাম। বেশ অনেকক্ষণ সময় পর খাবার আসলো। আমি অর্ডার দিয়েছিলাম ১০০ রুপির চিকেন চিজ বার্গার। আমারটাই আসলো সবার আগে। চারকোনা প্লেটে সার্ভ করা মেয়নিজ আর লেটুস দেওয়া বার্গারটা বেশ মজাই ছিলো। অন্যদের অর্ডার গুলোও চলে আসলো। আমরা গপাগপ খেতে লাগলাম। খেয়েদেয়ে বিল মিটিয়ে দিয়ে বের হয়ে আসলাম সেই দোকান থেকে। এবার হাঁটতে লাগলাম রাস্তা ধরে। রাস্তার পাশেই একটা সিনেমা হলে বড় পোস্টার ঝুলছে। নামটা তামিল ভাষায় লিখা। পোস্টারে পৌরানিক দৈত্যের মতন একজনের সাথে সুন্দরী এক নায়িকার ছবি আছে। আমার সাউথের একটা মুভি হলে বসে দেখার খুব শখ ছিলো। কিন্তু এই দৈত্য দানব দেখে মুভিটা আর দেখতে ইচ্ছা হলো না। যদি খুব ভায়োলেন্ট মুভি হয়, এই ভয়ে আমি আর ওদিকের পথ মাড়ালাম না। পরে জেনেছিলাম সিনেমাটার নাম ‘আই’।

হালাল সেই চিকেন চিজ বার্গার
হালাল সেই চিকেন চিজ বার্গার

কিছুদূর হেঁটেই আমরা তাজ্জব হয়ে গেলাম। এ কি, ভুল দেখছি না তো? এ যে বিশাল এক ‘পোথি’র শো রুম! মাত্রই ত্রিভান্দামে ঘুরে আসা শাড়ির জনপ্রিয় ব্র্যান্ড পোথির শো রুম দাঁড়িয়ে আছে আমাদের সামনে। আমরা হৈ হৈ করে ঢুকে পড়লাম তাতে। ত্রিভান্দামের চাইতে এই পোথিতে ভীড় একদমই কম। ভীড়বাট্টা দেখে আমরা আরও খুশী হয়ে গেলাম। আমাদের অনেকজনকেই দেখলাম বিভিন্ন ফ্লোরে শাড়ি দেখছে। লোকজন নাই দেখে শান্তি মত ঘুরে ঘুরে শাড়ি পছন্দ করতে লাগলাম আমরা। একেকবার একেক ফ্লোরে ঘুরে ঘুরে শাড়ি দেখতে দেখতে কখন যে সময় কেটে যেতে লাগলো টেরই পাই নাই। মোটমাট তিনটা শাড়ি আর সাতটা থ্রি পিস কিনে আমরা যখন বের হই পোথি থেকে তখন বিকাল হয়ে গেছে। আমি আর রুবাইদা দুই হাত ভর্তি শপিং নিয়ে হোটেলে ফিরে গেলাম। কয়েক ঘন্টা রেস্ট নেওয়া জরুরি, না হলে শরীর চলবে না।

অল্প বিস্তর রেস্ট নিয়ে আমরা যখন আবার বের হবার প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম তখন সন্ধ্যা হয়ে গেছে। আমি, অন্তরা, মিম আর রুবাইদা বের হলাম বিচের উদ্দেশ্যে। লোকজনকে জিজ্ঞেস করতে করতে নির্জন ফাঁকা রাস্তা ধরে হাঁটতে লাগলাম আমরা। একটা মজার জিনিস আমার চোখে পড়লো। রাস্তার আশেপাশের দেওয়ালে সিনেমার পোস্টারের মত নানা রকমের শুভেচ্ছা মূলক পোস্টার। যেমন- কোন একটা বাচ্চার জন্মদিন, তাকে শুভেচ্ছা জানিয়ে হয় তো তার পরিবারের লোকজন পোস্টার টানিয়েছে। পোস্টারে বড় করে বাচ্চাটার ছবি, তারপর সবার উপরে নায়ক রজনীকান্তের ছবি, তার আশে পাশে অন্য মানুষদের আলাদা আলাদা পোজ মারা ছবি। এরাই মনে হচ্ছে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। এই রকম এক দম্পতিকে বিয়ের শুভেচ্ছা জানিয়ে পোস্টার, একজন বুড়ো মানুষকে শুভেচ্ছা জানিয়েও পোস্টার দেখলাম। মজাই পেলাম। এই সব দেখেই বুঝলাম, এই এলাকার লোকদের জীবনের সাথে সিনেমা ব্যাপারটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত।

একটি শিশুকে অভিনন্দন জানিয়ে তার শুভাকাংখীদের পোস্টার!!!!!!
একটি শিশুকে অভিনন্দন জানিয়ে তার শুভাকাংখীদের পোস্টার!!!!!!

বেশ কিছুক্ষণ হাঁটার পর একটা দোকানে চা খাওয়ার জন্য সবাই থামলো। দেখলাম জুবায়ের আর রাজিব ভাড়া নেওয়া একটা বাইক পার্ক করে সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। এর আগে গোয়াতেও বাইক ভাড়া নেওয়ার ব্যবস্থা ছিলো। কিন্তু সেখানে বাইক চালাতে লাইসেন্স লাগে। তাই আমাদের কেউ বাইক ভাড়া নিতে পারে নাই। কিন্তু পন্ডিচেরিতে লাইসেন্সের বালাই নাই। এমনিতেই বাইক ভাড়া পাওয়া যায়। আমাদের জাফর, শুভ, রিজভি, ইশতিয়াক, রাজিব ওদের সবাইকেই দেখা গেল একটা করে বাইকে চেপে ঘোরাঘুরি করতে। এতে একটা ভাবও আসে! যাই হোক, ওরাও চা খাবে। চায়ের অর্ডার দিয়ে আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম। গরম গরম তেলে কি কি যেন ভাজা হচ্ছে। রুবাইদা বেসনে মরিচ ভাজা কিনলো কয়েকটা। আমি খেলাম সিংগারা। আমরা খাওয়া দাওয়া শেষ করে নানা রকম গল্প করতে লাগালাম। কিন্তু চা আর আসে না। সারাটা ইন্ডিয়াতেই লোকজনের এই ঢিলামি এত দিনে আমাদের সহ্য হয়ে যাওয়া উচিৎ ছিলো, কিন্তু তাতেও আমাদের ধৈর্য্যের বাঁধ ভাঙ্গে। ঠিক এমন সময়ে চা এসে হাজির হলো। তাড়াতাড়ি চা খেয়ে আমরা রওয়ানা হলাম।

রাস্তাঘাট শুনশান নিরব। হাঁটতে চলতে খুবই আরাম। হাঁটতে হাঁটতে আমরা বিচের কাছাকাছি পৌঁছে গেলাম। দেখতে পেলাম অভিজাত সব ইতালিয় রেস্টুরেন্ট। সেগুলোকে পাশ কাটিয়ে আমরা বিচে চলে গেলাম। এই বিচটা আমার পরিচিত কক্সবাজার বা গোয়ার বিচের মতন নয়। পায়ে হাঁটার জন্য একটা বিশাল চওড়া রাস্তা, তার পাশে অনেকটা জায়গা ছেড়ে বেশ নিচে কঙ্ক্রিটের ব্লক ফেলা। ঠিক সেই ব্লক গুলোতে আছড়ে পড়ছে সমুদ্রের ঢেউ। এখানে সমুদ্রের পানিতে পা ভিজিয়ে হাঁটার ব্যাপার নাই। ব্লকগুলোতে যাওয়াই বেশ কঠিন কাজ। আর একবার পা হড়কে পড়ে গেলে তো সবই শেষ!

চারদিক বেশ শান্ত। লোকজন ঘুরছে ফিরছে, কিন্তু কোন হৈহুল্লোড় নাই। হলুদ সোডিয়াম লাইটের আলোতে ঝকঝক করছে চারদিক। ঠান্ডা প্রাণ জুড়ানো বাতাসে আমাদের সবার মন ভালো হয়ে গেলো। আমরা সবাই বসে গল্প করতে লাগলাম। বিশুদ্ধ নোনা বাতাস, মায়াবী সোডিয়াম লাইট, আর পায়ের নিচে উত্তাল সমুদ্রের গর্জন- আহ, এত শান্তি কি করে লুকিয়ে থাকতে পারে একটা জায়গায়? অনেকক্ষণ বসে রইলাম আমরা। তারপর হাঁটতে লাগলাম বড় রাস্তা ধরে এই মাথা টু ওই মাথা। মন আমাদের এত ফুরফুরে হয়ে গেলো যে ভুলেই যাচ্ছিলাম যে রাত বাড়ছে, আমাদের ফিরে যেতে হবে। রাত আনুমানিক সোয়া নয়টার দিকে আমরা বের হয়ে আসলাম সেই বিচ থেকে। এতটা পথ হেঁটে আর হোটেল যেতে ইচ্ছা হচ্ছিলো না। ৪০ রুপি দিয়ে একটা অটো ভাড়া করলাম। একটা অদ্ভূত জিনিস খেয়াল করলাম, পন্ডিচেরির অটোতে ইলেক্ট্রিক হর্নের বদলে বাচ্চাদের খেলনা ভেঁপু লাগানো। ড্রাইভার চালাতে চালাতে বাঁশির পিছনের রাবারের বলটাতে টিপ দিলে পোঁপ পোঁপ করে বেজে ওঠে সেটা। বেশ মজা লাগলো। অটোতে করে খুব কম সময়ে ফিরলাম হোটেলে।

হলুদ সোডিয়াম বাতির আলোতে উদ্ভাসিত পন্ডিচেরির বিচ ও তার পাশের বিশাল চওড়া রাস্তা
হলুদ সোডিয়াম বাতির আলোতে উদ্ভাসিত পন্ডিচেরির বিচ ও তার পাশের বিশাল চওড়া রাস্তা

হোটেলে নেমেই রুবাইদা রুমে চলে গেলো। আমি, অন্তরা আর মিম রাতের খাবার খাওয়ার জন্য পায়তারা করতে লাগলাম। হোটেলের গলিটা পার হয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে আরও দুই একটা গলি পার হয়েই কয়েকটা ছোট্ট খাবারের দোকান পেয়ে গেলাম। দোকানটা খুব ছোট, তাই রাস্তার উপরই চেয়ার টেবিল পেতে খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আমরা একটা টেবিলের চার পাশে ঘিরে বসলাম। একজন লোক এগিয়ে আসলো। পরিষ্কার হিন্দিতে জানালো পরোটা, চিকেন আর মাটন পাওয়া যাবে। আমি জিজ্ঞেস করলাম ভেজ কিছু আছে কিনা? জানতে পারলাম একটা সব্জির তরকারি আছে। কিন্তু লোকটা আগ্রহী হয়ে জানতে চাইলো, মাংস না খেয়ে কেন ভেজ অর্ডার দিচ্ছি। আমার হয়ে মিম এর উত্তর দিয়ে দিলো। শুনে লোকটা হাসি মুখে বললো এখানে সব মাংসই হালাল। আমরা শুনে খুশি হয়ে গেলাম। আমি শিওর হওয়ার জন্য দ্বিতীয়বার জিজ্ঞেস করলাম, ‘সত্যিই তো?’। লোকটা হাসিমুখে জবাব দিলো, ‘হান্ড্রেড পার্সেন্ট অ্যান্ড ইটস অ্যা প্রমিস’। তারপর আর কি, আমরা চিকেন আর মাটন দুটোই অর্ডার দিলাম। পরোটা দিয়ে মজা করে খেলাম হালাল চিকেন আর মাটন। বেশ মজা ছিলো খেতে। আমার বিল আসলো ৬৭ রুপি। খেয়ে দেয়ে বিল মিটিয়ে দিয়ে তৃপ্ত মনে ঢেঁকুর তুলতে তুলতে হোটেলের দিকে রওয়ানা দিলাম।

হোটেলের লবিতে দেখি এক মহিলাকে ঘিরে আমাদের লোকজনের জটলা বেঁধে আছে। ভদ্রমহিলা পরিবার নিয়ে কলকাতা থেকে এসেছেন। কয়েকদিন বাংলা না বলতে পেরে ওনার কেমন যেন হাঁসফাঁস লাগছিলো। হঠাৎ আমাদের বাংলা কথা বলতে শুনে উনি যেন হাঁপ ছেড়ে বাঁচলেন। বাংলায় গল্প জুড়ে দিলেন আমাদের সাথে। যখন জানতে পারলেন আমাদের কান্ড কাহিনী, খুব মজা পেলেন। বিরক্ত হয়ে বলতে লাগলেন এটা একটা জায়গা হলো নাকি- কেউ তো কোন ভাষাই বোঝে না। এখানকার শাড়ির যা দাম, কোলকাতায় তো সব নাকি পানির দরে পাওয়া যায়। মন খুলে কথা বলতে লাগলেন আমাদের সাথে। বাংলা ভাষায় কথা বলতে পেরে চোখে মুখে আনন্দ ঠিকরে পড়ছিলো ওনার।

রুমে ফিরে আসলাম। আমাদের পাশের রুমটা নিশাতদের রুম। নিশাতের মোবাইলটা ধার করে শাড়ি, জামা কাপড়ের ছবি তুলে বাসার লোকজনকে পাঠালাম। লাগেজ উলট পালট করে সব কিছু ভিতরে ঢুকালাম। ততক্ষণে মজুমদার আর মৌলিও ফেরত এসে গেছে। গোছগাছ শেষ হলে জোড়ে ফ্যান ছেড়ে লাইট নিভিয়ে আমরা চারজন শুয়ে পড়লাম। এবং চোখ বন্ধ করার সাথে সাথেই ঘুম চলে আসলো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *