The Mighty INDIA CALLING: যে দিনের শুরু সেই ‘হাওড়া’তেই (পর্ব ৩৯)

আমার গভীর ঘুমটা ভাংলো কারও ধাক্কার চোটে। টের পেলাম রুবাইদা আমাকে ধাক্কা দিয়ে ডাকছে। অনেক কষ্টে চোখ খুললাম। দেখি ট্রেনের ভেতরটা অন্ধকার আর কেমন যেন খালি খালি। তড়াক করে উঠে বসলাম। ট্রেন দেখি থেমে আছে! সব লোকজন নেমেও গেছে, খালি আমরাই আছি ট্রেনের মধ্যে! কি হচ্ছে, কিছুই তো বুঝতে পারছি না!

কয়েক সেকেন্ড পরে ব্যাপারটা বুঝলাম। আমরা কোলকাতা পৌঁছে গিয়েছি। ট্রেন থেমে আছে হাওড়া স্টেশনে। সব যাত্রী নেমেও গেছে। আমরা মড়ার মতন ঘুমাচ্ছিলাম বলে কিছু টের পাই নাই। টের যে পাই নাই তার কারনও আছে। আমাদের পৌঁছানোর কথা সকাল বেলায়। আমরা যে রাত ৪টাতেই পৌঁছে যাবো, যে কথা কেমন করে বুঝবো? যাই হোক কেউ একজন প্রথমে ঘুম ভেঙ্গে ব্যাপারটা টের পেয়ে আমাদের সবাইকে ডেকে দিয়েছে। আমরা অন্ধকারের মধ্যে হাতড়ে হাতড়ে চাবি বের করে আমাদের লাগেজ যে শিকল দিয়ে বাঁধা তার তালা খুললাম। নিজের স্যান্ডেলটা খুঁজে পেতে বেশ বেগ পেতে হলো। অন্য সবাই তাদের লাগেজ গুলো অন্ধকারের মধ্যে টেনে টেনে বের করলো। এক পর্যায়ে আমরা আমাদের মালপত্র সব বের করে নেমে গেলাম ট্রেন থেকে।

প্ল্যাটফর্মের দৈর্ঘ্য মাশাল্লাহ বেশ বড়। গভীর ঘুম থেকে উঠেই কয়েক মিনিটের মধ্যেই বিশাল বিশাল লাগেজ সব হাতে নিয়ে আমরা বিশাল প্ল্যাটফর্ম পাড়ি দিতে লাগলাম। আমার ঘুম ঘুম ভাব তখনও কাটে নাই, কিন্তু কিছু করার নাই। আমি চোখ ডলতে ডলতে আবিষ্কার করলাম এটা পুরানো স্টেশন। আগেরবার আমরা দিল্লীর উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেছিলাম নতুন স্টেশন থেকে। একসময় আমরা প্ল্যাটফর্ম পাড়ি দিয়ে একটা জায়গায় আমাদের সব লাগেজ জড় করে বিশাল পাহাড় বানিয়ে রাখলাম। তার চারপাশে গোল করে ঘিরে দাঁড়ালাম। বাইরে তখনও ঘুটঘুটে অন্ধকার। আলো না ফুটলে আমরা কিছুই করতে পারবো না। অগত্যা আমাদের অপেক্ষা করতে হবে সকাল হওয়ার জন্য।

টুথব্রাশ হাতে একজন দ্বিমিকবাসী, পিছনে আমাদের লাগেজের স্তুপ
টুথব্রাশ হাতে একজন দ্বিমিকবাসী, পিছনে আমাদের লাগেজের স্তুপ

অনেককে দেখলাম টুথব্রাশ বের করে দাঁত মেজে নিচ্ছে। আমিও সবার দেখাদেখি টুথব্রাশ বের করে নিলাম। ব্যাপারটা বেশ দেখার মত। জনা ত্রিশ চল্লিশেক ছেলেমেয়ে স্টেশনের মধ্যে অত্যন্ত স্বাভাবিক ভঙ্গিতে হাঁটাহাঁটি করে দাঁত মাজছে। যদিও এই গভীর রাতে তেমন কোন লোকজন স্টেশনে ছিলো না, তারপরও কেউ কেউ যে অবাক হয় নাই সে কথা বলা যায় না। আমরা যেখানে ঘাঁটি গেড়েছিলাম তার কাছাকাছিই সারি ধরে কয়েকটা কল ছিলো। সেখানে আমরা কুলি করে হাত মুখ ধুয়ে নিলাম। দাঁতটাত মেজে আমার বেশ ফ্রেশ লাগলো। দেখলাম মায়িশা একটা দোকান থেকে সুন্দর দেখে কলা কিনে এনেছে। করার কোন কাজ না পেয়ে আমিও কলা আর পেয়ারা কিনে তাতে কামড় বসালাম। একটা বেঞ্চ পেলাম বসার জন্য। তাতে আমরা পালা করে বসতে লাগলাম।

লাগেজের স্তুপের মধ্যেই ঘুম (কৃতজ্ঞতায় মোজাম্মেল হক জাফর)
লাগেজের স্তুপের মধ্যেই ঘুম (কৃতজ্ঞতায় মোজাম্মেল হক জাফর)

সবাই ক্লান্ত। তাই গল্পগুজব তেমন জমে উঠলো না। ঘুম ঘুম চোখে কেই বা অন্যের সাথে গল্প করতে চায়। তারপরও আমাদের কথাবার্তা চলতেই লাগলো। অনেকে আবার থাকতে না পেরে লাগেজের গায়ে ঠেস দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। অনেকে মেঝেতে পোথির প্যাকেট বিছিয়ে বসে পড়লো। সৈকত আর জাফর লাগেজের মধ্যেই গুটিসুটি মেরে ঘুমিয়ে কাদা হয়ে গেলো। অবনীও সাংঘাতিক ঘুম দিয়ে দিলো। আর রুবাইদা তো সোজা হয়ে বসে ঘুমিয়ে গেলো। আমরা যারা ঘুমালাম না তারা অন্যদের ঘুমিয়ে পড়া নিয়ে হাসাহাসি করছিলাম। কে যেন টপাটপ ছবিও তুলে ফেললো এসবের।

আমাদের সময় আর কাটছিলো না। ওদিকে সূর্য ওঠার কোন নামগন্ধ নাই। সূর্য না উঠলে আমাদের হোটেল ঠিক করতে কেউ নযেতে পারবে না। কোলকাতায় যে সূর্য উঠতে দেরি হয় সেটা আমরা সেদিন হাড়েহাড়ে টের পেলাম। কি করে সময় কাটানো যায় বুঝতে পারছিলাম না। শেষমেশ ট্রেন জার্নিতে আমাদের ‘আবিষ্কৃত’ লেইম জোকসের বয়ান শুরু হলো। ভয়াবহ লেইম লেইম সব জোকস শুনে আমরা হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেলাম।

মোটামুটি সাতটার দিকে লালচে সোনালি রোদ নিয়ে সূর্য উঁকি দিলো কোলকাতার আকাশে। আমাদের লোকজন পড়িমড়ি করে ছুটলো হোটেল ঠিক করার জন্য। তার আগেই আমরা বারবার বলে দিয়েছিলাম আগের সেই প্যারাডাইস হোটেল যেন ঠিক করা না হয়। ওরা চলে গেলে আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম। খুব বেশিক্ষণ সময় লাগলো না। এক ঘণ্টার আগেই খবর চলে আসলো যে হোটেল ঠিক হয়ে গেছে। নতুন এই হোটেলের নাম ‘নিউ সিটি হোটেল’। আগের হোটেল থেকে খুব বেশি দূরে নয়। হোটেলের কার্ডের একটা ছবি মোবাইলে তুলে নিলাম। তারপর আমরা স্টেশন থেকে বের হতে শুরু করলাম আস্তে আস্তে। এর মধ্যে কোন কারণ ছাড়াই তমা ওর সব লাগেজ নিয়ে ধড়াম করে পড়ে গেলো আমাদের সবার চোখের সামনে। আমরা তাড়াতাড়ি ছুটে গিয়ে ওকে তুললাম। আল্লাহর রহমত, ও কোন রকম ব্যাথা পায় নাই। তমা নিজেও বুঝলো না ও কেন পড়ে গেলো। আসলে দীর্ঘদিন ট্যুর দিয়ে সবার হাত পাই আর মাথার নির্দেশ মতন চলতে চাইছিলো না। তার উপর প্রচন্ড খাটনি, পরিশ্রমের চোটে সবার শরীরই কমবেশি দূর্বল হয়ে পড়েছে। তাই এরকম অবস্থায় দুই একটা মানুষ পড়ে যেতে পারে- এটাই আমার কাছে স্বাভাবিক বলে মনে হলো।

স্টেশনের বাইরেই আমরা মাইক্রো টাইপের গাড়ি পেয়ে গেলাম। রাস্তাঘাট ফাঁকা, লোকজন নাই। তাই তেমন দরাদরি করা লাগলো না। ৩৫০ রুপিতেই রাজি হয়ে গেলো। আমাদের বাক্স প্যাটরা ঢুকেতে বেশ বেগ পেতে হলো। তারপর আমি, রুবাইদা, মিম, সারা, রাত্রি আর অন্তরা উঠে পড়লাম ট্যাক্সিতে। আমি বসলাম সামনের সিটে। আমাদের নিয়ে ট্যাক্সি চলতে শুরু করলো। আমরা হাওড়া ব্রিজ পার হলাম। তারপর এঁকে বেঁকে আমাদের ট্যাক্সি ছুটলো মার্কুইস স্ট্রিট পার হয়ে দিদার বক্স লেনের দিকে। দিদার বক্স লেনের ভিতর দিয়ে একটা মুসলিম ইন্সটিটিউট পার হয়ে, আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের পরে নাজ হোটেলের গা ঘেঁষে আমাদের নিউ সিটি হোটেল পাওয়া গেলো সহজেই।

হোটেলটা আগের হোটেলের চাইতে অনেকগুন ভালো। আমরা আমাদের বাক্স প্যাটরা নিয়ে ভিতরে ঢুকতে শুরু করলাম। এই হোটেলের একটা বড় সমস্যা হচ্ছে, ফ্লোরটা খুব স্টাইল করে উঁচু নিচু করা। একটু পরপর এক ধাপ নামতে হয় না হলে এক ধাপ উঠতে হয়। এই ভারি ভারি লাগেজ টেনে টেনে আমাদের জিহবা ঝুলে পড়লো। ভিতরে ঢুকার পর একটা লাউঞ্জে বসলাম আমরা। সব রুম এখনও খালি হয় নাই। তাই আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম। একে একে একজন একজন করে রুম পেয়ে পেয়ে চলে যেতে লাগলো। কিন্তু আমরা ঠাঁয় বসে রইলাম। এর মধ্যে অনেক সিড়ি পার হয়ে সুড়ংগ টাইপের জায়গায় একটা খালি রুমে আমাদের কিছুক্ষনের জন্য বসতে দিলো। আমরা সেই রুমের বাথরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে আসলাম। অনেকদিন পর বাথরুমে বদনা দেখে খুব শান্তি লাগলো। আমরা সেই রুমের বিছানায় বসতে না বসতেই আমাদের রুম রেডি হয়ে গেছে খবর আসলো।

এই হোটেলে লিফট আছে। কোলাপ্সিবল গেট দেওয়া লিফটে করে আমরা মালপত্র নিয়ে একজন একজন করে তিন তলায় উঠলাম। আমাদের রুম তখনও ঝাড়ু দেওয়া হচ্ছিলো। উঁকি মেরে দেখে নিলাম এক ঝলক। খুবই ছোট রুম। একটা ছোট ডবল বেড (এইটাকে ডবল না বলে সিঙ্গেলের চাইতে একটু বড় বলাই ভালো) আর একটা টেলিভিশনের ছোট্ট সেলফ। বিছানায় ওঠার জন্য এক চিলতে ফাঁকা জায়গা আর বাথরুমে যাওয়ার জন্য আরেক চিলতে জায়গা। ব্যাস, রুম শেষ। একটা মাত্র জানালা সেটাও করিডরে খুলে। আমরা চারজন মানুষ সব মালপত্র নিয়ে ঢুকলে জায়গা হবে কিনা সন্দেহ হচ্ছিলো। যাই হোক, আমরা সিস্টেমেটিকভাবে লাগেজ রেখে কোনমতে ব্যবস্থা করলাম। এর মধ্যে বাইরে টের পেলাম কথাবার্তা হচ্ছে। অদিতিদের রুমে পাঁচ জনের বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে, অথচ রুমটা খুবই ছোট যদিও এতে একটা ডবল বেড আর একটা সিঙ্গেল বেড আছে। ওরা অনুরোধ করছিলো কোনভাবে রুম অদলবদল করা যায় কিনা। অবনী আমাদের এসে সব খুলে বললো। আমরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও রাজি হলাম। কিন্তু  আমাদের কষ্ট হবে দেখে শেষমেশ ওরা আর রুম বদল করতে চাইলো না। আমরা কোনরকম গোসল করে খাওয়ার জন্য বের হলাম।

নিচের নাজ হোটেলে গিয়ে হাজির হলাম। খেতে চাইলাম নাশতা কিন্তু নাশ্তার সময় শেষ। বেশ বেলা হয়ে গিয়েছে। শেষমেশ বেগুন আর আলুর ঝোল তরকারি দিয়ে বিশাল বিশাল মচমচে লুচি খেয়ে নিলাম আমি আর রুবাইদা। কোন মতে খেয়েই আমার দৌড়ে রুমে চলে গেলাম। ঘুম দেওয়া খুবই জরুরি। কোন কিছু না ভেবেই আমরা চারজন লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লাম বিছানায়। এই বিছানায় দেওয়ালের জন্য পা টানটান করে শোয়া যায় না। কিন্তু আমাদের অতকিছু ভাবার সময় নাই। জোরে ফ্যান ছেড়ে লাইট নিভিয়ে দিতেই রুমের মধ্যে রাতের অন্ধকার নেমে আসলো। আমরা দিলাম ঘুম। যাকে বলে সাউন্ড স্লিপ।

আমার ঘুম ভাংলো বিকালের দিকে। ততক্ষনে মৌলি আর মজুমদার এক দফা বের হয়ে শ্রীলেদার্স থেকে বেশ কিছু জিনিস কেনাকাটা করে ফিরেছে। ওরা জানালো, জিরো নাইন ব্যাচের সবাই শ্রীলেদার্স খালি করে দিয়েছে। এখন সেখানে তেমন কিছুই নাই। আমি আর রুবাইদা রেডি হয়ে নিলাম। তারপর ওদের কাছ থেকে জেনে নিলাম যে আমরা মার্কুইস স্ট্রিট থেকে কত দূরে আছি। তারপর বের হয়ে পড়লাম দুইজনে। আমাদের এলাকাটা মুসলমান অধ্যুষিত। নাজ হোটেলের লোকজন সব মুসল্লীরা। সামনেই আছে আলিয়া বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানেও সব মাদ্রাসা ছাত্রদের মতন লোকজন দেখা যায়। দেখলে মনে হবে আমি বোধহয় ঢাকা শহরের কোন মসজিদের পাশেই আছি। আমরা হেঁটে হেঁটে রফি আহমেদ স্ট্রিটে উঠলাম। সেখান দিয়ে ট্রাম লাইন ধরে হাঁটতে হাঁটতে মার্কুইস স্ট্রিটের মোড়টা পেয়ে গেলাম। আরাফাত হোটেলের উল্টা পাশে রাস্তার ধারে একটা মোমোর দোকানে বসলাম। এখানে নাকি হালাল মোমো পাওয়া যায়। আমি আর রুবাইদা মিলে অর্ডার দিলাম মোমো। লোকটা প্রথমে আমাদের মোমো দিলো। সাথে করে সুপের বাটি। রুবাইদা জানালো এই সুপে ডুবিয়ে নাকি মোমো খেতে হয়। মোমোটা প্রচন্ড গরম ছিলো। তাই খেতে আমাদের কষ্ট হচ্ছিলো। কিন্তু সুস্বাদু যে ছিলো সে বিষয়ে কোন সন্দেহ নাই। মোমো খেতে খেতেই আমরা ভাবছিলাম আর কি কি অর্ডার দেওয়া যায়। আমি উঠে গিয়ে একটা চিকেন পপ আর একটা নুডুলস অর্ডার দিলাম। আর এদিকে গরম গরম স্যুপে ডুবিয়ে মোমো খাচ্ছিলাম।

লোকটা দুই বাটি নুডুলস রেডি করছিলো। আমরা সেটা দেখছিলাম। আমার মনে হচ্ছিলো একটা বাটি আমাদের আর আরেকটা বাটি অন্য কারও হবে বোধহয়।  কিন্তু লোকটা আমাদের ডেকে দুইটা বাটিই নিয়ে যেতে বলে। আমি বুঝলাম, সে আমাদের দুইজনের জন্য দুইটা অর্ডার নিয়ে ফেলেছে। কি আর করা, দুই বাটি নুডুলস খাওয়া শুরু করলাম আমরা। ওদিকে হটাৎ মনে পড়লো চিকেন পপের অর্ডারও তো বাকি আছে। আমি তাড়াতাড়ি দৌড়ে গেলাম সেটা ক্যান্সেল করতে। গিয়ে দেখি, এক প্লেট অলরেডি রেডি হয়ে গেছে। কি আর করা, সেই এক প্লেট নিয়েও আমরা খেতে বসলাম।

ইতোমধ্যে বিকাল শেষ হয়ে সুর্য ডুবে সন্ধ্যা শেষ হয়ে রাত নেমে এসেছে। মার্কুইস স্ট্রিটের ঝলমলে হলুদ বাতি জ্বলে উঠেছে আগের মত। ঘটাং ঘটাং শব্দ করে ট্রাম চলছে। সেই আগের দৃশ্য আমার চোখে ভেসে উঠেছে। আর এদিকে আমরা খাওয়া শেষ করতে পারছি না। অনেক কষ্ট করে যখন খাওয়া শেষ করে বিল মিটিয়ে দিয়ে আমরা উঠে পড়লাম তখন আমাদের পেট একদম টায়টায় ভর্তি। আমরা হাঁটতে শুরু করলাম নিউ মার্কেটের দিকে।

মার্কুইস স্ট্রিট, প্যারাডাইস হোটেল, শ্যামলী কাউন্টার, দাওয়াত হোটেল, রাঁধুনী হোটেল, শ্রীলেদার্স, মোর সুপার শপ পার হয়ে লিন্ডসে স্ট্রিটে উঠে দেখা পেলাম নিউ মার্কেটের। লিন্ডসে স্ট্রিটে আমরা একটা বড় মেগা শপ টাইপের দোকান পেয়ে তাতে ঢুকে গেলাম। দুনিয়ার জিনিসপাতি, কিন্তু কোনটাই পছন্দ হয় না। আমরা অনেক্ষণ ধরে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে সব দেখলাম। কিন্তু কিছুই কেনার মত পছন্দ হচ্ছিলো না। তারপর নেমে আসলাম রাস্তায় নিউমার্কেটে সামনে সারি ধরে রাস্তা দখল করে হকাররা বসে আছে। এই রাস্তা দিয়ে কোন গাড়ি চলে না। পুরোটাই হকারদের দখলে। কি নাই সেখানে? প্লাস্টিকের বোতল থেকে শুরু করে বড় ব্যাগ, চাবির রিং, জামা, জুতা, জুয়েলারি সবই আছে। আমরা ঘুরে ঘুরে কেনাকাটা করছিলাম।

নিউ মার্কেট বিশাল এলাকা। আমরা অলিতে গলিতে হাঁটাহাটি করলাম। সর্বনিম্ন ৫০ রুপিতে টপস বিক্রি হচ্ছে দেখতে পেলাম। তবে বেশিক্ষণ ঘোরাঘুরি হলো না। দোকানপাট বন্ধ হতে শুরু করলো। আমরাও যে রাস্তায় এসেছিলাম সেই রাস্তা দিয়ে ফেরত যেতে শুরু করলাম। আমাদের হোটেলে যাওয়ার জন্য আর কোন যানবাহন নাই। হয় পায়ে হেঁটে, অথবা টানা রিকশায়। টানা রিকশা ব্যাপারটা কেন যেন আমার পছন্দ না। আমরা দুইজনে হাঁটতে লাগলাম মার্কুইস স্ট্রিট ধরে। হাঁটতে হাঁটতে একসময় চলে আসলাম দিদার বক্স লেনে।

আমাদের হোটেলে ঢুকে দেখলাম এখনও সিদ্ধান্ত ফাইনাল হয় নাই যে আমরা কবে দেশে ফিরবো। দু দিনও হতে পারে আবার চার দিনও হতে পারে। আমরা মিম আর অন্তরার সাথে বৈঠক দিলাম। ঠিক হলো আগামীকাল যাবো গড়িয়াহাট আর কলেজ স্ট্রিট আর তার পরের দিন চেষ্টা করবো শান্তি নিকেতন যেতে। তারপর যদি আরও থাকা হয় তাহলে দেখা যাবে!

 

 

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *