আমার ঘুম ভাঙল ঘাড় ব্যাথায়। বাসের সিটে হেলান দিয়ে থাকায় প্রচন্ড ঘাড় ব্যাথা হতে লাগলো। চোখ মেলে দেখলাম আমরা পাঞ্জাব পৌঁছে গেছি। তখন মাত্র সকাল হয়েছে। কুয়াশা কেটে চকচকে সূর্যের আলো ফালি ফালি করে বের হচ্ছে। রাস্তাঘাটে মানুষজন নাই। চারপাশে ঝকঝকে রাস্তাঘাট, একটু পর পর পার্ক, সবুজ গাছপালা- সব মিলিয়ে অত্যন্ত রিফ্রেশিং পরিবেশ। আমার ইচ্ছা হলো বাইরে গিয়ে বুক ভরে শ্বাস নেই। কিন্তু জমানো ঠান্ডার ভয়ে জানালাটাও খুলতে পারলাম না। আমাদের বাস এসে থামলো পাঞ্জাব আর হরিয়ানার বর্ডারের কাছাকাছি জায়গায়। আমাদের ছেলেপেলে হোটেল মিডটাউন নামের এক হোটেলে কথা বার্তা বলে সব ঠিক করলো। আমরা নেমে পড়লাম।
এবার আমরা চারজন একসাথে। বাস থেকে নেমেই মজুমদার ছুটলো রুম দখল করতে আর আমরা দাঁড়িয়ে রইলাম লাগেজের অপেক্ষায়। সবার আগে আমার লাগেজ নামিয়ে দিলো বাসের পিছন থেকে। আমি ওদের রেখে লাগেজ নিয়ে রওয়ানা দিলাম। মজুমদার বললো ও তিন তলায় রুম ঠিক করেছে। অনেকেই রুম পায় নাই। ১০টা বাজলেই কয়েকটা রুম খালি হবে তখন সবাইকে রুম দেওয়া হবে। আপাতত মেয়েদের জন্য তিনটা রুম দেওয়া হয়েছে। তারই একটা রুম আমাদের। আমি আমার সুটকেস অমানুষিক কষ্ট করে সিড়ি দিয়ে টেনে টেনে তিনতলায় তুললাম। ততক্ষনে রুবাইদা আর মৌলি মজুমদারের লাগেজ টেনে টেনে নিয়ে আসলো। সবাই মিলে একে অন্যকে সাহায্য করে মাল পত্র সিড়ি দিয়ে তুলতে লাগলাম।
রুম দেখে আমাদের খুব পছন্দ হলো। অনেক বড় রুম, বিশাল খাট, এটাচড বারান্দা তবে এটা পাশের আরও দুইটা রুমের সাথে কানেক্টেড। বারান্দায় দাঁড়ালে নিচে সবুজ জমি দেখা যায় সেখানে একটা গরু নিবিষ্ট মনে ঘাস চিবাচ্ছে। আমি কিছুক্ষনের জন্য বারান্দায় কড়া রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে রইলাম। বেশ আরাম লাগলো। সবচেয়ে অদ্ভূত হল বাথরুমটা। এত বড় বাথরুম আমি আর কোনও হোটেলে দেখি নাই। মনে হলো যেন ওখানে খাট পেতে ঘুমানো যাবে। যথারীতি বদনা নাই। তবে রুবাইদা এবার ওর সাদা বদনাটা বের করে দিলো। গরম পানির ব্যবস্থা পেয়ে আমরা লাইন ধরে গোসলে ঢুকলাম। গোসল করতে গিয়ে টের পেলাম বালতি আছে কিন্তু কোন মগ নাই। রুম সার্ভিস তখন খুবই ব্যাস্ত আমাদের সবাইকে রুমের ব্যবস্থা করে দিতে, ওখানে জানালে মগ পেতে বেশ দেরি হবে। চট করে আমরা আমাদের রুমের পানির জগটাকেই মগ বানিয়ে গোসল করা শুরু করে দিলাম।
যারা রুম পায় নাই তারা আমাদের রুমে মালপত্র নিয়ে বসে থাকলো। তারপর এক জন একজন করে ওরা রুম পেয়ে পেয়ে বের হয়ে গেলো। আমি দেখতে পেলাম আমাদের বারান্দার সাথে এটাচড রুম দুটা আমাদের মেয়েরাই পেয়েছে। সেই রুমগুলাও খুবই সুন্দর। বারান্দার রোদে ভেজা গামছা মেলে দিয়ে আমি ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলাম। ভেজা চুল শুকানোর জন্য মৌলির হেয়ার ড্রায়ার নিয়ে আয়নার সামনে দাঁড়ালাম। হঠাৎ আবিষ্কার করলাম আমাকে বেশ সুন্দর আর লম্বা লাগছে। মন ভালো হয়ে গেলো। একটু পরেই টের পেলাম আয়নাটাতে সবাইকেই চিকন আর লম্বা লাগে। সবাই খুশি খুশি মনে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে নানাভাবে দেখতে লাগলো।
রুমের সামনে রিজভীর সাথে দেখা। ওকে ধন্যবাদ দিলাম এত সুন্দর একটা হোটেল ঠিক করে দেওয়ার জন্য। ও বললো বাইরে থেকে এখানকার বিল্ডিংগুলো দেখে আহামরি কিছু মনে হয় না। কিন্তু ভিতরে ভিতরে হোটেলগুলো অনেক সুন্দর। রুমের বাইরে অনেক খোলামেলা স্পেস, লাইট ওয়েল দিয়ে সরাসরি রোদ এসে পড়ে – এসব দেখলেই মন ভালো হয়ে যায়।
সবার গোসল শেষে আমরা যখন নাস্তা করতে বাইরে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি তখন প্রথম জানলাম খবরটা- আমাদের এখনই এই হোটেল ছেড়ে দিতে হবে। সবার মধ্যে চাপা উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়লো। ব্যাপার কি? কেন ছেড়ে দিতে হবে এই হোটেল? আসল ঘটনা জানা গেল ইশতিয়াকের কাছে। আমাদের কমিটিকে দামদর সব ঠিকঠাক করার করার পর হোটেল কর্তৃপক্ষ আইডি কার্ড জমা দিতে বলে। ওরা আমাদের পাসপোর্ট জমা দিলে লোকজন অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে ‘আপ্লোগ ইন্ডিয়ান নেহি হো? আমরা বাংলাদেশি জানার পর তারা খুব লজ্জিত হয়ে জানায় সরকারি নিয়ম অনুযায়ী এই হোটেলের বিদেশি অতিথি রাখার অনুমতি নাই। ওরাই আমাদের আরেকটা হোটেল ঠিক করে দিবে কিন্তু আমরা এই হোটেলে থাকতে পারবো না। ওদের আর কি দোষ, কমিটির কমিউনিকেশন মেম্বাররা এত ভালো হিন্দিতে কথা বলেছিলো যে ওরা ধরতেই পারে নাই যে আমরা বিদেশি। ওরা নিজেদের ভুল স্বীকার করে খুব অনুরোধ করে আমাদের চলে যাওয়ার জন্য।
কি আর করা- আমরা যা যা মালপত্র বের করেছিলাম সব আবার ঢুকিয়ে ব্যাগ গুছিয়ে সেই তিনতলার সিড়ি দিয়ে আবার টেনে টেনে ব্যাগ নামাতে লাগলাম। তারপর আবার সেই ব্যাগ বাসে তুলে আমরা বের হয়ে পড়লাম। সেটাই ছিলো ইন্ডিয়া ট্যুরে আমাদের সবচেয়ে ছোট্ট হোটেল স্টেয়িং।
আগের দিন রাতেও ডিনার বলতে যা বলা হয় সেইটা ঠিকমত হয় নাই। সকালেও কোন খাওয়া হল না। সেই অবস্থাতেই বাসে করে আমরা চন্ডীগড় ঢুকে গেলাম। চন্ডীগড় লে কর্বুসিয়েরের ডিজাইন করা অত্যন্ত বড়লোকদের শহর। রাস্তা গুলো চওড়া, চকচকে পরিষ্কার আর একদম সোজা ছক মেনে চলে। একটু পর পর একই রকম চৌ রাস্তার মোড় বা ওদের ভাষায় মার্গ এসে পড়ে যেগুলোতে সবুজ সাইনেজের মাধ্যমে ডিরেকশন দেখানো আছে। এখন বেলা হয়ে যাওয়ায় রাস্তাঘাটে মানুষজন দেখা যাচ্ছে। দাড়িওয়ালা, পাগড়ি পরা শিখদের দেখতে খুব ভালো লাগছিলো। আর মহিলাগুলো সব সালোয়ার কামিজ পরে, বড় বড় বেনি করে এক কালারের সোয়েটার পরে হেঁটে বেড়াচ্ছে- ঠিক যেমনটা সিনেমায় দেখে থাকি। চন্ডীগড়ের আরেকটা লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে বাইক, মোটরসাইকেল আর সাইকেল। কি ছেলেরা, কি মেয়েরা- সবার কাছেই যেন দুইচাকার বাহনগুলো জনপ্রিয়। বাইক আর মোটরসাইকেলের পাশাপাশি রাস্তাঘাটে প্রচুর মানুষ সাইকেল চালাচ্ছে। এদের মধ্যে হাফ প্যান্ট পরা মোটা স্কুল ইউনিফর্ম পরা বাচ্চা ছেলেটা যেমন আছে তেমনি সাদা চুলগুলো বেনিতে গুঁজে সালোয়ার কামিজ আর কেডস পরা দাদীমাও আছেন। আমি হাঁ করে সব দেখতে লাগলাম। আরেকটা জিনিস লক্ষ করলাম এখানকার গাড়ির নম্বর প্লেট শুরু হয় –CHO দিয়ে।
আমরা সেক্টর ৪৫ এ এসে থামলাম। এখানেই ঠিক করে দেওয়া হয়েছে আমাদের হোটেল যার নাম গোল্ডেন প্যারাডাইস। হোটেলটা বাইরে থেকে দেখে আমরা দমে গেলাম। রাস্তা থেকেই দেখা যায়, টানা বারান্দা দিয়ে এক সারি রুম। আমাদের দেশে অনেকটা কমলাপুর রেলস্টেশনের আশেপাশে যেরকম হোটেল দেখা যায় সেরকম আর কি। ঢুকতে হয় একটা চিপা গেট দিয়ে। তারপর আড়াই থেকে তিনফুট চওড়া একটা চিপা খাড়া খাড়া স্টেপ ওয়ালা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠতে হয়। এবারও আমি আর মজুমদার দৌড়ঝাপ করে সেই তিন তলাতেই রুম ঠিক করলাম। আমাদের রুমটা একেবারে রাস্তার পাশে, বারান্দার শেষ প্রান্তে। ছোট্ট রুমে একটা খাট, দুইটা গদিওয়ালা চেয়ার আর একটা ছোট্ট টেবিল আছে। দেওয়ালে টিভি ঝুলানো, তার সাথে আবার দুইটা রিমোট। বাথরুমটা গিয়ে দেখলাম, অবস্থা মোটামুটি। বালতি, মগ সবই আছে, সাথে আবার ছোট্ট একটা মোড়া। ফ্লোরে সাদা কালো হিজিবিজি প্যাটার্নের পাথর। এতে একটা সুবিধা আছে ফ্লোর ময়লা হলেও টের পাওয়া যাবে না। আমরা আগের হোটেলে গোসল করে আসার কারনে বেশ খুশি ছিলাম। এখন এই বাথরুমে গোসল করতে হবে না ভেবেই আমরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে লাগলাম।
রুমে সেট হয়েই আমরা খেতে বের হলাম। হোটেলের নিচের রাস্তাটা কেমন জানি মরা মরা। নেটে সার্চ দিয়ে কাছেই ‘খুশি ধাবা’ নামের এক খাওয়ার দোকানে গেলাম। ছোট দোকানটাতে তেমন কিছুই খাওয়ার নাই। অনেক কষ্টে একটা থালি নিলাম ২৫ রুপি দিয়ে। এতে আছে ৬টা পোড়া রুটি, সয়া মাংসের ঝোল আর ডাল। সালাদ হিসেবে আছে মুলা কুচি। খাবারের কোন টেস্ট নাই। অনেক ঘন্টা কিছুই খাওয়া হয় নাই দেখে জোর করেই সবগুলা পোড়া রুটি খেয়ে ফেললাম। খাওয়া শেষে আবার হোটেলে ফেরত আসলাম। আশেপাশের রুমে খোঁজ খবর নিয়ে দেখলাম সবাই শপিং করার জায়গায় যেতে চায়- সেক্টর ২২ আর সেক্টর ১৭। আমি আর রুবাইদাও চিন্তা ভাবনা করে বের হয়ে পড়লাম।
হোটেলের সামনের রাস্তাতেই অটো পার্ক করে বসে ছিলো। আমি রুবাইদা আরও কয়েক জনের সাথে অটো ভাড়া করে উঠে পড়লাম। সেক্টর ২২ যেতে পার হেড খরচ পড়লো ২০ রুপি। একই রকম সোজা রাস্তা আর সবুজ চৌরাস্তা পার হয়ে হয়ে আমরা যখন সেক্টর ২২ পৌঁছালাম ততক্ষনে আমার মনে হলো আমরা যে জায়গাটাতে থাকি সেটা বোধহয় তুলনামূলক লো ক্লাস এরিয়া। যাই হোক অটো থেকে নেমে আমরা যে জায়গাটায় আসলাম সেটাকে অনেকটা ঢাকা নিউমার্কেটের মতই মনে হলো। তবে আমাদের নিউ মার্কেট বাউন্ডারির ভেতর আর এটাতে ঠিক বাউন্ডারি নাই। কেমন যেন লম্বাটে টাইপ অনেক বড় জায়গা জুড়ে আলাদা আলাদা মার্কেট।
সামনেই হোটেল-রেস্টুরেন্ট। তারপর শুকনা খাবার যেমন বাদাম, খেজুর, বিস্কুট, চানাচুর, চিপস এইসবের দোকান। পাশাপাশি জামাকাপড়, ব্যাগ, জুতা সব কিছুরই দোকান ছিলো। একটু পর একটা চত্তর। সেখানে হকাররা অনেক টুকিটাকি জিনিস নিয়ে বসে আছে। তারপর শুরু হয় শীতের কাপড়ের দোকান। শীতকালে পাঞ্জাবী ছেলেরা কি মেয়েরা, সবাই এক ধরনের চকচকে পলিথিন পলিথিন টাইপের উজ্জ্বল রঙয়ের জ্যাকেট পরে। প্রায় সব দোকানেই দেখলাম ভেতরে বাইরে সবখানেই সারি সারি লাল, নীল, সবুজ, হলুদ, বেগুনী সব রঙের হাতা ওয়ালা বা হাতা ছাড়া জ্যাকেট ঝুলিয়ে রেখেছে। দাম যাচাই করে বুঝলাম ২০০ রুপিতে এগুলো কিনতে পাওয়া যাবে। ভেতরের দিকের দোকানে শীতের কাপড়, ঝকমকে জামাকাপড়, জুয়েলারি সবই আছে। দাম মোটামুটি কম। রুবাইদা সুন্দর হাতের কাজ করা ফুলখাড়ি ওড়না কিনলো ৭০০ রুপি দিয়ে।
আমাদের ঘুরতে ঘুরতে সন্ধ্যা হয়ে গেল। আমি ১১০ রুপি দিয়ে চানাচুরের প্যাকেট কিনলাম আর রুবাইদা খেজুরের প্যাকেট কিনলো। তারপর রাস্তা পার হয়ে একটু দামী দোকানপাটওয়ালা জায়গায় যাই। আমরা মনের সুখে চওড়া ফুটপাথ দিয়ে ঘুরতে থাকি আর দুনিয়ার গল্প করতে থাকি। এর মধ্যে দেখলাম এক জুয়েলারির দোকান থেকে মৌলি সস্তায় আনেকগুলো কাজল কিনে ব্যাগ ফ্রি পেল। দেখতে দেখতে সেই জুয়েলারির দোকানে ঠাসাঠাসি ভিড় হয়ে গেল। আমরা হাঁটতে হাঁটতে দেখতে লাগলাম, পাঞ্জাবের পাঞ্জাবী, শেরওয়ানী, কনের পোশাক, পাগড়ি, কোটি, সিল্কের লুঙ্গি, স্টেশনারি দোকানসহ আরও অনেককিছু। রাস্তার পাশেই ঠেলাগাড়িতে করে কমলার জুস বিক্রি হচ্ছে। ইয়া বড় বড় কমলা, ব্লেন্ডারে করে জুস বানিয়ে দিচ্ছে। মায়িশা খেয়ে খুবই প্রশংসা করলো। ওদের সাথে দেখা হওয়ার পর জানলাম ওরা সেক্টর ১৭ যাবে। আমরা দুইজন মনে করেছিলাম এটাই সেক্টর ১৭। কিন্তু বুঝলাম এটা সেক্টর ২২ এর মধ্যেই।
তারপর আমরা ঐশি, নোভা, বাঁধনদের সাথে সাথে অটো ভাড়া করে সেক্টর ১৭তে যাই। পার হেড ভাড়া পরে ১৫ রুপি। সেক্টর ১৭ অনেক পশ। দামি দামি জিনিসের দোকানপাট সব, আবার সেগুলোতে সেল চলছে। আলাদা আলাদা অটোতে আসায় আমি আর রুবাইদা আলাদা হয়ে যাই। তারপর ব্র্যান্ডের দোকান ঘুরতে ঘুরতে আবার একত্র হই। আমাদের ঘুরতে খুবই ভালো লাগে। ঝলমলে সব দোকানপাট, সামনে অনেক চওড়া ফুটপাথ, তারপর এক লেন স্ট্রিট লাইটিং আর সিটিংয়ের জন্য, তারপরে রাস্তা। সবখানে ফর্সা ফর্সা মানুষজন, গল্প করছে, আড্ডা দিচ্ছে। ওদের ভাষাটা কেমন যেন আন্তরিক।
আস্তে আস্তে দোকান পাট বন্ধ হতে থাকে। মানুষজন কমতে থাকে রাস্তা থেকে। আমরা একটা ঝলমলে খাবার দোকানের সামনে দাঁড়াই। আমি আর রুবাইদা একটা ভেজ চাওমিন অর্ডার দেই ১০০ রুপি দিয়ে। খাবারের টেবিলগুলো দোকানের বাইরে, খোলা আকাশের নিচে। অনেক ভিড় থাকায় আমরা ঠিকমত দাড়াতে পারছিলাম না। আমাদেরকে পাশেই একটা সিনেমা হলের ফুড কোর্টে বসতে বলে। আমরা সেখানে গিয়ে দেখি আর কেউ নাই। শুধু আমরা আমরাই। আমরা হৈচৈ করে খেতে থাকি। ঐশির মোবাইলে সেলফিও তোলা হয়। খাবার বেশ মজা ছিলো আর পরিমানে এত বেশি ছিলো যে আমাকে আর রুবাইদাকে পুরোটা শেষ করতে অনেক কষ্ট করতে হয়।
খেয়েদেয়ে আমরা আবার বের হয়ে অটো ঠিক করতে থাকি। রাস্তাঘাট বেশ ফাঁকা ফাঁকা, কিন্তু ভয় লাগে না। শহরটাকে কেন যেন নিরাপদ মনে হয়। এইবার অটো ভাড়া পরে পার হেড ২০ রুপি করে। আমরা একই রকম রাস্তা দিয়ে ছুটতে থাকি। হঠাৎ একটা সার্কাসের প্যান্ডেল চোখে পড়ে। অনেক বড় সার্কাস। আমি ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে থাকি।
হোটেলে ফিরে শুনি অনেকেই হোটেলের পাশে একটা বিয়ের অনুষ্ঠান দেখতে গেছে। আমার আর বের হওয়ার ইচ্ছা হলো না। কে জানি এসে খবর দিলো রাত ১২টার সময় শান্তর বার্থ ডে কেক কাটা হবে। আমরা সবাই গেলাম। ছোট্ট রুমের মধ্যে গাদাগাদি করে শান্তকে উইশ করা হলো। তারপর লিয়ার আনা কেকটাকে কেটে খাওয়া হলো। এর মধ্যে জাফর কেকের টুকরা জুবায়েরের গায়ে ফেলে দিলো। যাই হোক সবাই শেষমেষ রুমে ফিরে যাই।
কমিটির লোকজন রুমে এসে খবর দিয়ে যায় যে আগামী কাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত সবগুলো রুম ঠিক করা আছে। ১২টার পর ছেলেদের জন্য একটা আর মেয়েদের জন্য একটা রুম থাকবে। তাই মালপত্র সব গুছিয়ে ১২টার আগেই ঐ রুম দুইটায় রেখে তালা মেরে দিতে হবে। আবার আমরা আমাদের সব মালপত্র গুছিয়ে নিলাম যাতে সকালে সমস্যা না হয়। ঘুমানোর জন্য কম্বলের নিচে ঢোকার সময় মনে হলো আমার পা দুইটা বেশ ফুলে গেছে। কি আর করা, ফোলা পা নিয়েই সেকেন্ডের মধ্যে ঘুমিয়ে পড়লাম।