হরেকরকম পরিকল্পনা করে, বারবার আঙ্গুলের কড়ায় বাজেট কষতে কষতে, অন্তর্জালের দুনিয়া থেকে যাবতীয় জ্ঞান অর্জন করে যখন সম্ভাব্য গন্তব্য ঠিক করা হলো মেক্সিকোর ক্যানকুন আর তুলুম শহর- তখন একশো একটা অজানা চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খেতে লাগলো। সারাক্ষণ খালি চিন্তা করতেই লাগলাম যে অ্যামেরিকা ছেড়ে বের হবার সিদ্ধান্তটা ঠিক হচ্ছে কিনা। কাগজ কলমে বারবার হিসাব করতে লাগলাম যে কোন খরচ বাদ পড়ছে কিনা। মনে হাজারটা অনিশ্চয়তা নিয়ে রাতে ঘুমাতে যেতাম। তবে সকল অনিশ্চয়তার অবসান ঘটলো যখন রাতুলের প্রফেসর খুব স্বাভাবিকভাবে বললো যে তিনি আমাদের ক্যানকুনে হোটেল ঠিক করে দিতে পারবেন। আমাদের হোটেল খরচ বেঁচে যাবে এই খুশিতে আমরা তুলুম শহর ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা বাদ দিয়ে দিলাম। বিন্দুমাত্র কালক্ষেপণ না করে আমি সস্তায় ঠিক করে রাখা প্লেনের টিকেট আর গাড়ি বুক দিয়ে ফেললাম। আর নানান রকম জল্পনা কল্পনা করতে করতে রাতে ঘুমাতে গেলাম ফুরফুরা মন নিয়ে।
অ্যামেরিকা ছেড়ে বাইরে যাবো বলে আমাদের অনেক প্রস্তুতি নিতে হলো। আমরা মহা উৎসাহের সাথে ডলার ভাঙ্গিয়ে পেসো করলাম, আই টোয়েন্টি সাইন করালাম, স্প্যানিশ ভাষা অল্পবিস্তর দেখে নিলাম, মেক্সিকোর সাইনেজ মুখস্ত করলাম। কিন্তু আমাদের উৎসাহে পানি ঢেলে দিলো ওয়েদার ফোরকাস্ট। গুগলের ভবিষ্যতবানী অনুযায়ী আমরা যে কয়দিন ক্যানকুনে থাকবো সে কয়দিন বজ্রসহ ভারি বৃষ্টিপাত থাকবে। আমাদের উৎসাহ ফাটা বেলুনের মতন চুপসে গেলো। মুহূর্তের মধ্যেই আমরা সিদ্ধান্ত বদলিয়ে প্লেনের টিকেট বাতিল করার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু বিধিবাম, আমাদের টিকেট এতই সস্তা ছিলো যে এর ক্যানসেলেশন ফি টিকেটের দামের চেয়ে বেশি। অর্থাৎ টিকেট বাতিল করলে কোন টাকা ফেরত পাবো না। যা আছে কপালে বলে আমরা মুখ গোমড়া করে রেইনকোট, ছাতা আর ওয়াটার শুর ব্যাবস্থা করলাম।
পঁচিশ তারিখ আমরা রওয়ানা দিলাম গভীর রাতে। আমাদের লেওভার অরল্যান্ডোতে। গরীবের প্লেন ফ্রন্টিয়ারে চেপে আমরা অরল্যান্ডো পৌঁছে গেলাম সময়মতন। তবে আমাদের এমন কান ব্যাথা শুরু হলো যে বলার মতন না। দাঁতে দাঁত চেপে কান ব্যাথা সহ্য করতে করতে গলা পর্যন্ত ব্যাথা হয়ে গেলো। তবদা লাগা কান আর গলা নিয়ে আমরা অরল্যান্ডোর এমসিও এয়ারপোর্টে গেট খুঁজতে লাগলাম। পরের ফ্লাইটের গেট ডোমেস্টিক টার্মিনালেই। কোন ইমিগ্রেশনের বালাই নাই। মনে হলো যেন বিদেশে যাচ্ছি না, পাশের শহরে যাচ্ছি। ফ্লাইট অন টাইম ছিলো। ল্যান্ডিংয়ের আগে আবার তীব্র কান ব্যাথার চোটে চোখে মুখে অন্ধকার দেখলাম। এরকম ভয়াবহ কান ব্যাথা আগে কোন প্লেন জার্নিতে হয় নাই। তবে জানালা দিয়ে চোখ জুড়ানো নীল রঙ্গের পানি আর সাদা রঙয়ের বালি দেখে চোখের শান্তি হচ্ছিলো। আল্লাহর এমন সুন্দর রঙের ক্যানভাসের দিকে কান ব্যাথা উপেক্ষা করে অপলক তাকিয়ে ছিলাম।
প্লেন থেকে নেমে ঝাঁঝাঁ করতে থাকা কান নিয়ে হাঁটতে থাকলাম। রাতুল বলে ফেললো,”ক্যানকুনে এসে তো কানকুন ব্যাথা হয়ে গেলো!”। কোন রকম ঝামেলা ছাড়াই ইমিগ্রেশন পার হয়ে কয়েকজন ইউনিফর্ম পরা দালালকে টপকে আমাদের রেন্ট এ কারের শাটল সার্ভিসের জন্য দাঁড়িয়ে রইলাম। প্রায় আধা ঘন্টা পর শাটলে চেপে রেন্টে কারের অফিসে পৌঁছাই। অ্যামেরিকার যেকোন অফিসে কর্মীর সংখ্যা কম থাকে। সাধারনত রেন্ট এ কারের অফিসগুলোতে দুই তিনটা কাউন্টারে লোক থাকে। সবাই মেশিনের মতন কাজ করে। দশ পনের মিনিটের মধ্যেই সব কাগজপত্র তৈরি হয়ে যায়। তারপর নিজে নিজে গাড়ি খুঁজে পেতে আরও দশ পনের মিনিট লাগে। সবমিলিয়ে আধা ঘন্টার মধ্যেই গাড়ি নিয়ে বের হয়ে যাওয়া যায়। তবে মেক্স রেন্ট এ কারের অফিসে ঢুকে একটা বাংলাদেশ বাংলাদেশ ভাব পাই। বেশ কয়েকটা কাউন্টার। সবগুলো কাউন্টারেই কর্মী আছে। সবাই অনেক গল্প করছে। কিছু কর্মী এমনিতেই ঘোরাঘুরি করছে আর নিজেরা নিজেরা গল্প করছে, মাঝে মাঝে হাসাহাসি করছে। অসম্ভব ধীর গতিতে লাইন আগাচ্ছে। কাউন্টারের লোকজন কাস্টোমারের সাথে এত কথা বলছে যে রাতুল অসহ্য হয়ে বলেই ফেললো, “ব্যাটারা বিয়ের ঘটকালি করছে নাকি? এত কি কথা বলে?”। শেষমেষ আমাদের সিরিয়াল আসলে আমরা এক কাউন্টারে দাঁড়িয়ে থাকা এক মহিলার কাছে গেলাম। মহিলা ইংরেজি বোঝে না। ওনার সাথে ভাংগা ভাংগা ইংরেজিতে কথা বলে দীর্ঘসময় পর কাগজপত্র হাতে পাই। তারপর বাইরে এসে বসে থাকি আরও দীর্ঘসময়। এখানে নিজে নিজে গাড়ি নেওয়ার ব্যাপার নাই। বসে থাকতে হবে, আরেকজন লোক এসে গাড়ি দিয়ে যাবে। যখন আমরা কালো শেভ্রলে সেডানটা নিয়ে বের হলাম, ততক্ষণে সব মিলিয়ে দেড় ঘন্টার বেশি পার হয়ে গেছে। একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে যখন আমরা হোটেলের উদ্দেশ্যে রওয়ানা দিচ্ছি, তখন দুপুর পার হয়ে বিকাল হয়ে গেছে।
নীল সাদা মেঘের আকাশ আর ঝকঝকে রোদের মধ্যে আমাদের গাড়ি শাঁ শাঁ করে ছুটতে লাগলো। রাস্তার দুই ধারে বন জংগল, দোকানপাট আর বাসা বাড়ি। কেমন যেন বাংলাদেশের কথা মনে পড়ে যাচ্ছিলো। প্রায় ঘন্টা খানেকের মধ্যে আমরা হোটেলে পৌঁছাই। হোটেল ভিলা ডেল ক্যানকুনে পৌঁছে আমাদের চোয়াল ঝুলে পড়ে। দালানটার চেহারা কদাকার হলেও এটা অত্যন্ত ফিটফাট বড়লোকি হোটেল। ড্রপ অফে গাড়ি রাখতেই একজন ভ্যালে এগিয়ে আসলো। আমাদের লাগেজের সংখ্যা জানতে চাইলো কারণ ওরা লাগেজ রুমে পৌঁছে দিবে। আমাদের তো কোন লাগেজ নাই,আমরা কোনরকম আমাদের দুইটা ব্যাকপ্যাক নিয়ে নেমে পড়ি। ভ্যালে আমাদের হাতে ঠান্ডা পানির বোতল ধরিয়ে দিয়ে লবিতে এক মহিলার কাছে নিয়ে যায়।
খানদানি লবি। বিশাল ঝাড়বাতি। রংবেরঙের সোফায় বড়লোকি ভাব স্পষ্ট। তবে ইন্টেরিয়র স্টাইলটা একটু পুরানো। হাইফাই লবিতে হাসিখুশি মহিলাকে আমরা প্রথমেই ক্যানকুনের আবহাওয়া সম্পর্কে জিজ্ঞেস করি। ঊনি আমাদের আশ্বস্ত করেন যে আবহাওয়া এখন ভালো আর গুগলের ভবিষ্যত বাণী এখানে খুব একটা খাটে না। শুনে আমরা বেশ খুশি হয়ে যাই। মহিলা আমাদের নামধাম নিয়ে কাউন্টারে নিয়ে যায়। খুব অল্প সময়ের মধ্যে আমাদের কাজ শেষ হয়ে যায়। তারপর আমাদের একজন কনশিয়ার্জ সোফাতে বসিয়ে হোটেলের ম্যাপ বুঝিয়ে বলে। আরেকটা অফার দেয় যে ওদের পাশে গার্জা ব্লাঙ্কা নামের একটা ফাইভস্টার হোটেল নতুন খুলেছে । ওটার প্রচারের জন্য একটা প্রোগ্রাম চলছে। যদি আমরা প্রোগ্রামটায় জয়েন করি তাহলে আমাদের একদিন ফ্রি ব্রেকফাস্টের সাথে পাশের হোটেলটা ঘুরিয়ে দেখাবে। আর আরও কিছু অফার থাকবে। সব কিছু দেখে আমরা প্রোগ্রামটায় নাম লিখাই আর চিচেন ইৎজার ট্যুরের বুকিং দেওয়ার অফার পাই অনেক কম দামে।
তারপর রুমে গিয়ে আমাদের আক্কেল গুড়ুম হয়ে যায়। বারোশো স্কয়ার ফিটের ওয়ান বেডরুম সুইট! কি নাই এখানে? ডাইনিং রুম লিভিং রুম, কিচেন, লন্ড্রি রুম, বেডরুম, দুইটা বাথরুম, জাকুজি আর বিশাল বারান্দা। বারান্দা দিয়ে হোটেলের বিশাল পুল এরিয়া আর সমুদ্রের ঝকঝকে নীল পানি আর ধবধবে সাদা বালি দেখা যাচ্ছে। আমরা কোনরকম হাতমুখ ধুয়ে বের হয়ে পড়লাম। হোটেলের বিশাল পুল এলাকা পার হয়ে আমরা বিচে চলে যাই। শেষ বিকালের আলোতে ঝলমল করছিলো ক্যারিবিয়ান সাগর। কত রকমের যে নীল রঙ, দূরে গাঢ় নীল, তারপর আরেকটু হালকা, তারপর আরেকটু হালকা হয়ে একেবারে বালির কাছে সাদাটে পানি। বালিগুলোও একদম সাদা। বড় বড় দানা। তবে তেমন কোন ঢেউ নাই। ছোট্ট চিকন চিকন ঢেউ সাদা ফেনা নিয়ে আছড়ে পড়ছে বালিতে। শরীর চাংগা করা বাতাস। আমাদের সারাদিনের ক্লান্তি নিমেষেই দূর হয়ে গেলো। পানিতে হাত পা ভিজিয়ে, বালি মাখামখি হয়ে আমরা বিচের পাশেই চেয়ার আর খাটে আধশোয়া হয়ে বসে রইলাম সূর্যাস্ত পর্যন্ত। কি যে শান্তি লাগছিলো আর বলার মতন না। মনে হচ্ছিলো, ইশ- মাত্র দুইদিনের জন্য কেন আসলাম, আরও কয়েকদিন থাকা উচিৎ ছিলো।
রাতে শহর ঘুরতে বের হলাম। একটা জমজমাট পার্কে গেলাম। নাম পার্ক ডে লাস পালাপাস। বিশাল পার্ক। সারি সারি দোকানপাট, ওপেন এয়ার স্টেজ, বাচ্চাদের বিভিন্ন রাইড আর খেলার জায়গা, অজস্র স্ট্রিট ফুডের দোকান, সারি সারি খাবারের দোকান, ছাতাসহ বসার জায়গা, লাইভ গানবাজনা -সব মিলিয়ে রাতের বেলাতেও ঝলমল করছে সবকিছু! প্রচুর মানুষ বাচ্চাদের নিয়ে এসেছে , ইচ্ছামতন খাওয়াদাওয়া করছে, আড্ডা দিচ্ছে, উচ্চ স্বরে হাসছে- অসম্ভব প্রাণবন্ত একটা জায়গা। আমার দেখে খুব শান্তি লাগলো। আমরা ঘুরে ঘুরে ফিশ ট্যাকো আর স্যুপ কিনে মেক্সিকান সুরেলা গান শুনতে শুনতে আমাদের রাতের খাওয়া সেরে নিলাম। ওদের স্থানীয় মাছ দিয়ে বানানো ফিশ ট্যাকো আর গরম গরম টমেটো চিংড়ির স্যুপ খেতে খুব ভালো লাগছিলো। তারপর রঙ্গিন সব জুসের দোকান পার হয়ে এক ঠেলাগাড়ি থেকে ধাক্কাধাক্কি করে সাদা ভুট্টা কিনলাম। ওরা ভুট্টার দানাগুলো একটা কাপে নিয়ে প্রচুর মেয়োনিজ আর চিজের গুঁড়া মিশিয়ে দিলো। আর আমরা আমাদের ইচ্ছামতন সস আর বিভিন্ন রকম ঝাল গুঁড়া মিশিয়ে নিলাম। তবে খেতে তেমন ভালো লাগলো না। আমি অনেকক্ষণ খোলা আকাশের নিচে বসে থেকে অন্যদের লক্ষ্য করছিলাম। মেক্সিকানরা আনন্দপ্রিয় জাতি, হৈচৈ করতে আর খাওয়াদাওয়া করতে ভালোবাসে। এরা যখন অ্যামেরিকার মতন নিরানন্দ দেশে গিয়ে সেটেলড হয় তখন এই কালচারাল শকটা মেনে নিতে নিশ্চয়ই কষ্ট হয়।
পরদিন সকাল সাড়ে আটটায় আমাদের পাশের হোটেলে ব্রেকফাস্ট করতে যাওয়ার কথা। আমাদের লবিতে নামতে নামতেই নয়টা বেজে গেলো। একজন কনশিয়ার্জ আমাদেরকে নিয়ে গেলো পাশের হোটেল গার্জা ব্ল্যাংকায়। গার্জা ব্ল্যাঙ্কা একদম নতুন হোটেল- সবকিছু ঝকঝক করছে। কনটেমপোরারি ইন্টেরিয়রের উদাহরণ দেখে আমার নিজের করা বিভিন্ন প্রজেক্টের কথা মনে পড়ে গেলো। আমাদের প্রথমে নিয়ে গেলো একটা রুমে, সেখানে আমাদের বসিয়ে বিভিন্ন তথ্য দিয়ে একটা ফর্ম পূরণ করা হলো। তারপর হাসিখুশি একজন মেয়ে এসে আমাদের গাইড করতে লাগলো। প্রথমে নিয়ে গেলো হোটেলের সবচেয়ে উপরের তলায় ইনফিনিটি পুল দেখাতে। তারপর আমরা একসাথে বসে ব্রেকফাস্ট করলাম। নাশতায় মেক্সিকান চিলাকুইলেস খেতে আমার বেশ ভালো লাগলো। খেতে খেতে আমাদের গাইড বিভিন্ন গল্প করলো যার বেশির ভাগই ছিলো আমরা কোথায় কোথায় বেড়াতে গিয়েছি, কত টাকা খরচ হয় একেকটা ট্যুরে, ভবিষ্যতে কোথায় কোথায় যেতে চাই- এইসব। খেয়ে দেয়ে আমরা হোটেলের ডিলাক্স, সুইট এইসব রুম দেখলাম। সবশেষে আমাদের একটা হলরুমে বসিয়ে কাগজ কলম বের করে বিভিন্ন টাকা পয়সার হিসাব দিতে লাগলো যে ওদের মেম্বার হয়ে কত টাকা জমা দিলে বছরে কতগুলো হোটেলে কত কত দিন ফ্রি থাকতে পারবো। আমরা যতই বলি যে এই সিদ্ধান্ত এখন দেওয়া সম্ভব না, ওরা ততই একজনের পর একজন এসে আমাদের বিভিন্ন রকম অফার দিতে লাগলো। এইভাবে লোকজনের সাথে কথা বলতে বলতে প্রায় ঘন্টা খানেক কেটে গেলো। শেষমেষ আমরা সরাসরি না বলে দেওয়ার পর আমাদেরকে উঠতে দিলো। আমাদের গাইড তারপর আমাদের নিয়ে গেলো ভিলা ডেল পালমারের আরেকটা অফিসে। সেখানে মেয়েটা বিদায় নিলো আর আরেকজন লোক আমাদের পাকড়াও করলো। সে ভিলা ডেল পালমারের বিভিন্ন ডিলের বর্ণনা দিতে লাগলো। আমরা শেষে বিরক্ত হয়ে সেখান থেকে উঠে পড়লাম। তারপর ট্যুর কোম্পানির অফিসে যেয়ে আগামীকালের জন্য চিচেন ইৎজা ট্যুরের টাকা জমা দিলাম। এরপর গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়লাম।
সকাল গড়িয়ে দুপুর হয়ে গেছে এইসব হোটেলের অফার শুনতে শুনতে। ইসলা মুহেরেস নামের দ্বীপে যাওয়ার কথা ছিলো, সেটা বাদ দিতে হলো। আমরা গেলাম একটা রেস্টুরেন্টে যার নাম কুকুলকান। একেবারে সমুদ্রের উপরে নারিকেল পাতার ছাউনি দেওয়া বিশাল এক ডেকের উপর সাজানো টেবিলে আমরা বসলাম। মেনু দেখে অর্ডার দিলাম ফিশ ফ্রাই আর হরচাটা নামের একটা শরবত। প্রথমেই আমাদের নাচোস আর ঝাল সালসা দিয়ে গেলো। আমরা বসে বসে নীল ঝকঝকে সমুদ্র দেখতে দেখতে সেগুলো চিবাচ্ছিলাম। এরমধ্যে শুরু হলো কাকের উপদ্রব। খাবারের লোভে কাক এসে হাজির। হাত দিয়ে কাক তাড়াতে হচ্ছে বারবার। যখন ফিশ ফ্রাই আসলো আমাদের মনটাই ভালো হয়ে গেলো। হালকা লবন আর মশলা দিয়ে ভাজা ফিশ ফ্রাইটা অনেক মজা করে খেলাম আমরা। খেয়েদেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বের হয়ে গেলাম রেস্টুরেন্ট থেকে। এরপর গন্তব্য বিচ।
গুগল ম্যাপে প্রথমেই দেখাচ্ছে প্লায়া তরতুগাস। গাড়ি পার্ক করে কয়েক মিনিট হেঁটেই চলে গেলাম সেখানে। জমজমাট বিচ। বিচের পাশেই শ্যাক আর সেখান থেকে বাজানো হচ্ছে উৎসবমুখর গান। বালিতে রোদ পোহাচ্ছে অনেক মানুষ। অনেকে দল বেঁধে নেমে পড়ছে পানিতে। এই বিচটায় হালকা একটু ঢেউ দেখতে পেলাম। আমরা কিছুক্ষণ থাকলাম এখানে। তারপর রওয়ানা দিলাম পরের বিচটা দেখতে।
পরের গন্তব্য প্লায়া দেলফাইন। প্লায়া দেলফাইনে যাওয়ার জন্য আমাদের ক্যানকুনের বিখ্যাত হোটেল জোন পার হতে হবে। ক্যানকুনের এই জায়গাটা মেইন ল্যান্ড থেকে একটা শাখার মতন আলাদা হয়ে গেছে। এই শাখার একপাশে আছে নিচুপ্তে লেগুন আর অন্য পাশে ক্যারিবিয়ান সমুদ্র। এখানেই সব দামি দামি হোটেলগুলো সমুদ্রের দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে। রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় একেকটা হোটেল বিল্ডিং দেখতে দেখতে আমার থার্ড ইয়ারের স্টুডিওর কাজগুলোর কথা মনে পড়ে যাচ্ছিলো। থ্রি ওয়ান থ্রি টুতে ছাত্রদের ডিজাইন করা বিল্ডিংগুলোর মতন একেকটা হোটেল যেন! বিলাসবহুল হোটেল দেখতে দেখতে আমরা পৌঁছে গেলাম প্লায়া দেলফাইন। প্লায়া দেলফাইন খুবই সুন্দর একটা বিচ। সাদা বালির বিচটা সারি সারি নারিকেল পাতার ছাতা দিয়ে সাজানো। আর সমুদের নীল রংটা এখানে যে আরও রাজসিক হয়ে ধরা দিয়েছে। আমাকে আর পায় কে, লাফাতে লাফাতে নেমে গেলাম পানিতে। মনে হলো আর কোথাও যাবো না, এখানেই থেকে যাই বাকিটা সময়। এই বিচে অনেকক্ষণ হাঁটলাম আমরা। তারপর উঠে পড়লাম গাড়িতে। এরপর যাবো প্লায়া মার্লিনে।
আমরা প্লায়া দেলফাইনে আসার সময় প্লায়া মার্লিনে থামতে চেয়েছিলাম। কিন্তু গাড়ি পার্ক করার জায়গা না পাওয়ায় নামতে পারি নাই। এবার খুঁজে খুঁজে একটা পার্কিং পেয়ে গেলাম। গাড়ি পার্ক করে চলে গেলাম প্লায়া মারলিন।
একটা অদ্ভূত বরফকুচি দেওয়া ভ্যানিলা ফ্লেভারের কোন আইস্ক্রিম খেয়ে নেমে পড়লাম বিচে। আগের দুইটা বিচে পানিতে ইচ্ছামতন দাপাদাপি করেছি। এখানে আর পানিতে নামলাম না। বরং একটা নারিকেল পাতার ছাতার নিচে বসে বসে সুনীল সাগরের দিকে তাকিয়ে রইলাম। প্রাণ জুড়ানো বাতাসে মনের শান্তি শান্তিভাব বেড়েগেলো বহুগুণ। এখানেই বসে রইলাম দিনের আলো কমে যাওয়া পর্যন্ত। তারপর হেঁটে হেঁটে গেলাম একটা চকচকা মার্কেটে যার নাম কুকুল্কান প্লাজা। ভিতরে তেমন লোকজন নাই। আমরা দুইজনে এদিক সেদিক হাঁটাহাঁটি করে দোতলায় একটা গ্রোসারি শপে ঢুকে পড়লাম। গ্রোসারির নাম সোরিয়ানা। মেক্সিকোতে আমাদের একমাত্র গ্রোসারি শপে যাওয়া। শুরুতেই মেক্সিকান ঝাল, মশলাদার চিপস সারি সারি করে সাজিয়ে রাখা। আমরা হেঁটে হেঁটে কোমল পানীয়র ফ্রিজের দিকে গেলাম। মেক্সিকানরা নিশ্চয়ই প্রচুর জুস খেতে ভালোবাসে। ফ্রিজ ভর্তি ঠাসা সব রঙ্গিন জুসের বোতল। এত্ত রকমের ফ্লেভারের জুস যে কোনটা ছেড়ে কোনটা নিবো বুঝতে পারছিলাম না। শেষমেষ খুব কম দামে দুই লিটারের এক বোতল জুস কিনে আমরা বের হয়ে আসলাম।
সন্ধ্যার পর আমরা সাংঘাতিক জমকালো একটা মার্কেট দেখে থামলাম। মার্কেটের নাম লা ইসলা। সে এক এলাহী কান্ড। খোলা আকাশের নিচে বিরাট এলাকা জুড়ে একতলা সব ব্র্যান্ডের দোকানের শোরুম। অনেকটা আমাদের ঢাকা নিউ মার্কেটের মতন ব্যাপারটা। কিন্তু এত চমৎকার ল্যান্ডস্কেপিং যে বলার মতন না। টলটলে হালকা সবুজে নীল পানির কৃত্রিম জলাশয়, নানান রকম গাছ, স্ট্রিট লাইটিং আর বসার জায়গা পুরো জায়গাটাকে অনেক স্বস্তিদায়ক করে তুলেছে। বেশিরভাগ দোকানগুলোই সরোভস্কি, টমি হিলফিগার, গুচি, ভ্যানস, লাকোস্টে, ভিক্টোরিয়াস সিক্রেট, অ্যাডিডাস -এইসব অ্যামেরিকান ব্র্যান্ডের। ক্রেতারা বেশির ভাগই অ্যামেরিকান পর্যটক। তারা দুইহাত ভরে শপিং করছে। মেক্সিকোর সুভেনিয়র শপগুলোতে গেলে বোঝা যায় মেক্সিকানদের জীবনে একটা বড় প্রভাব বিস্তার করে আছে শিল্পী ফ্রিদা কাহলো। আমরা হাঁটতে হাঁটতে একটা ঝলমলে রঙ্গিন ফেরিস হুইল দেখলাম। আরেকটা ইন্টেরাকটিভ অ্যাকুরিয়াম ছিলো যেটা সেদিনের মতন বন্ধ হয়ে গেছে। প্রাণ জুড়ানো বাতাসে ঝলমলে বিলাসবহুল দোকানগুলো দেখতে আমাদের খুবই ভালো লাগছিলো।
এখান থেকে বের হয়ে ছুটলাম ডিনারের উদ্দেশ্যে। কাছেই একটা রেস্টুরেন্ট ছিলো এল ফিশ ফ্রিটাংগা। নারিকেল পাতার ছাতার নিচে আমরা রেস্টুরেন্টের যেখানে বসলাম তার পাশেই ছিলো বিশাল নিচুপ্তে লেগুন আর একটা ছোট জেটি। জেটিতে বাঁধা সারি সারি স্পিড বোট। দিনের বেলায় দেখলে এটাকে একটা হারবার বলেই মনে হতো। আমরা মেনু দেখে বুঝে শুনে ঝটপট অর্ডার দিলাম ফিশ ট্যাকো, শ্রিম্প ট্যাকো, আর সি ফুড আলফ্রেডো পাস্তা। লাল নীল বাতির আলোকছটায় রাতের আকাশের চাঁদটাকে একটু ম্রিয়মান লাগছিলো। কিন্তু এমন সুন্দর পরিবেশে আমার সারাদিনের ক্লান্তি দূর হয়ে গেলো। গরম গরম খাবার আসতেই আসতেই খাওয়া শুরু করে দিলাম আমরা। খেয়েদেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বের ডেজার্ট অর্ডার দিতে চাইলাম, কিন্তু ততক্ষণে কিচেন বন্ধ হয়ে গেছে। কি আর করা, আমরা ডেজার্ট না খেয়েই বের হয়ে আসলাম রেস্টুরেন্ট থেকে। ডেজার্ট খেতে না পারলেও সবমিলিয়ে আমাদের চতুর্থ বিবাহবার্ষিকীর নৈশভোজটা মনে রাখার মতন ছিলো।
এখান থেকে আমাদের হোটেলে যেতে প্রায় পৌনে এক ঘন্টা লাগবে। আমরা বিলাসবহুল হোটেল জোন দিয়ে পার হয়ে আসতে লাগলাম। রাতের বেলা এলাকাটা দেখে আমার কাছে কিছুটা লাস ভেগাসের মতন মনে হলো। সেই ঝলমলেভাবটা একই রকম খালি পার্থক্য এখানে ক্যাসিনো নাই সেরকম। হোটেলে ফিরে পরের দিনের জন্য গোছগাছ করে নিলাম। সকাল সাতটায় বের হতে হবে। ভালোমতন অ্যালার্ম দিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। আর মনে মনে কষ্ট পেলাম যে দ্বিতীয় দিনটা শেষ হয়ে গেলো।
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি বারান্দা ভিজা। সারারাত বৃষ্টি হয়েছে। এবং আকাশ কালো। আমরা যতই দৌড়ঝাঁপ করে রেডি হই না কেন, নিচে লবিতে যেতে যেতে আমাদের চার মিনিট লেট হয়ে যায়। লবিতে নেমে দেখি আমাদের মিনিবাস নিচে দাঁড়িয়ে আছে আমাদের জন্য। তড়িঘড়ি করে উঠে বসলাম গাড়িতে। গাড়ির ভিতরের সিট বেশ আরামদায়ক। সামনে একটা টিভি স্ক্রিনে মিউজিক ভিডিও চলছে। আরও একটা হোটেল থেকে টুরিস্ট নিয়ে আমাদের গাড়িটা ছুটতে শুরু করলো। আমি জানালা দিয়ে দেখতে লাগলাম, বৃষ্টিতে রাস্তায় পানি জমে গেছে। এরমধ্য দিয়েই গাড়ি মোটর সাইকেল সব নির্বিকারভাবে ছুটছে। দেখে আমার দেশের কথা মনে পড়লো। দেশের কথা মনে পড়াতেই যেন একটা সিগনালে জ্যাম লেগে গেলো। আমাদের গাড়িটা থেমে রইলো অনেকক্ষণ। আমাকে দেশের কথা আরও মনে করিয়ে দেওয়ার জন্যই আমাদের গাড়িটা ব্যাকে যেয়ে পাশের থেমে থাকা পাবলিক বাসের সাথে ধুড়ুম করে ধাক্কা লাগিয়ে দিলো। আমার খুশিতে সবগুলো দাঁত বের হয়ে গেলো। পুরাই বাংলাদেশ বাংলাদেশ ভাইব পাচ্ছি! তবে বাংলাদেশে ধাক্কা লাগার পর যেমন সবাই বের হয়ে মারামারি লেগে যায় এখানে সেরকম কিছু হলো না। আমাদের গাইড কাচুমাচু হয়ে বললো আমরা দশ মিনিট হাঁটতে পারবো কিনা, কারণ পুলিশ না আসা পর্যন্ত এই গাড়ি নড়তে পারবে না। বাসের সবাই রাজি হলে আমরা রাস্তায় নেমে ফুটপাথ দিয়ে লাইন ধরে হাঁটতে থাকি। রাস্তায় মানুষজন খুব একটা নাই। চওড়া ফুটপাথ। মাঝে মাঝে বৃষ্টির পানি জমে আছে। আমরা সাবধানে হাঁটতে থাকি। একসময় একটা বড় বাসের কাছে পৌঁছে যাই, এই বাসে করেই আমরা বাকিটা পথ যাবো।
বাসে উঠে আরাম করে বসি। আমাদের চিচেন ইৎজা যেতে তিনঘন্টা সময় লাগবে। গাইডরা আমাদের মায়ান সভ্যতা নিয়ে বেশ কিছু তথ্য জানিয়ে দেয়। বাইরে আকাশ থমথমে। বেশ একটা ঘুমঘুম পরিবেশ। রাস্তার দুইপাশে তেমন কিছু দেখার না পেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। ঘুম ঘুম পরিবেশেই তিন ঘন্টা কেটে গেলো। আমাদের বাস থামলো একটা সুভেনিয়র শপের সামনে। আমরা ফ্রেশ হয়ে সুভেনিয়র কিনলাম একটা মায়ান রাশিচক্রের প্লেট আর পাথর কেটে বানানো ছুড়ি বা ড্যাগার। তারপর আবার আমরা চলতে শুরু করলাম। আমাদের হাতে হাতে টিকেট ধরিয়ে দিলো গাইড। বাস থামলো চিচেন ইৎজার পার্কিং লটে। আমরা লাইন ধরে গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়লাম।
ভিতরে ঢুকে প্রথমেই আমাদের গাইড একটা সফেদা গাছ দেখালো। সফেদা গাছের আঠা দিয়ে মায়ানরা অনেক কিছু বানাতো। দেশি সফেদা গাছ দেখে আমার যে কি ভালো লাগলো আর বলার মতন না। তারপর আমরা হাঁটতে লাগলাম। যে পথ দিয়ে হাঁটতে লাগলাম তার দুইপাশে সব ফেরিওয়ালা। সুন্দর সুন্দর পসরা সাজিয়ে রেখেছে। রঙ্গিন কাঠের মুর্তি আর মুখোশগুলো এত সুন্দর যে আমি চোখ সরাতে পারছিলাম না। ফেরিওয়ালার হাঁকডাকে মনে হচ্ছিলো কোন বাজারে চলে এসেছি। সকল ফেরিওয়ালা পার হয়ে অবশেষে পিরামিডটার দেখা পেলাম।
এই ফাঁকে চিচেন ইৎজা নিয়ে কিছু কথা বলে নেই। চিচেন ইৎজা মায়ানদের একটা শহরের নাম। মেক্সিকোর ইউকাটান পেনিন্সুলায় বর্তমানে যেখানে ঘন জঙ্গল, সেখানেই ছিলো একসময়ে মায়ানদের অন্যতম বড় শহর চিচেন ইৎজা। ধারণা করা হয় খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ সালের দিকে গোরাপত্তন ঘটে এই শহরের। এই শহরের প্রাণকেন্দ্রে দাঁড়িয়ে থাকা বিখ্যাত পিরামিড সদৃশ স্থাপনাটির নাম এল কাস্টিও। চোদ্দশ সালের দিকে ধ্বংস হয়ে যাওয়া চিচেন ইৎজা শহরের এই পিরামিড পরে স্প্যানিশদের দ্বারা আবিষ্কৃত হয়। স্প্যানিশরা এই জঙ্গলের মধ্যে এত উঁচু স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ দেখে মনে করে এটা কোন প্রাসাদ বা ক্যাসেল। সেই থেকে এর নাম দেওয়া হয় এল কাস্টিও। এই এল কাস্টিও পিরামিডটি আসলে একাধারে একটি মন্দির এবং ক্যালেন্ডার। পাখির পালকওয়ালা সর্পদেবতা কুকুল্কানের মন্দিরও বলা হয় একে। এতে সব মিলিয়ে ৩৬৫টা সিঁড়ির ধাপ আছে। আর চারপাশ চারটা ঋতু এবং প্রতি পাশে ৯১টা সিড়ির ধাপ ৯১ দিনকে প্রকাশ করে। বছরের যে দুই দিন দিন রাত সমান হয় অর্থাৎ ইকুই-নক্স, সে দুই দিন এর সিড়ির ধারে এমন করে ছায়া পড়ে যেন মনে হয় আকাশ থেকে নেমে এসেছে কুকুল্কান দেবতা। সেই দুইদিন এখানে পর্যটকদের ভীড় উপচে পড়ে। এত বছর আগে সীমিত প্রযুক্তির প্রয়োগে পাথর দিয়ে নিখুঁতভাবে জোতির্বিজ্ঞানের জ্ঞান কাজে লাগিয়ে এত বড় একটা স্থাপনা কিভাবে বানানো হয়েছিলো সেটা এক মহা আশ্চর্যের বিষয়। ২০০০ সালে চিচেন ইৎজাকে সেভেন ওয়ান্ডার্স অফ দ্যা ওয়ার্ল্ড এর একটা বলে ঘোষনা দেওয়া হয়। মজার ব্যাপার হচ্ছে এই পিরামিডের ভিতরে আছে আরেকটা পিরামিড। ধারণা করা হয়, এক রাজার বানানো পিরামিডের উপরে আরেক রাজা এসে পিরামিড বানিয়ে গেছে।
বৃষ্টির কারণে পরিবেশটা থমথমে ছিলো। এল কাস্টিওকে তাই খুব ঝলমলে দেখতে পেলাম না। আমাদের গাইড একজায়গায় দাঁড়িয়ে থেমে জানালো এই এলাকার মাটির উপরের স্তর হচ্ছে লাইমস্টোনের। তাই খোঁড়াখুড়ি করে পানি পাওয়া কঠিন ছিলো। এরকম জায়গায় শহর স্থাপনের প্রধান কারণ ছিলো পানির উৎস। এই এলাকায় আছে প্রাকৃতিক জলাধার বা সিংক হোল যেটাকে বলা হয় সিনোটে। সিনোটে আছে বলেই মায়ানরা এখানে শহর তৈরি করেছিলো। তবে মায়ানরা সবসময়ই বৃষ্টির দেবতা ‘চাক’কে তুষ্ট করতে চাইতো। এজন্য মানুষ বলি দেওয়া ছিলো একটা প্রচলিত পদ্ধতি। এল কাস্টিওর উপরে একটা বলি দেওয়ার বেদি ছিলো। সেখানে পুরোহিত শামান যাকে বলি দেওয়া হবে তার বুক চিরে হৃদপিন্ড বের করে ফেলতো। পাশেই সিংহাসনে বসে থাকতো রাজা, আর নিচে ভীড় করে থাকতো সাধারণ মানুষ। কি সাংঘাতিক ব্যাপার!
এরপর গাইডের সাথে হেঁটে হেঁটে আমরা পাশের একটা জায়গায় গেলাম। এটাই বিখ্যাত বল কোর্ট। মেসোঅ্যামেরিকানদের বলকোর্টগুলোর মধ্যে এটাই সব চাইতে বড়। মায়ানদের বিখ্যাত খেলার নাম ছিলো ‘পক আ টক’। খেলাটা অনেকটা বাস্কেটবলের মতন। একটা রাবারের বলকে দেয়ালে রিংএর ভিতর দিয়ে পাঠাতে হবে। দুই দলের মধ্যে খেলা হতো আর কোন দল গোল করতে পারলেই খেলা শেষ। তবে ব্যাপারটা অনেক কঠিন কারণ বলটা হাত কিংবা পা দিয়ে ধরা যেতো না। বলটা মারতে হতো হাতের বাহু, কোমর আর পায়ের উরু দিয়ে। আর রিংটাও বাস্কেটবলের রিঙয়ের মতন হরাইজন্টাল না বরং ভার্টিকাল। এবং তারওপর রিং যথেষ্ট উঁচুতে , মাটি থেকে প্রায় পঁচিশ ফুট উপরে। রাবারের একটা বলকে কিভাবে মাটি থেকে এত উচু একটা রিঙয়ের ভেতর দিয়ে পাঠানো সম্ভব সেটা আমার মাথায় ঢুকলো না। এই খেলার কোর্টটা হচ্ছে ইংরেজি I আকৃতির। মাঠটা নাকি সৌরজগতের রূপক ছিলো। বলটা ছিলো ছুটন্ত গ্রহ নক্ষত্রের প্রতীক, আর খেলোয়াড়রা ছিলো দেবতাদের ঐশ্বরিক ক্ষমতার প্রতীক। সবচেয়ে ভয়ংকর ব্যাপারটা শোনা তখনও বাকি ছিলো। এমনিতে এই খেলা সবসময় খেলা হলেও বছরের বিশেষ একটা সময় খেলা হতো দেবতাদের তুষ্ট করার উদ্দেশ্যে। এবং সেই খেলায় জিতে যাওয়া দলের ক্যাপ্টেন হেরে যাওয়া দলের খেলোয়াড়দের থেকে একজনের মাথা কেটে ফেলতো সবার সামনে। আমাদের গাইড দেওয়ালে পাথরে খোদাই করা রিলিফ দেখালো যে পরাজিত খেলোয়াড়ের কাটা মুন্ডু ধরে আছে জয়ী দলের ক্যাপটেন!
এখান থেকে বের হয়ে গেলাম যোমপ্লান্টলি প্ল্যাটফর্মে। খেলোয়াড়দের আর শত্রুদের কাটা মুন্ডু দিয়ে বানানো হয়েছিলো এই প্ল্যাটফর্মের স্ট্রাকচার। গাইডের কথায় যা বুঝলাম, মায়ানরা বেশ মারামারি এবং রক্তপাতপ্রিয় জাতি ছিলো। নিজেরা নিজেরা খালি যুদ্ধ করতো। আর এরপর গাইড আমাদের বিদায় দিয়ে এক ঘন্টার মধ্যে বাসে ফিরে যেতে বললো। এরপর আমরা নিজেরা হাঁটা শুরু করলাম। গাইডের কথা অনুযায়ী একদিকে হাঁটতে হাঁটতে আবার ফেরিওয়ালাদের হাঁকডাক পার হয়ে পৌঁছে গেলাম স্যাকরেড সিনোটেতে। এইটা একটা বিশেষ সিনোটে যেখানে মানুষজনকে ছুঁড়ে ফেলে দেওয়া হতো পানিতে দেবতাদের খুশি করার উদ্দেশ্যে। খাড়া গর্তের মতন সিনোটেতে একবার পড়ে গেলে সাঁতার জানলেও উপর থেকে সাহায্য ছাড়া উঠে আসা সম্ভব ছিলো না। সিনোটের একপাশে ছোট একটা স্থাপনার ধ্বংসাবশেষ দাঁড়িয়ে আছে। এখানেই বলি দেওয়ার আগে মানুষটাকে গোসল দিয়ে পবিত্র করে নেওয়া হতো। আমরা তাকিয়ে তাকিয়ে দেখলাম ঘোলাটে সবুজ রংয়ের পানির সিনোটেটাকে। কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হলো!
আমাদের হাতে সময় কম। পা চালিয়ে আবার চলে আসলাম এল কাস্টিওর কাছাকাছি। মাঝে মাঝেই বৃষ্টি হচ্ছে। ছাতা নিয়ে হাঁটতে হচ্ছে আমাদের। প্রচুর পর্যটক চারপাশে। ছবি তোলার জন্য খালি কোন জায়গা পাওয়াই যাচ্ছিলো না। এর মধ্যেই দুই এক জায়গায় দাঁড়িয়ে ছবি তুললাম। এরপর গেলাম টেমপল অফ দ্যা ওয়ারিওরের কাছে। এই মন্দিরটা চারটা বড়বড় ধাপের উপর অবস্থিত। চারপাশে অসংখ্য পাথরে খোদাই করা রিলিফ। এই টেম্পলের সাথেই আছে বিশাল কলোনেড। অসংখ্য পাথরের কলাম, কোনটা গোল কোনটা চারকোনা। এককালে হয়তো ছাদ ছিলো, এখন আর সেসব নাই। সবখানেই সাপ, চিতা, ঈগল, মানুষ এইসব প্রতিকৃতি খোদাই করা। আশেপাশে আরও অনেককিছু ছিলো দেখার মতন। কিন্তু আমরা বুঝতে পারছিলাম না যে কোথায় কি দেখতে যাবো কারণ কোন নির্দেশনা নাই। অন্যদিকে সময়ও কম বলে আমরা কোথাও থামলাম না। সামনে দিয়ে হেঁটে আরও একটা সিনোটের পাশ দিয়ে একটা ছোট পিরামিড পার হয়ে আবার এল কাস্টিওর সামনে এসে পড়লাম। মানুষজন নানাভাবে ছবি তুলছে। একটা ব্যাপার মাথায় ঘুরপাক খেতে লাগলো -আগে একসময় যেখানে মানুষ বলি দেওয়া হতো প্রায় দেড় দুই হাজার বছর পর সেখানেই পর্যটকেরা পোজ মেরে ছবি তুলছে! কি অদ্ভূত!!
সাধারণত ছবিতে এল কাস্টিওর যে পাশ দেখানো হয়, সে পাশটা মেরামত করা। বাকি তিনপাশের মধ্যে দুইপাশ অনেকটাই ভাঙ্গা। এতবড় একটা প্রত্নতাত্ত্বিক সাইট অথচ সেরকম কোন রক্ষণাবেক্ষণ নাই। কোন স্থাপনার সামনে কোন ফলক নাই, কোথাও কোন ইন্সট্রাকশন নাই। গাইড না থাকলে একটা কিচ্ছু বোঝার সাধ্য ছিলো না আমাদের। তারওপর অসংখ্য ফেরিওয়ালার হাঁকডাক, নানা রকম বাঁশির শব্দে বেশ বিরক্তই লাগছিলো। আজকে যদি এটা প্রথম বিশ্বের কোন দেশের স্পট হতো তাহলে ঢুকতেই ইতিহাস বৃত্তান্ত সমেত ম্যাপ হাতে পেতাম, জায়গায় জায়গায় বড় বড় ফলকে লিখা থাকতো, ইন পার্সন গাইড ছাড়াও অডিও গাইডের ব্যবস্থা থাকতো, কোথাও কোন ফেরিওয়ালা থাকতো না, শব্দ দূষণ থাকতো না, একটা ভিজিটর সেন্টার থাকতো যেখানে ঢুকেই পুরো সাইটটা সম্পর্কে মডেল দেখে কিংবা অডিও ভিজুয়াল প্রেজেন্টেশন দেখে একজন পর্যটক এই জায়গার অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যত সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পেয়ে যেতো। কিন্তু এসব বলে তো লাভ নাই। আমাদের গাইডের কথা অনুযায়ী, মেক্সিকোতে অসংখ্য পুরাতাত্ত্বিক সাইট আছে যার অর্ধেকও দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত করা হয় নাই। দক্ষতা ও লোকবলের অভাবে এত বড় বড় সাইটের রক্ষণাবেক্ষণ করতে হিমশিম খাচ্ছে ওরা। এই চিচেন ইৎজাতেই আরও চারটা বল কোর্ট আছে যেগুলো এখনও পুরোপুরি উদ্ধার করা হয় নাই। আমরা যখন ঘুরছিলাম তখনও দেখেছি অনেক মানুষ কাজ করছে টেমপল অফ দ্যা ওয়ারিয়রে। এখনও গবেষণা হচ্ছে এল কাস্টিওর নিচে কোন সিনোটে আছে কিনা সেটা নিয়ে। সব মেরামতের কাজ শেষ করে আজকে থেকে দশ বছর পর হয়তো এখনকার চাইতে আরও ভালো পরিবেশ থাকবে সেখানে।
আমরা চিচেন ইৎজাকে বিদায় দিয়ে একটা ছোট বুকলেট কিনে বাসে চড়ে বসলাম। বাস আমাদের নিয়ে গেলো আগের সুভেনির শপের জায়গায়। সেখানে সুভেনির শপের পাশেই একটা রেস্টুরেন্টে আমরা দুপুরে খেতে ঢুকলাম। অনেক বড় খোলা রেস্টুরেন্ট। নারিকেল পাতার বিশাল ছাউনির নিচে বসার জায়গা। আমাদের জন্য বুফে খাবারের ব্যবস্থা ছিলো। আমরা লাইন ধরে দাঁড়িয়ে খাবার নিলাম। ফিশ ফ্রাই আর ভেজিটেবল সুপটা অনেক মজা ছিলো। আমরা ফিরনি আর আইস্ক্রিম ডেজার্ট খেলাম। এরমধ্যে কিছু মহিলা এসে স্থানীয় গানের সাথে নাচতে শুরু করলো। নাচ শেষ হলে অনেকেই বখশিশ দিলো। আবার কতগুলো ছেলে মুখে শরীরে রঙ মেখে, মাথায় পালকের মুকুট লাগিয়ে মায়ানদের মতন সেজে নাচানাচি শুরু করলো। বাইরে ঝমঝম বৃষ্টি হচ্ছিলো। সব মিলিয়ে খুব ভালো ছিলো এই খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারটা।
আমরা পেট ভরে খেয়েদেয়ে আবার রওয়ানা দিলাম। বাস আমাদের নিয়ে গেলো সিনোটে সামালে। এবার বৃষ্টি দেখে আমরা রেইনকোট পরে নামলাম বাস থেকে। আমাদের হাতে ব্যান্ড পরিয়ে দেওয়া হলো। আমরা হেঁটে হেঁটে চলে গেলাম সিনোটে সামালে। খাড়া সিঁড়ি দিয়ে মাটি থেকে নিচের দিকে নামতে লাগলাম। মাঝামাঝি এক জায়গায় রেলিং ঘেরা সমতলে ভীড় করে লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। আর যারা পানিতে নামবে তারা লাইফ জ্যাকেট ভাড়া করে নিচে নেমে যাচ্ছে। আমরা যে রেলিং ঘেরা সমতলে দাঁড়িয়ে আছি তার নিচে গাঢ় নীল রঙের পানি। তাতে হৈচৈ করে লোকজন সাঁতার কাটছে। আর উপরে গোল হয়ে দেখা যাচ্ছে আকাশ। অন্য মানুষদের সাঁতার দেখে আমরা কিছুক্ষণ পর উপরে উঠে আসলাম। আশেপাশে রেস্টুরেন্ট, টাকিলা বার আর সুভেনির শপ। সব দেখেটেখে আমরা আবার বাসে উঠে পড়লাম।
আমাদের আজকের দিনের মতন অ্যাডভেঞ্চার শেষ। এবার ফেরার পালা। বাস ছেড়ে দিতেই আবার ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম। প্রায় আটটার দিকে আমরা ক্যাঙ্কুনে পৌঁছালাম। বাস আমাদের নামিয়ে দিলো একটা পেট্রোল পাম্পে। সেখানে আমরা একটা ছোট বাসে উঠলাম। সেই ছোট বাসে করে হোটেলে পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় নয়টা বেজে গেলো। রুমে ঢুকে ব্যাগপত্র রেখে তারপর গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলাম ডিনার করতে। এত রাতে আশেপাশের সব জায়গা বন্ধ হয়ে গেছে। আমরা ঠিক করেছি শহরের দিকে একটা রেস্টুরেন্টে যাবো যার নাম লা পারিইয়া ক্যানকুন।
রেস্টুরেন্টের সামনে গাড়ি পার্ক করতে করতে ভ্যালে এগিয়ে আসলো। আমরা গাড়ির চাবি দিয়ে নেমে পড়লাম। দারুণ উৎসবমুখর পরিবেশ মনে হচ্ছে ভিতরে। আমরা ঢুকে একটা টেবিলে বসলাম। চিন্তা ভাবনা করে অর্ডার দিয়ে দিলাম। প্রায় সাথে সাথেই নাচোস আর সালসা দিয়ে গেলো। নাচোস চিবাতে চিবাতে আশেপাশে দেখছিলাম। নীল রঙের মেক্সিকান পোশাক পরা একটা গানের দল একটা টেবিলের কাস্টোমারদের গান গেয়ে শোনাচ্ছে। কেউ গাইছে, কেউ বাজাচ্ছে। খুবই আনন্দমুখর পরিবেশ। রেস্টুরেন্টের ভিতরটা আলো দিয়ে ঝলমল করছে। আর নানা রকম রঙ্গিন কাগজ দিয়ে সাজানো ভিতরটা। আশেপাশের টেবিলে মানুষজন উচ্চ স্বরে হাসছে, কথা বলছে। আমাদের খুবই ভালো লাগছিলো। একজন ওয়েটারকে দেখলাম মাথায় একটার উপর আরেকটা বসিয়ে মোটমাট চারটা গ্লাস আর একটা বোতল নিয়ে এসে এক টেবিলে পরিবেশন করতে। আমরা খুবই মজা পেলাম। আমাদের খাওয়া চলে আসলো। অর্ডার ছিলো টোস্টাডিয়া আর ফিশ ফিলে। টোস্টাডিয়াটা খুব মজা ছিলো। তবে ফিশ ফিলেটা মজা লাগে নাই। তারপর ডেজার্ট আসলো বিশাল একটা ট্রেস লেচেস। দারুণ স্বাদের কেকের টুকরাটা এত বড় ছিলো যে আমরা অনেক কষ্টে সেটা খেয়ে শেষ করলাম।
বিল মিটিয়ে দিয়ে আমরা বের হয়ে আসি সেই রেস্টুরেন্ট থেকে। হোটেলে ফিরতে ফিরতে আরও রাত হয়ে যায়। মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছিলো এই ভেবে যে এত সুন্দর একটা ট্যুর শেষ হয়ে গেলো। রাতে কয়েকঘন্টা ঘুমিয়ে আবার ভোরে উঠে গেলাম ফজরের সময়। রুমের বারান্দায় হ্যামকে শুয়ে শুয়ে দেখলাম সূর্যোদয়। সব মালপত্র গোছগাছ করে এক দফা নিচে নেমে গেলাম। আমাদের শেষ বিচে যাওয়া। সকালের ঠান্ডা বাতাসে ঝকঝকে সমুদ্র দেখে চোখের শান্তি হচ্ছিলো। খালি মনে হচ্ছিলো আরও দুই তিন দিনের জন্য কেন প্ল্যান করলাম না….
সব শেষে সমুদ্রকে বিদায় জানিয়ে রুমে গিয়ে ব্যাগপত্র নিয়ে নেমে পড়লাম। চেক আউট করে গাড়ি নিয়ে বের হয়ে পড়লাম। এরপর হালকা জ্যাম ঠেলে, পেট্রোল পাম্প খুঁজতে যেয়ে ভুল রাস্তায় অনেক্ষণ চক্কর কেটে, অবশেষে তেল নিয়ে, স্যান্ডুইচ কিনে, এয়ারপোর্টের সামনে একই রাস্তায় তিনবার চক্কর কেটে যখন গাড়ি জমা দিতে যাবার রাস্তা খুঁজে পেলাম তখন মনে একটু সন্দেহ জমতে শুরু করেছে যে প্লেন ধরতে পারবো কিনা! তারপর গাড়ি জমা দিয়ে, শাটলের জন্য অপেক্ষা করে, শাটলে চড়ে যখন টার্মিনালে পৌঁছালাম তখন দেখি চেক ইন কাউন্টারে বিরাট লাইন। আল্লাহর রহমতে যখন লাইন ব্রেক করে আমাদের ইমার্জেন্সিভাবে আগে নিয়ে গেলো, তখন একটু স্বস্তির নিশ্বাস ফেললাম। চেক ইন করে যখন সিকিউরিটি চেক ইনে গেলাম, তখন আমাদের সুভেনিয়র হিসাবে কেনা ছুরিটা আটকে দিলো। নিজের উপর রাগ লাগলো, কেনার সময় একবারও ভাবি নাই যে এই জিনিস প্লেনে আটকে দিবে। কি আর করা, অগত্যা সুন্দর ছুরিটাকে ফেলেই চলে আসতে হলো। দৌড়ে দৌড়ে গেটে এসে পৌঁছে দেখি বোর্ডিং শুরু হয়ে গেছে। আমরা সরাসরি লাইনে দাঁড়িয়ে গেলাম। সোজা প্লেনে চেপে বসলাম। কিছুক্ষণের মধ্যেই প্লেন চলতে শুরু করলো।
জানালা দিয়ে দেখছিলাম রোদে ঝলমল করছে ক্যানকুন। সুন্দর এই শহরটাকে বিদায় জানাতে মোটেও ইচ্ছা করছিলো না। মনে মনে আবার এই শহরে আসার স্বপ্ন নিয়ে শেষবারের মতন তাকিয়ে দেখলাম সুন্দর শহরটাকে।
Adios, Cancun, adios……..