ঘুম ভাঙল ভোরবেরলা। সেই জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইলাম খানিকক্ষণ। দেওয়ালে টানিয়ে রাখা ছবির মত সুন্দর এক দৃশ্য। এত সুন্দর দৃশ্যও তাহলে আছে পৃথিবীতে! যাই হোক, আমাদেরকে বের হতে হবে। চটজলদি ফ্রেশ হয়ে আগের রাতের গুছানো সব মালপত্র একে একে রুম থেকে বের করলাম। হোটেলের এন্ট্রির সামনে গিয়ে আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেলো। হোটেলে ঢুকার সময় তো খাড়া ঢাল দিয়ে গড়িয়ে লাগেজ নামিয়েছি। কিন্তু এখন? এখন তো টেনে উপরে তুলতে হবে। ইয়া আল্লাহ বাঁচাও!
হোটেলের কেউ লাগেজ তুলে দিতে পারবে কিনা খোঁজ খবর নিলাম। কিন্তু কোন মানুষ পেলাম না। যা আছে কপালে, ফী আমানিল্লাহ বলে শুরু করলাম ঢাল বেয়ে লাগেজ টেনে উপরে তোলা। কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই হাতের কব্জিটা মনে হলো জয়েন্ট থেকে ছুটে যাবে। পায়ের মাংস পেশি টনটন করতে লাগলো। হাতের তালুতে লাগেজের হ্যান্ডেলের লাল দাগ পড়ে গেলো। পিঠের ব্যাকপ্যাকটাকে মনে হলো আমাকে পিছন দিয়ে টানছে। বড় বড় নিঃশ্বাস ছাড়তে লাগলাম। গাল মুখ লাল হয়ে গেলো। এই প্রচন্ড ঠান্ডার মধ্যেও দারুন পরিশ্রমে আমার গরম লাগা শুরু হলো। বার বার রাস্তার দিকে মাথা তুলে দেখতে লাগলাম কখন শেষ হবে এই যাত্রা? যখন আমি রাস্তার লেভেলে উঠে গোয়েলের পিছনে লাগেজ নিয়ে রাখলাম, বুকের পাজড় তখন হাপড়ের মতন ঊঠা নামা করছে। বেশ কিছুক্ষণ সময় লাগলো ধাতস্থ হতে। মোটামুটি স্বাভাবিক হয়ে আমি যখন ঢালের নিচে আমাদের হোটেলের দিকে তাকালাম, আমি অবাক হলাম। এই এত বড় ঢালের রাস্তা পার হয়ে আমি কেমন করে এই ভারি মাল্পত্রগুলো টেনে আনলাম, নিজেরই বিশ্বাস হচ্ছিলো না। নিজের প্রতি নিজেই বেশ খুশি হয়ে গেলাম। বাহ- আমি তো বেশ পরিশ্রমী! গোয়েলের গায়ে হেলান দিয়ে দেখতে লাগলাম আমাদের মানুষজন সবাই লাইন ধরে ঢাল বেয়ে লাগেজ টানতে টানতে আসছে।
কয়েক জন মিলে তাড়াতাড়ি নাশতা করার জন্য ছুটলাম। হোটেলের সামনেই ছোট একটা দোকান, সেখানে শুধু কেক, পাউরুটি আর চা আছে। কেকটা দেখে ভালো মনে হলো না। আমরা কয়েকজন মিলে পাউরুটি কিনলাম। সবাই চা দিয়ে ভিজিয়ে খেলো, আমি শুকনা পাউরুটিই চিবিয়ে খেলাম। সবশেষে পাঁচ রুপি দিয়ে একটা পার্ক কিনে বের হয়ে আসলাম। সবার আসা হয়ে গিয়েছে। আমরা বাসে উঠে পড়লাম। মোটামুটি ১০টার দিকে আমরা রওয়ানা হলাম মানালির দিকে।
বাস ছাড়ার দশ পনের মিনিট পর কমিটির লোকজন টের পেল যে যেই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার কথা সেই রাস্তা দিয়ে আমরা যাচ্ছি না। সৌরভ, জুবায়ের ওরা গিয়ে ড্রাইভারের সাথে কথা বলে রাস্তা চেঞ্জ করতে বললো। ড্রাইভার কিছুক্ষন পর রাস্তার বাইরে বাসটা পার্ক করলো। উনি জানালো, মানালি যাওয়ার দুইটা রাস্তা আছে। একটা রাস্তা নিরাপদ, দেখার মতন তেমন কিছু নাই। আমরা সেই রাস্তা দিয়ে যাচ্ছি। অন্যটা ভয়ানক বাঁকযুক্ত, কিন্তু দুপাশের দৃশ্য অনেক সুন্দর। কিন্তু সেই রাস্তা দিয়ে দিনের বেলা গেলে যাত্রীরা ভয়ে চিৎকার করে তখন ড্রাইভারের চালাতে খুব অসুবিধা হয়। আমাদের ছেলেরা বললো যে আমরা দ্বিতীয় রাস্তা দিয়েই যেতে চাই। তখন ড্রাইভার আমাদের বললো যে উনার কোন অসুবিধা নাই, কিন্তু উনি শর্ত দেয় যে আমরা কোন চিৎকার করতে পারবো না। শর্ত শুনে আমরা ভয় পেয়ে যাই। কিন্তু তারপরও রাজি হই। তখন আমাদের পাংকু হেল্পার এসে ড্রাইভার আর আমাদের মাঝের দরজাটা বন্ধ করে লক করে দেয়। তখন আমরা বুঝি টুরিস্ট বাসগুলোতে ড্রাইভার আর যাত্রীদের মাঝে দরজা কেন দেওয়া হয়।
আমরা উল্টা ঘুরে নতুন রাস্তা দিয়ে যাত্রা শুরু করি। পাহাড়ের গায়ে আঁকাবাঁকা যে পথ দিয়ে আমরা যাচ্ছিলাম সেটার বাঁকগুলো যেন আমাদের বাসের মাপে মাপেই বানানো হয়েছে। আমি বাংলাদেশের মানুষ। পাহাড় পর্বত বললেই চট্টগ্রামের পাহাড়ের ছবিই চোখে ভেসে ওঠে। কিন্তু এত বড় বড় পাহাড় আমি কখনোও দেখি নাই। মাঝে মাঝে হিন্দি সিনেমাতে এই রাস্তার ছবি দেখা যায়। আমরা একটা পাহাড়কে পেচিয়ে পেচিয়ে উপরে উঠি আবার পেচিয়ে পেচিয়ে নামতে থাকি। তবে নিচে নামা কম, উপরে উঠা বেশি। সমতল ভূমি থেকে অনেক উপরে ঊঠে যাওয়ার পর আমার কানে সমস্যা হতে লাগলো। প্লেনে যেরকম কানে তালা লেগে যায় সেরকম না। কেমন যেন অস্বস্তি। আমি দুই হাত দিয়ে কান চেপে বসে থাকলাম।
ঘন্টা খানেকের মধ্যেই বাস একটা ধাবা টাইপের দোকানে থামলো। ড্রাইভার জানালো সামনে আর খাবারের দোকান পাওয়া যেতে নাও পারে। তাই আমরা নেমে চিপস বিস্কুট এই সব খেলাম। অনেকে অমলেট, ম্যাগি নুডুলস খেয়ে নিলো। আরও কিছু খাওয়া দাওয়া কিনে নিয়ে বাসে উঠে পড়লাম। একটু বিরতির পর বাস আবার চলতে শুরু করলো। দুই পাশের অবাস্তব সব পাহাড়ি দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা ছুটতে লাগলাম।
একই রকম পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ করেই লীলচে সবুজ রঙয়ের পানির জলাশয় দেখতে পেলাম রাস্তার এক পাশে। অল্প পানির জলাশয়ে সাদা ফেনার স্রোত তুলে ঝরঝর করে বয়ে চলছে টলটলে পানি, তাতে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে নানা আকারের পাথর- দৃশ্যটা এতই নৈসর্গিক যে মনে হল আমি বোধহয় পৃথিবীর বাইরে কোথাও চলে এসেছি। এই রকম অপরূপ জলাশয় আমি কোনদিন কল্পনাও করি নাই। জানলাম এই জলাশয়ের নাম বিয়াস নদী। পানদহ নামের এক জায়গার কাছাকাছি এসে বিয়াস নদীর শ্বাস রুদ্ধকর সৌন্দর্য দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। পথেই একটা জল বিদ্যুত পাওয়ার সেন্টার দেখলাম। এই বিয়াস নদীতে বাঁধ দিয়ে বিদ্যুত উৎপাদন করা হয়। আমরা চলতে লাগলাম, আমাদের সাথে সাথে বিয়াস নদীও এঁকে বেঁকে চলতে লাগলো। সবাই একটু উসখুস করতে লাগলো। বাসটা একটু থামানো যায় না, একটু নেমে নিচের নদীটা দেখে আসা যেত। ড্রাইভারের দরজায় নক করে সেই কথা বলতে ড্রাইভার সুবিধাজনক জায়গায় নিয়ে বাসটা থামালো। আমরা বাস থেকে নেমে হাত পা ছাড়লাম। ততক্ষনে সূর্য অস্ত যাই যাই করছে।
শেষ বিকালের এই সময়টাতে আমরা বিয়াস নদীর ধার দিয়ে হেঁটে বেড়ালাম। খাদের কিনার দিয়ে হাঁটছি আর নিচেই বিয়াস নদী। অন্যপাশের পাহাড় থেকে গড়িয়ে পড়ছে সাদা পানির ঝরনা। মনের অবস্থা তখন কেমন সে কথা আর না বোঝালেও হয়। মনে মনে আল্লাহকে ধন্যবাদ জানালাম, আমার কপালে এত সুন্দর দৃশ্য দেখার সৌভাগ্য রাখার জন্য ঠিক করলাম হোটেলে পৌঁছে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বো। যখন সূর্য প্রায় ডুবে গেছে, তখন আমরা বাসে উঠে আবার রওয়ানা দিলাম। কোথাও থামাথামি নাই। এর মধ্যে অনেকেই থামতে বললো একটা বাথরুমের ধারে কাছে। বাসটা একবার থামলো। রাস্তার ধারে একটা জঙ্গলের মধ্যে দুইটা বাথরুম। কোন পানির ব্যবস্থা নাই, নাই কোন লাইট। লাভের লাভ তো কিছুই হলো না, কোনমতে মোবাইলের লাইট জ্বালিয়ে জঙ্গলের মধ্য দিয়ে হেঁটে আবার বাসে উঠে বসলাম।
বাস আবার চলতে লাগলো। পথ আর শেষ হয় না। অনেকক্ষন পরে হঠাৎ রাস্তার দুই ধারে স্তুপের মতন কি যেন সব দেখা গেলো। আমরা উত্তেজিত হয়ে গবেষনা শুরু করলাম, ওগুলো কি বরফ নাকি অন্য কিছু। রাতের অন্ধকারে তেমন কিছু দেখাও যাচ্ছিলো না। তাই আমাদের তর্কও আর শেষ হচ্ছিলো না। এই করতে করতে আমরা যখন এসে পৌঁছালাম ‘চন্দ্রমুখী কটেজ’ এ তখন রাত ৯টা বাজে। কমিটির গ্রিন সিগনাল পেয়ে আমরা বাস থেকে নেমেই ঠান্ডার একটা ঝাপ্টা খেলাম। আমি তাড়াতাড়ি রাস্তার পাশে জমে থাকা স্তুপে পা দিয়ে লাথি মেরে দেখলাম এগুলো আসলেই বরফের স্তুপ। রাস্তা পরিষ্কার করার জন্য দুইপাশে বরফগুলো স্তুপ করে রাখা হয়েছে। তবে বরফের সাথে মাটি মিশ্রিত থাকার কারণে স্তুপগুলোর রঙ সাদা নয় বরং ময়লা রঙের। এই জন্যই বাস থেকে আমাদের বুঝতে অসুবিধা হচ্ছিলো ওগুলো বরফ কিনা।
আমরা গরমের দেশের মানুষ। তাই বরফ দেখে যে আমরা উত্তেজিত হয়ে উঠবো সেই কথা অনুমেয়ই ছিলো। কিন্তু উত্তেজনার বাঁধ ভাংলো যখন আমরা রাস্তা থেকে ঢাল বেয়ে নেমে চন্দ্রমুখী কটেজে ঢুকলাম। সিড়ি হিয়ে উঠে প্রথম যে রুমটা পেলাম সেটাতে ঢুকে আমার চোখ বড় বড় হয়ে গেলো। মনে হলো যেন নেপালের কোন এক প্রাসাদে ঢুকে পড়েছি। বর্গাকৃতির বিছানা, দুইটা গদি আঁটা সোফা, চিকন লম্বা টেবিল, লাল কার্পেট দিয়ে সাজানো রুমটা ছবির মতন সুন্দর। একপাশের পুরো ওয়ালটা জুড়ে জানালা, তার সামনে কার্পেট দিয়ে ঢাকা এক সারি বসার জায়গা। ধবধবে সাদা বাথরুমে আছে বিশাল এক বাথটাব। বাথরুমের সব গুলো লাইন দিয়েই গরম পানির ব্যবস্থা। মজুমদার, মৌলি আর রুবাইদা লাগেজ টানতে টানতে রুমে এসে খুশিতে আত্মাহারা হয়ে উঠলো। আমি আর মজুমদার নাচতে শুরু করলাম। সারাটা দিন বাসের ছোট্ট সিটে বসে থাকতে থাকতে এক পর্যায়ে বিরক্ত হয়ে গিয়েছিলাম। কিন্তু এই রকম হোটেল পেয়ে সব বিরক্তি নিমেষেই উধাউ হয়ে গেলো।
নাচানাচি শেষ করে টের পেলাম সারাদিন কিছুই খাওয়া হয় নাই, সেই সকালবেলা শেষ চিপস খেয়েছি আর এখন রাত হয়ে গেছে। দ্রুত খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। রুম থেকে বের হয়ে শুনলাম হোটেল আমাদের অফার দিয়েছে ওনারা আমাদের জন্য রান্না করতে পারে তবে ভেজ আর রুটি। আমরা তাতে রাজি হলাম না। হোটেলের সামনের ঢাল পার হয়ে রাস্তায় উঠে আমরা ডান দিকে গেলাম। একটা খাবারের দোকান দেখে তাড়াতাড়ি করে ঢুকে পড়লাম। কিন্তু সেই দোকানের লোকরা জানালো উনাদের রান্না করতে অনেক সময় লাগবে। তাছাড়া অল্প কিছু আইটেম পাওয়া যাবে। আমরা অনেকেই সেখান থেকে বের হয়ে গেলাম। এবার হাঁটতে হাঁটতে হোটেল থেকে বাম দিকের রাস্তা ধরলাম। রাত হয়ে গেছে। সব দোকানপাটই বন্ধ। একটা দোকান খোলা পেয়েই ঢুকে পড়লাম। দেখলাম আমাদের মানুষজন সব ভিতরে বসে আছে।
ঝটপট ৮০ রুপির ভেজ চাওমিন অর্ডার দিয়ে বসে রইলাম। দোকানটা ছোট্ট। দেখতে মনে হয় যেন নেপাল বা তিব্বতের কোন ঘরের ভিতর বসে আছি। কাঠের টেবিল আর বেঞ্চ গুলা সারি করে বসানো। পুরাই ফ্যামিলি দোকান। বাবা মা রান্না করেন, বড় ছেলে ক্যাশে বসে, মেজ ছেলে বাবা মাকে সাহায্য করে আর সবচেয়ে ছোট্ট যে মেয়ে যার নাম কাঞ্চন বা কান্নু, সে একটা বেবি কটে বসে কাস্টমারদের বিনোদন দেয়। এত্ত কিউট একটা মেয়ে, গোলাপি দুটা গাল- ওর সাথে খাতির করার জন্য আমাদের মধ্যে কাড়াকাড়ি পড়ে গেলো। পিচ্চিটা তার কটে বসেই সবার সাথে হাসছিলো, ভেংচি কাটছিলো, রাগ করছিলো। হঠাৎ করে এতগুলো অর্ডার পেয়ে ওনাদের উপর বেশ চাপ পড়ে গেলো। ওনারা সময় লাগবে বলে দিলো। আমরাও বসে থেকে গল্পগুজব করতে লাগলাম। দোকানের দরজাটা স্লাইডিং, এর একটা পাল্লা আছে আরেকটা নাই। এই খোলা পাল্লার জায়গা দিয়ে হু হু করে হিম শীতল বাতাস ঢুকতে লাগলো। একটু পরেই বৃষ্টি পরার টিপ টিপ শব্দ হতে লাগলো। আমরা কপাল চাপড়ালাম, হায় বৃষ্টি- তুমি আর আমাদের পিছু ছাড়লে না!
যখন সাদা ধবধবে বাটিতে করে ধোঁয়া ওঠা চাওমিন আসলো, সবার পেটের খিদে গুড়গুড় করে উঠলো। দারুন মজা ছিলো সে খাবারটা। শুধু চাওমিনই না, যারা সুপ, ভেজ মাঞ্চুরিয়ান, ফ্রাইড রাইস চপসুয়ে অর্ডার দিয়েছিলো তাদের সবার খাবারই অত্যন্ত মজা ছিলো। আমরা গপাগপ খেয়ে ফেললাম। খেয়েদেয়ে দেরি না করেই আমরা বের হয়ে পড়লাম। বৃষ্টি মাথায় নিয়ে শীতের রাতে দৌঁড় লাগলাম হোটেলের দিকে। এই রকম -২ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রায় বৃষ্টিতে দৌড়াতে হবে এটা কল্পনাতীত ছিলো। যাই হোক দৌড়াতে দৌড়াতে হোটেলের সিড়ি ঘরে এসে পৌছালাম আমরা। সিড়ির আলোতে রুবাইদা একটা আর্তচিৎকার দিলো। নিজের ওভারকোটের দিকে তাকিয়ে দেখলাম- হাজার হাজার চকচকে কণা ঝিকমিক করছে। তু-ষা-র-পা-ত।
আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম। তাহলে যেটাকে বৃষ্টি মনে করেছি সেটা আসলে তুষার পাত! আমার খুশিতে নাচতে ইচ্ছা হলো। দৌড়িয়ে রুমে ঢুকে সবাইকে চিৎকার করে বললাম তুষারপাতের কথা। কিন্তু মজুমদার আর মৌলি মুখ শুকনা করে লেপের তলা থেকে বললো, প্রচন্ড ঠান্ডায় কিছুতেই শরীর গরম হচ্ছে না। এই ঠান্ডায় ঘুমানো সম্ভব নয়। আমি দৌড়াদৌড়ি করে এসেছি বলে ততটা টের পাচ্ছিলাম না। রুম সার্ভিসে ফোন দিয়ে বলি রুম হিটারের ব্যবস্থা আছে কিনা। ওরা বলে রুম হিটারে নেই তবে প্রত্যেক রুমের ক্যবিনেটে এক্সট্রা লেপ দেওয়া আছে। আমি ক্যাবিনেট খুলে এক্সট্রা লেপটা বের করে ওদের গায়ে ছড়িয়ে দেই।
ওভারকোটটা খুলে বাকিসব গরম কাপড় পরেই লেপের নিচে ঢুকে পড়ি। কানে উলের টুপি, গলায় মাফলার, হাতে আর পায়ে মোজা, গায়ে একাধিক গরম কাপড়, দুইটা লেপ আর নিজেদের একটা করে কম্বলের নিচে চাপা পড়ে ঘুমাতে চেষ্টা করি। একসময় আরামদায়ক একটা তাপমাত্রা তৈরি হয় লেপের নিচে আর সাথে সাথেই আমি ঘুমিয়ে পড়ি।