চাঁদটা শুধু ওঠার অপেক্ষা

এবার শুধু অপেক্ষার পালা। দীর্ঘ এক মাস ধরে চলা প্রস্তুতির সমাপ্তি পর্যায়ে দাঁড়িয়ে সকলে একবার করে হিসেব করে নিচ্ছেন ঈদের কি কি প্রস্তুতি এখনও বাকি রয়ে গেছে।

শবে ক্বদর শেষে আরও কয়েকটা রোজা বাকি থাকলেও ইফতারির দোকানগুলোতে হাঁড়ি পাতিল গোছানোর ভাব শুরু হয়ে গেছে। বাইরের মানুষ ইতোমধ্যে ঢাকা শহর ছেড়ে চলে গিয়েছে। গাড়ির হর্নমুক্ত, জ্যামহীন ঢাকা শহরের রাস্তায় নেমে ‘অরিজিনাল’ ঢাকাবাসীদের মুখের হাসি চওড়া হচ্ছে। টেলিভিশনে বাড়ি ফেরার বিজ্ঞাপনগুলো (বিশেষ করে গ্রামীনফোনের) প্রচার করা হচ্ছে। যারা এখনও বাড়ি ফিরতে পারেননি তারা লাস্ট চান্স হিসেবে বাসের ছাদ, লঞ্চের ছাদ আর ট্রেনের ছাদে একটা পা রাখতে পারার আশায় টার্মিনালগুলোতে বসে আছেন।

ঈদের জন্য কেনা নতুন জামাগুলো বের করে সবাই একচোখ দেখে নিচ্ছেন। নতুন জামা, পায়জামা আর পাঞ্জাবিগুলো ইস্ত্রি করা হচ্ছে। জামা আর শাড়ির সাথে মিলিয়ে গয়নাগাটি কেনা হয়ে গিয়েছে। এখন শুধু কখন কোন পোশাক পড়া হবে সেটা আলোচনা করে ঠিক করাই বাকি। ঈদের নামাজে যাওয়ার জন্য আতর, টুপিও রেডি। নতুন স্যান্ডেলটাও বাক্স থেকে বের করে রাখা আছে।

বাজারে ‘আগুন’ লেগে যাওয়ার পরও প্রত্যেক ঘরে ঘরে চিনি, দুধ আর সেমাই কেনা হয়ে গেছে। গৃহকর্ত্রী মনে মনে হিসেব করছেন কয়টা মুরগি আর কয় কেজি গরু রান্না করতে হবে। কোন বিছানায় কোন চাদর দেয়া হবে আর টেবিলে নতুন কি ক্লথ বিছানো হবে সেটা ঠিক করতে করতে মা মেয়ের মধ্যে বাদ প্রতিবাদ শুরু হয়ে গেছে।

ছোটরা দাদা বাড়ি অথবা নানা বাড়িতে দারুণ হৈচৈ করছে। পাতা মেহেদি বাটা মেয়েদের নখে বসে পড়তে শুরু করেছে। আর টিউব মেহেদি বার বার নেড়েচেড়ে দেখা হচ্ছে, ঠিকমত মেহেদি বের হচ্ছে কিনা।

ব্যাংক থেকে আনা নতুন একশো টাকার নোটগুলো বের করে ভাগ করে রাখা হচ্ছে। ছোটরা সালাম করতে এলে তো আর খালি হাতে যেতে দেওয়া যায় না! মোবাইল ফোনগুলোতে টাকা ভরে রাখা আছে। ঈদের শুভেচ্ছা জানিয়ে পরিচিতদের এসএমএস করতে যাতে এক মূহুর্তও দেরি না হয়।

যে মানুষ সবাইকে ছেড়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে, হঠাৎ করেই ঘুরেফিরে তাদের কথা মনে পড়তে শুরু করেছে। কি আশ্চর্য, গত ঈদেও মানুষটা আমাদের সাথে আনন্দ করেছে অথচ এ বছর সে কেমন করে হারিয়ে যেতে পারলো সবাইকে ছেড়ে? আর যে পরিবারের সদস্য পড়ে আছে বিদেশ বিভুঁইয়ে, তারা বুকে একধরনের বিশাল শূন্যতা চেপে রেখেছে। আহা, সবাই মিলে যদি একসাথে ঈদ করা যেত- ভাবতে ভাবতেই চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ে দুফোঁটা নোনা জল। তবে কেউ দেখে ফেলার আগেই হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে তাড়াতাড়ি সেটা মুছে ফেলতে হচ্ছে।

সব রকম প্রস্তুতিই শেষ। এবার শুধু চাঁদটা উঠার অপেক্ষা। সকল প্রতীক্ষার অবসান ঘটিয়ে সন্ধ্যার আকাশে দেখা যাবে বাঁকা এক ফালি চাঁদ। আর ঘরে ঘরে বেজে উঠবে চির সবুজ সেই গান, “ও মন রমজানের ঐ রোজার শেষে এলো খুশির ঈদ”। আর ছড়িয়ে পড়বে এক অনাবিল আনন্দ, সারা দেশ মেতে উঠবে খুশির কলকাকলিতে।

সকলকে জানাই ঈদ মুবারাক

8 Replies to “চাঁদটা শুধু ওঠার অপেক্ষা”

    1. অনেক ধন্যবাদ রাহীন। তুই নিশ্চয়ই অনেক রান্না করবি। দাওয়াত দিলি না?

  1. বাহ বাহ!!!!!!!!! তোর লেখা টা পড়ে মনে হচ্ছে আসলেই ঈদ এসে গেসে……… সবাই কে ঈদ মুবারাক!!!!

  2. ফুল ফুটুক না ফুটুক আজ বসন্ত – র মতো আজ খুশীর ঈদ । ঈদ মুবারক ।
    (গুগুল+ এ একেবারেই আনকোরা বলে গোলমাল করে ফেলেছি, হাজার হোক, ফেসবুক পার্টিতো – গুগুল+বনে তালকানা ।)
    ফেঃ বুঃ – এর একটা লিঙ্ক দিচ্ছি একটু দেখতে অনুরোধ করছি – কাজে লাগলেও লাগতে পারে ।
    http://www.facebook.com/emoticon.anime

    1. ধন্যবাদ জেঠু, অনেকদিন পর লিখলেন। অাপনার পরিবারের সবার জন্য রইল ঈদের শুভেচ্ছা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *