আমার বেকুব হওয়ার কাহিনী (পর্ব ২): পাটালিপুত্র শহর ও অশোকের স্তুপা

ভারতবর্ষের ইতিহাসে গ্রীকদের শাসন বেশ উল্লেখযোগ্য। তবে সে আমলের কোন কথা ভারতের কোন অধিবাসীর রের্কড থেকে পাওয়া যায় নাই। আমাদের সেই আমলের কথা আমরা বিদেশিদের কাছ থেকে জানতে পারি। স্যার এজন্য দুঃখ প্রকাশ করেন যে, আমাদের ইতিহাস আমরা সংরক্ষণ করিনি- করেছে বিদেশিরা। জনৈক গ্রীক অ্যাম্বাসেডর মেগাস্থিনিসের বিবরন থেকে সেই আমলের কিছু কথা জানা গেছে। গ্রীকরা এদেশের যে জিনিসটা দেখে বেশি অবাক হত তা হলো, এদেশের মানুষ দিনে মাত্র দুই ঘন্টা কাজ করে আর সারা দিন গল্প করে, গান গায়, খায়দায় আর ঘুমায়। গ্রীকদেশের বৈরী আবহাওয়ার জন্য তাদের মানুষদের স্বভাবতই কর্মঠ ও পরিশ্রমী হতে হয়। কঠোর পরিশ্রম করে তারা একমুঠো ফসলের জন্য। অথচ এদেশে মাটিতে বীজ পড়লেই গাছ হয়ে যায়, নদীতে জাল ফেললে কাঁড়ি কাঁড়ি মাছ পাওয়া যায়, কনকনে শীত নেই, নেই ঝাঁ ঝাঁ গরম, সবসময় আরামদায়ক আবহাওয়া। এখান থেকেই সেই কথাটা এসেছে, ”হায় সেলুকাস, কি বিচিত্র এই দেশ!”। উল্লেখ্য সেলুকাস ছিলেন ভারতবর্ষে আলেক্সান্ডারের গভর্নর। তারা অবাক হওয়ার পাশাপাশি এদেশের অঢেল প্রাচূর্য এবং ঐশ্বর্য দেখে ঈর্ষান্বিত হয়েছিলো।

খ্রিস্টপূর্ব ৩৩০ সালে আলেক্সান্ডারের মৃত্যুর পর চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য অন্যান্য গ্রীক গভর্নরদের পরাজিত করেন। শুধু সেলুকাসের সাথে চুক্তি করা হয় এবং তাকে ২০০ হাতি (খুব সম্ভবত) দেওয়া হয়। সে সময় পাটালিপুত্রে রাজধানী স্থাপন করা হয়। স্যার বড় পর্দায় পাটালিপুত্রের যে ছবি দেখালেন তা দেখে আমার আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেলো। পুরো শহর উঁচু দেওয়াল দিয়ে ঘেরা, ফাঁকে ফাঁকে তীরন্দাজদের জন্য ছোট ছোট খোপ, শহরের চারপাশে চওড়া ও গভীর পরিখা, ৫০০টা টাওয়ার, ৬৪টা গেট – এ এক বিশাল কান্ড! দেওয়াল, দূর্গ, ঘরবাড়ি অর্থাৎ পুরো শহর কাঠের তৈরি ছিলো। ছবিটা দেখে আমার চোয়াল ঝুলে পড়লো। খ্রিস্টপূর্ব ৩০০ সালের দিকে আমাদের এত উন্নত শহর ছিলো! কি অবাক করা কান্ড!!

তাদের শাসন ব্যাবস্থা শুনে আমি আবার বেকুব হয়ে গেলাম। রাজা চন্দ্রগুপ্ত ৩০ জন সদস্য নিয়ে ৬টা বোর্ড তৈরি করেছিলেন। তাদের কাজ ছিলো যথাক্রমে,

  • শিল্পজাত পন্যের উৎপাদন পর্যবেক্ষন করা
  • বিদেশি অর্থাৎ গ্রীকদের সমস্যা সমাধান করা
  • জন্মমৃত্যুর হিসাব রাখা
  • বাজারে পন্যের গুণাগুণ ও ওজন পর্যবেক্ষন করা
  • ভেজাল, বাসি ও পচা জিনিসপত্র যাতে পন্যে মিশানো না হয় তা পর্যবেক্ষন করা
  • পন্যের বিক্রয়মূল্য থেকে ট্যাক্স আদায় করা

৬টা বোর্ডের মধ্যে প্রায় ৪টাই বাজারের সাথে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জড়িত। অত বছর আগেও রাজা অন্যান্য সবকিছু থেকে বাজারকে বেশি প্রাধান্য দিয়েছিলেন। আর এতবছর পরও আমরা ঠিকমত বুঝতে পারছি না বাজার ব্যাবস্থাকে আসলে কতটা গুরুত্ব দেওয়া উচিৎ। মনের অজান্তেই দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো। হায়, আমরা কত অভাগা জাতি!

সাঁচিতে অবস্থিত তোরনসহ একটি স্তুপা

এরপর সম্রাট অশোকের সময় স্থাপত্যের মাধ্যমে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার শুরু হয়। স্তুপা নামক অর্ধগোলাকৃতি এক ধরনের স্থাপনা তৈরি করা হয় যার উচ্চতা ৩৫ ফুট, ব্যাসার্ধ ৭০ ফুট। এর গেটকে বলা হতো ‘তোরন‘ যাকে অনুসরন করে এখন জাপানে বিভিন্ন রকম গেট তৈরি করা হয়। কি আশ্চর্য, জাপানিজ গেটের উৎপত্তি আমাদের ভারতবর্ষে!! হাঁ হয়ে গেলাম যখন শুনলাম ১/২ টা নয়, সম্রাট অশোক সারা ভারতবর্ষে ৮৪০০০টা স্তুপা তৈরি করে গিয়েছিলেন। খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকে অজন্তা ইলোরায় পাহাড় কেটে বানানো বিশেষ ‘রক কাট চেম্বার‘ বানানো হয়েছিলো। আরও ছিলো বৌদ্ধবিহার বা মনেস্ট্রি। সেগুলোর প্ল্যান দেখে থ হয়ে গিয়েছিলাম। কি বুদ্ধি ছিলো মানুষের! এত সুন্দর প্ল্যান করা জিনিস আমাদের এখানে ছিলো ভাবতেই কেমন অদ্ভুত লাগে।

15 Replies to “আমার বেকুব হওয়ার কাহিনী (পর্ব ২): পাটালিপুত্র শহর ও অশোকের স্তুপা”

  1. এই লেখাটাও ভালো লেগেছে । কিন্তু এত ছোট পরিসরে তো বিস্তৃত আলোচনা সম্ভব না ; তাই ইতিহাসের টুকরো টুকরো ঘটনা নিয়ে (তোমার) ভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গীতে লিখলে লেখাগুলো হয়তো আরও মনোগ্রাহী হবে ।
    Wikipedia এবং Google – এ তো এইসব বিষয়ে প্রচুর তথ্য মজুত আছে ।
    “সত্য সেলুকাস , কি বিচিত্র এই দেশ !” এই বিখ্যাত বাক্যটা বিখ্যাত কবি গীতিকার ও নাট্যকার দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের “চন্দ্রগুপ্ত” নাটক থেকে নেওয়া । এই বাক্যবন্ধটা বাংলাভাষায় এখন প্রবাদে পরিনত হয়েছে । আরও জানতে : http://en.wikipedia.org/wiki/Dwijendralal_ray

    1. আরও বিশদ লিখা চান!
      উপরে নিচে তাকিয়ে দেখেন অলরেডি আমার বন্ধুরা খোঁচা মারতে শুরু করে দিয়েছে।
      “সত্য সেলুকাস , কি বিচিত্র এই দেশ !” কথাটা দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের নাটক থেকে নেওয়া তা জানতাম না। আমাকে আসলে স্যার যেভাবে বলেছেন আমি সেভাবেই লিখেছি। আপনার লিংকটার জন্য ধন্যবাদ।

  2. onk kichu jana gelo & jene onk valo laglo.eekhn mne hche school e thkte shomajbiggan subjct ta k obohela kora thk hoi na.bt 2mi thkte chnta nai .asha kori vobishoteo amdr gyan er vander evabei bridhi krte thkba Smile

    1. তুমি ফার্স্ট গার্ল হয়ে যদি সমাজকে অবহেলা করে থাকো তাহলে আমার আর কথা না বলাই ভালো……………..
      লাস্ট লাইনে খোঁচা দিলে কিনা বুঝলাম না।
      প্রথম কোন মেডিকেল স্টুডেন্ট হিসেবে আমার এখানে কমেন্ট করার জন্য অনেক ধন্যবাদ। আশা করি তোমার ছুটি ভালোই কাটছে।

    2. na vai khocha tocha nah shotti jne valo lagse aro in4mation dite thaiko amr to eshb janar otota sujog nai so……………(1st girl er khocha ta na dileo chlto )

      1. 1st girl er khocha ta na dileo chlto

        হিঃ হিঃ……… এটাই তো আমার একমাত্র অস্ত্র , অনিন্দিতা!

  3. সবাইকে বলি – আমার বয়স তোমাদের আড়াই-তিন গুন । তবুও সব বন্ধুদের দুষ্টু-মিষ্টু লেগ পুলিং গুলো দেখে খুব মজা পাচ্ছি । নিজের ফেলে আসা দিনগুলির কথা মনে পড়ছে । নারদ – নারদ !
    চালিয়ে যাও বন্ধুরা ।

  4. তুমি কি অবহিত যে তোমার দাদা দ্বিজেন্দ্রলাল রায় কে রবীন্দ্রনাথ বা জীবনানন্দের থেকেও বেশি পছন্দ করেন ? দাদার সর্বশেষ পোষ্টটা একটু দেখ ; প্রথম মন্তব্যের উত্তরেই আছে ।

    1. আমি জানি। আমার ভাই ”ধন ধান্যে পুষ্পে ভরা……… ”-গানটার বিশাল ফ্যান।
      গানটা সত্যিই দারুন।
      শুনলেই গায়ে কাঁটা দিয়ে ওঠে।

    1. তুই জানিস আসলেই আমরা সিরিয়াস না। না হলে পরীক্ষার দুই দিন আগেও আমরা কেউ সিলেবাস ঠিকমত জানি না………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *