The Mighty INDIA CALLING: CEPT, NID, IIMA -সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দেখার একটি ‘শিক্ষনীয়’ দিন (পর্ব ২৫)

আগেই বলেছিলাম বেজমেন্টের রুমে দিনরাত বোঝা যায় না। তাই আবারও আমাদের উঠতে দেরি হয়ে গেলো। ঘুম থেকে উঠেই তাড়াহুড়া করে রেডি হয়ে বের হয়ে পড়লাম। নাস্তা না খেয়েই ছুটলাম একেবারে ঝড়ের বেগে। সেপ্টের সাথে সময় ঠিকঠাক করে রাখা আছে। দেরি করে গেলে ব্যাপারটা লজ্জার হবে। আমাদের মত অন্য সবাইও ছুটলো ঝড়ের বেগে। আমরা একটা অটো ঠিক করে নিলাম। অটোতে উঠে গুগল ম্যাপটা খুলে বসলাম। মাঝে একবার ড্রাইভারকে রাস্তা বলে দিতে হলো। তারপর ঠিকঠাক এসে পড়লাম সেপ্টে।

গেট দিয়ে ঢুকে দেখলাম আমাদের কেউ নাই। বুঝলাম তাড়াহুড়া করে আমরাই সবার আগে এসে পড়েছি। আমরা গেটের কাছে বসে রইলাম। খুব সুন্দর পরিবেশ। অনেকটা আমাদের মিন্টো রোডের বাড়িগুলোর মতন অবস্থা। চারিদিকে সবুজ গাছ আর হাজার পাখির কিচিরমিচির। সকাল বেলা সবকিছু শান্ত চুপচাপ, এর মধ্যে আমরা কয়েকজন বসে আছি হাফ ওয়ালে আর আমাদের সামনে দিয়ে শিক্ষার্থীরা হেঁটে হেঁটে যেতে লাগলো। আমি এই সুযোগে ব্যাগ থেকে ‘থ্রি মিস্টেক্স অফ মাই লাইফ’ বের করে পড়তে লাগলাম পা ঝুলিয়ে।

ছায়া ঘেরা CEPT ক্যাম্পাস
ছায়া ঘেরা CEPT ক্যাম্পাস

একে একে সবাই আসলে আমরা ভিতরে ঢুকে পড়ি। ঢুকতেই আমরা একটা ক্যাফের সামনে থেমে পড়ি। জাফরের দেখাদেখি ২৫ রুপির বাটার টোস্ট অর্ডার দিলাম। ক্যাফের লোকগুলা এত্ত ঢিলা যে আমার মনে হলো অনন্তকাল অপেক্ষা করার পর আমি একটা বাটার মাখানো টোস্ট পেলাম। আহামরি কিছু না। তবে ২৫ রুপি দামটা বেশি লাগলো।  নাশতা খাওয়া হয়ে গেলে আমরা এদিক সেদিক ঘুরে বেড়াতে থাকি। ওপেন স্পেস গুলা খুব মজার। এখানে সেখানে হুটহাট করে আমরা বসে পড়ি। ওদের স্টুডিওগুলা দেখলাম। একটাতে তো জুরি চলছে। খানিক্ষণ দাঁড়িয়ে জুরি দেখলাম। স্টুডিওগুলা বেশ ইন্টারেক্টিভ। ছিম ছাম সাজানো স্পেসগুলো ঘুরে বেড়াতে আমাদের খুব ভালো লাগছিলো। এখানে ভারতীয়দের সাথে অনেক সাদা চামড়াও পড়ে। এমনকি টিচাররাও অনেকে সাদা চামড়া। আমরা ছোট্ট স্টেশনারি শপ থেকে কেনাকাটা করতে লাগলাম। দোকানটা আমাদের আউয়ালের মত। আর লোকটা কোলকাতার। আমাদের পেয়ে বাংলাতেই কথা বলা শুরু করে দিলো। আমরা কম দামে লিড হোল্ডার, স্কেচ বুক এইসব জিনিসপত্র কিনে নিলাম।

খুব বেশিক্ষন আমরা ওখানে থাকলাম না। সেপ্ট থেকে অটোতে করে রওয়ানা দিলাম NID এর উদ্দেশ্যে। ঢুকে আমরা এদিক সেদিক ঘুরে বেড়ালাম। বিভিন্ন ওয়ার্কশপগুলো দেখলাম। তারপর দেখলাম ডিসপ্লে সেন্টার। সেখানে সব ডিপার্টমেন্টের কাজ ডিস্প্লে করা আছে। অটোমোবাইল ডিপার্টমেন্টের কাজ দেখে আমাদের ইশতিয়াকের মাথা খারাপ হয়ে গেলো। এমনিতেই ওর এইসব গাড়ি বিষয়ক ঝোঁক আছে, তার উপর কাবজাব মার্কা গাড়ির ডিজাইন দেখে ও মাথা নেড়ে বলতে লাগলো, ‘আমি বুয়েট ছেড়ে এইখানে চলে আসবো……’ । এইখানকার স্পেস গুলোও অনেক সুন্দর। একটা খুবই সুন্দর স্পাইরাল সিঁড়ি দেখে আমরা মুগ্ধ হলাম। ঘুরতে ঘুরতেই টের পেলাম বেলা হয়ে গেছে, কিছু খেয়ে নেওয়া প্রয়োজন। খুঁজে খুঁজে ক্যাফেটা বের করলাম। গাছ তলায় অনেকটা সেমি ওপেন জায়গায় কিছু কিছু স্ন্যাক্স বানানো হচ্ছে আর খোলা আকাশের নিচেই চেয়ার টেবিলে বসে অনেকে খেয়েদেয়ে নিচ্ছে। আর ইন্ডোর ক্যাফেতে অনেক লম্বা লাইন। অনেক চিন্তা ভাবনা করে তাড়াতাড়ি করার জন্য আমি.৪০ রুপির ভেজ পিৎজা অর্ডার দিলাম। লোকটা আমার সামনেই ধীরে সুস্থে একটা রুটি বানালো, তার উপর সস দিলো, কিছু পিয়াজ দিলো, তারপর আস্তে আস্তে চিজ কুচি কুচি করে ছড়িয়ে দিলো, সবশেষে জিনিসটা ওভেনে ঢুকিয়ে দিলো। আমি ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে লাগলাম। ওভেনে টিং করে শব্দ হলো তারপর উনি আস্তে ধীরে পিৎজাটা বের করে আনলেন। তারপর আস্তে ধীরে সেটাকে কেটে টুকরা করে প্যাকেট করে আমার হাতে তুলে দিলেন। আমি অবাক হয়ে গেলাম, এত শত শত শিক্ষার্থীকে এই গতিতে খাবার দিয়ে কেমন করে তারা চলতে পারে? আর সবাই এতক্ষণ ধরে ধৈর্য ধরে দাঁড়িয়ে থাকে কেমন করে?

আমি প্যাকেটটা হাতে নিয়েই দৌড় দিলাম। গেটের সামনে সবাই আমার জন্য অপেক্ষা করেছে। গিয়ে দেখি অটো ঠিক করা হয়ে গেছে, আমি আসতেই সবাই ধুপধাপ উঠে পড়লাম। রওয়ানা দিলাম ক্রসওয়ার্ডের উদ্দেশ্যে। আমি অটোতে বসেই গপাগপ কামড় দিয়ে পিৎজাটা খেয়ে নিলাম। অল্পক্ষণের মধ্যেই আমরা ক্রসওয়ার্ড নেমে পড়লাম। উরে বাব্বাহ, বিশাল বইয়ের দুনিয়া! শুধু কি বই, গাদা গাদা স্টেশনারি দিয়ে ভরা জায়গাটা। আমরা সবাই বই ফেলে স্টেশনারির দিকে ছুটলাম। অনেক জিনিস আছে অনেক সুন্দর তবে সেটা সত্যিকারে তেমন কোন কাজে আসবে না। আমরা রঙ্গিন কলমের সেট খুঁজতে লাগলাম। বড়গুলো সব মনে হয় গতকাল যারা এসেছিলো তারা কিনে নিয়ে গেছে, আমরা তেমন কোন সেটই পেলাম না। অনেক কিছুই পছন্দ হচ্ছিলো কিন্তু দাম বেশি। এর মধ্যেও আমরা ট্রলি ঠেলে ঠেলে জিনিসপাতি দেখতে লাগলাম। রঙ পেন্সিল, পেস্টাল, রিডিং লাইট, লিড হোল্ডার, ইরেজার, কালার পেন- এইসব কেনা কাটা করেই আমরা তাড়াহুড়া করে বের হয়ে আসলাম। তাড়াতাড়ি করে আবার অটো ঠিক করে ছুটলাম IIMA এর উদ্দেশ্যে।

লুই কানের করা IIMA এর পুরানো ক্যাম্পাস
লুই কানের করা IIMA এর পুরানো ক্যাম্পাস

আইআইএমে এসে দেখলাম অনেকেই এসে পড়েছে। আমরা অপেক্ষা করতে লাগলাম বাকিদের জন্য। নিশাতকে দেখলাম ‘ক্যান্ডেল’ নামের একটা দোকান থেকে সুন্দর সুন্দর সব স্টেশনারি কিনেছে। দেখে মনে হলো, ক্রসওয়ার্ড না গিয়ে ক্যান্ডেল গেলেই মনে হয় ভালো হতো! সবাই চলে আসলে আমরা একসাথে ভিতরে ঢুকতে লাগলাম। আমাদের সাথে এই ইন্সটিটিউটের এক জন লোককে দেওয়া হলো সব ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য। বিল্ডিংটা দূর থেকে দেখেই সবাই বুঝে ফেললাম, লুই কানের নকশা করা! আমাদের সংসদ ভবনের লাল ইটের কমপ্লেক্সগুলোর মত এই বিল্ডিংও বিশাল বিশাল আর্চ দেওয়া একেকটা লাল ইটের কম্পোজিশন। প্রায় একই সময় করা নাকি এই দুইটা ডিজাইন! আমরা বিশাল ক্যাম্পাস ঘুরে ফিরে দেখতে লাগলাম। কোন এক হিন্দি সিনেমা নাকি এখানে শুটিং করা হয়েছিলো। যারা যারা সেই সিনেমাটি দেখেছে তারা একেকটা জায়গা দেখে চিনতে পারলো আর আমাদের কাছে বলতে লাগলো দৃশ্যগুলোর কথা। অনেকক্ষণ হেঁটে হেঁটে আমরা পুরানো ক্যাম্পাস দেখা শেষ করে গেলাম নতুন ক্যাম্পাসের দিকে। নতুনটা তো আরও সুন্দর! কনক্রিট আর গ্লাস দিয়ে বানানো নতুন ক্যাম্পাসের সাথে পুরানোটার তেমন কোন মিল নাই বললেই চলে। দেখে কেমন যেন মনে হয় যে রফিক আজমের ডিজাইন! এই বিকাল বেলায় এখানে কোন ক্লাস-টাস নাই। তাই ছিমছাম জনমানব শূন্য ক্যাম্পাসে আমরা ঘুরে ফিরে বেড়াতে লাগলাম। সুন্দর গাছপালা, সবুজ ঘাস, সাথে খোলামেলা চকচকে ঝকঝকে হলগুলো দেখতে দেখতে আমাদের বুক থেকে দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসলো, হায়- এরকম এক দুইটা ক্যাম্পাস যদি আমাদের দেশে থাকতো!  পুরো ক্যাম্পাস ঘুরেফিরে আমরা ফুরফুরা মেজাজে বের হয়ে আসলাম।

IIMA এর নতুন ক্যাম্পাস
চার্লস কোরেয়ার করা IIMA এর নতুন ক্যাম্পাস

এখান থেকে বের হয়ে দেখলাম অবনী আর তানভীর মিল ওনার্স এসোসিয়েশনে যাবে। আমিও ওদের সাথে জুটে গেলাম। তারপর আমরা একটা অটো নিয়ে রওয়ানা দিলাম আগের দিনের আশ্রম রোডে মিল ওনার্সের বিল্ডিঙের দিকে। পৌঁছাতেই দুঃসংবাদ পেলাম, দারোয়ান বললো অফিস বন্ধ- তাই ভিতরে ঢুকা যাবে না। আমরা তো মহা মুসিবতে পড়লাম। পরে অবনী আর তানভীর অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে দারোয়ানকে রাজি করিয়ে ভিতরে ঢুকার ব্যবস্থা করলো। পুরো বিল্ডিং বন্ধ এর মধ্যে আমরা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠলাম। লুই কানের নকশা করা বিল্ডিংটার এক পাশ মূলত কালো আর হলুদ আর অন্য পাশে অনেক রকম রঙ। শেষ বিকালের লালচে রোদে হলুদ একটা দেওয়ালের সামনে দাঁড়িয়ে আমরা ছবি তুললাম। আমরা ঠিক যখন বের হতে যাবো তখনই দেখলাম মায়িশা, নোভা ওরাও গেট দিয়ে ভিতরে ঢুকছে। ওদের সাথে দেখা করেই আমরা বের হয়ে পড়লাম। আশ্রম রোডেই আমরা ‘এগ ফাস্ট রেস্টুরেন্ট’ নামের একটা খাবার দোকানে থামলাম, কারণ তানভীর আর অবনী লাঞ্চ করে নাই। দোকানটার ইন্টেরিয়র খুবই সুন্দর। আর শুধুমাত্র ডিমের তৈরি খাবারই পাওয়া যায়। ওরা মজা করে খেলো। এরপর আমরা যাবো কাঙ্কারিয়া লেক।

আমরা একটা অটো ঠিক করলাম। অটোওয়ালা ভালো মানুষের মত বললো, ‘ মিটারে যা ভাড়া আসবে তাই দিবেন’। অটোতে যে মিটার আছে সেটা আমরা খেয়ালই করি নাই। ঠিক আছে, মিটারে যেতে যেহেতু রাজি হয়েছে, আমরা খুশি মনে উঠে পড়লাম। সূর্য ডুবতে ডুবতেই আমরা পৌঁছে গেলাম লেকের গেটে। অটোওয়ালা আমাদের ভাড়া জানালো ১৫০ রুপি। আমাদের আক্কেল গুড়ুম হয়ে গেলো শুনে। ১৫০ রুপি মানে! দশ পনের মিনিট লাগলো পৌঁছাতে আর ভাড়া ১৫০ রুপি কেমন করে হয়? অটো ওয়ালা বিরক্ত হয়ে আমাদের মিটারের রিডিং দেখিয়ে কি সব চার্ট থেকে কিলোমিটারের সাথে রুপি গুন দিয়ে হিসাব করে দেখাতে লাগলো যে ভাড়া ঠিকই আছে। তানভীর সব বুঝে গম্ভীর হয়ে বললো, ‘ হিসাব ঠিক আছে, অন্য কোনভাবে কারসাজি করেছে’। আমি গ্যাঞ্জামে জড়াতে চাইলাম না। অবনীকে বললাম দিয়ে দিতে যা ভাড়া চেয়েছে। কিন্তু অবনী বেঁকে বসলো, ‘মগের মুল্লুক নাকি’। অবনী ছুটে গেলো লেকের গেটে দাঁড়ানো দারোয়ানের কাছে। তাদের কাছে গিয়ে অবনী সব খুলে বললো। লোকগুলো হিন্দীতে বললো, ‘আপনারা ওঠার সময় মিটারে রিডিং জিরো দেখে উঠেন নাই?’ আমরা বললাম যে আমরা তো প্যাচঘোচ বুঝি নাই যে ভাড়ায় দুই নম্বরী করা যাবে। লোকগুলো তখন অটোওয়ালার সাথে কথা বললো। প্রথমে অটোওয়ালা বেশ শক্ত ছিলো। কিন্তু দারোওয়ানগুলো যখন ঝাড়ি মেরে উঠলো তখন সে মিনমিন করতে লাগলো। শেষমেশ ৭০ রুপিতে দফা রফা হলো। ভাড়া মিটিয়ে দিতেই ব্যাটা চোখের পলকে চলে গেলো। দারোয়ানগুলো আমাদের বললো যে সাধারনত কেউ মিটারে যেতে রাজি হয় না, আমরা বিদেশি টের পেয়েই ব্যাটা মামদোবাজী করতে চেয়েছিলো।  আমাদেরকে সাবধান করে দিলো পরেরবার যেন মিটারে জিরো দেখে অটোতে উঠি। ঝামেলা চুকে যাওয়ার পর আমরা আমরা যখন বললাম যে লেক দেখতে চাই তখন দারোয়ান আমাদেরকে জানালো যে সন্ধ্যার সময় লেক বন্ধ হয়ে যায়, রাতে ভিতরে কাউকে ঢুকতে দেওয়া হয় না। আমরা অনেক বোঝালাম যে একবার দেখে যেতে চাই লেকটা। কিন্তু তারা কিছুতেই রাজি হলো না। আমরা শেষ পর্যন্ত গেটের ফাঁক দিয়ে তাকিয়ে লেকটা দেখলাম। গোল একটা লেক, মনে হলো আসেপাশের পার্কটা বেশ সুন্দর। শেষমেষ কি আর করা, আমরা আরও কিছুদূর হেঁটে আবার অটো নিলাম। এবার খুব সাবধানে কথাবার্তা বলে ভাড়া ঠিক করে নিলাম। এই অটোওয়ালা ঠিকভাবেই আমাদের হোটেলের কাছাকাছি নামিয়ে দিলো। বাকিটা পথ আমরা হেঁটেই চলে গেলাম।

হোটেলে ফিরেই সব ঠিকমত গুছিয়ে নিলাম। রাতের খাবার খেয়ে নেওয়া দরকার, কিন্তু আর কাউকে পাচ্ছিলাম না পার্টনার হিসেবে। শেষ পর্যন্ত একাই চলে গেলাম এক তলার সেই খাবার রেস্টুরেন্টে। দেখলাম একটা টেবিলে জুবায়ের বসে খাচ্ছে। সেই টেবিলে বসেই অর্ডার দিলাম টমেটু মাসালা আর পুরি। এত সুস্বাদু ছিলো খাবারটা যে আমি গোগ্রাসে খেতে লাগলাম। কিছুক্ষণ পর জুবায়ের খেয়ে উঠে চলে গেলো। আমি একা একা বসেই চেটেপুটে খেতে লাগলাম। খাওয়া শেষ করে বিল দিয়ে বের হয়ে আসতে যাবো, এমন সময় দেখলাম অনেকে ছোট ছোট প্যাকেটে পানি কিনছে। দুই রুপি করে একেকটা প্যাকেট। অনেকটা সাবানের প্যাকেটের সমান সাইজ। দেখে মজা লাগলো।

সব গুছিয়ে আমরা বেজমেন্ট থেকে আমাদের মালপত্র উপরে উঠাতে লাগলাম। টের পেলাম আমার সানগ্লাসটা খুঁজে পাচ্ছি না। মন খারাপ হয়ে গেলো। একটা সানগ্লাস অলরেডি হারিয়েছি, এই দুই নম্বরটাও যদি হারায় তাহলে ……। এমন সময় নিশাত এসে সানগ্লাসটা দিয়ে বললো, ‘আমাদের রুমে ফেলে গিয়েছিস’। মনে মনে বলে উঠলাম, ‘আলহামদুলিল্লাহ’। আমরা হোটেলের সামনে ছেচল্লিশ জন দুনিয়ার লাগেজ নিয়ে অপেক্ষা করছি গোয়েলের জন্য। কিন্তু গোয়েল আর আসে না। ওদিকে রাস্তাঘাট, হোটেল আর আশেপাশের সব লোকজন আমাদের দিকে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো, এত মানুষ- এত লাগেজ……। অবশেষে গোয়েল আসলো। আমরা ঝাঁপাঝাপি করে উঠে বসলাম। কমিটির লোকজন ধৈর্য নিয়ে লাগেজ ওঠা তদারকি করতে লাগলো। প্রায় ১০টার দিকে আমরা রওয়ানা দিলাম। এবারে আমাদের গন্তব্য আওরঙ্গবাদ।

আমি চুপচাপ ভাবতে লাগলাম আহমেদাবাদের কথা। এখানকার রান্না খুবই মজার আর অ-নে-ক সস্তা। বিআরটিএস বাস সার্ভিসটা মেইন হলেও সব সময় বাসে করে সব জায়গায় যাওয়া যায় না। অটোই ভরসা কিন্তু অটোওয়ালাগুলো সবচেয়ে খারাপ। এই কয় দিনের মধ্যে সবচেয়ে খারাপ অটোওয়ালাদের সাথে দেখা হওয়ার অভিজ্ঞতা হয়েছে আমার। তবে সাধারন মানুষগুলো ভালোই। বেশভূষা আমাদের দেশের মানুষদের মতন। সব মিলিয়ে মনে হলো শুধু খাওয়াদাওয়ার জন্যই আরেকবার আহমেদাবাদ আসলে মন্দ হয় না।

সারা দিনের ঘোরাঘুরির পর ক্লান্ত হয়ে আমি চোখ বন্ধ করলাম। বিশাল জার্নি করতে হবে আমাদের। প্রায় চৌদ্দ ঘন্টা। এখন চোখ বন্ধ করে বিশ্রাম নেওয়া দরকার। সলিড বিশ্রাম।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *