পরদিন সকালে ঘুম ভাংলো মজুমদারের কান্নাকাটিতে। মোবাইলটা হারিয়ে যাওয়ার শোকটা এখনও ভুলতে পারছে না ও। তাড়াতাড়ি করে রেডি হয়ে বের হয়ে পড়লাম। আমাদের সবার ইচ্ছা ওল্ড গোয়ায় একবার যাওয়ার। আমি, রুবাইদা, মিম আর অন্তরা মিলে হাঁটা দিলাম মেইন রাস্তার দিকে। ডক্টর আলফনসো রোডের মোড়ে বেশ কয়েকটা ট্যাক্সি দাঁড়িয়ে ছিলো। আমাদের দেখে এগিয়ে আসলো। ওল্ড গোয়ায় যাবো শুনে সবাই খুব আগ্রহ দেখালো। কিন্তু দাম চাইলো আকাশ্চুম্বী। সব চেয়ে কম যেটা চাইলো সেটাই ছিলো ১০০০ রুপি। ট্যাক্সি ভাড়া শুনে আর সময় হিসাব করে আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে ওল্ড গোয়ায় আর যাওয়া যাবে না। এতে রুবাইদার মন খারাপ হলো সবচেয়ে বেশি। আমরা আবার হেটে হেটে হোটেলের দিকে যেতে লাগলাম।
নাশতা করার জন্য কোন চিন্তা ভাবনা না করেই ভিন্সিস প্লেসে ঢুকে আগের দিনের ব্রেড অমলেট আর সাথে সি ফুড সুপ অর্ডার দিয়ে দিলাম। পেট ভরে নাশতাটাই এত মজা করে খেলাম যে মনে হলো হাঁটাহাঁটি করা প্রয়োজন। ওদিকে সবাইকে দেখছিলাম প্যারাসেইলিং এ যাওয়ার কথাবার্তা বলছে। আমরাও যোগ দিলাম এতে। খাওয়াদাওয়া শেষে বের হয়ে পড়লাম আমরা। প্রথমে গেলাম কাছের কালাঙ্গুটে বিচে। সেখান থেকে হাঁটা ধরলাম বাগা বিচের উদ্দেশ্যে। বাগা বিচে পৌঁছানোর আগেই শুভ, রাজিব, নিলয়কে দেখলাম এক দোকানের সাথে কন্ট্রাক্ট করতে প্যারাসেইলিং এর জন্য। নরমালটা ৬০০ রুপি আর Deep Sea নিলে ৮০০ রুপি। আমরা সবাই নরমালটা নিলাম ৬০০ রুপি দিয়ে। এমনিতেই সাঁতার পারি না, তার উপর Deep Sea, কোন দরকার নাই বাবা!
আমি, নিশাত, পৃথ্বী, রিন্তু, মজুমদার, রুবাইদা, নিলয়, রাজিব, তুষার, শুভ আমরা সবাই মিলে এক সাথে লাইন ধরলাম বোটের জন্য। সেখানে আমাদের বাংলা কথা বলতে দেখে বোটের একজন লোক এগিয়ে আসলো। জানালো তার বাড়ি বরিশাল। এখানেই প্যারাসেইলিংয়ের কাজ করে। বাড়ি যাওয়া হয় না অনেক বছর। আমাদের দেখে বললো, ‘দেশের মানুষ পেয়ে খুব ভালো লাগছে’। আমাদের কয়েকজনকে উনি আশ্বস্ত করলেন যে গোয়ার নাবিকরা অনেক দক্ষ। তাই যত বিপদজনক রাইডই হোক না কেন পর্যটকদের কোন বিপদ হওয়ার আশংকা খুবই কম। একটা স্পিড বোট এসে থামলো। আমরা টকাটক উঠে পড়লাম সেই বোটে। বোট আমাদের নিয়ে ছুটলো সৈকত থেকে দূরে।
বড় বড় ঢেউয়ের ঝাকুনি খেয়ে আমরা গিয়ে থামলাম আরেকটা বোটের পাশে। এই বোটটা বড়। আমরা সবাই গিয়ে উঠলাম সেই বোটে। আমাদের নামিয়ে দিয়ে স্পিড বোট চলে গেলো। আমাদের সবাইকে লাইফ জ্যাকেট পরতে বলা হলো। আমরা সবাই গলা ঢুকিয়ে দিলাম লাইফ জ্যাকেটের ফোকড়ে। আমাদের সামনেই দুজন লোক মিলে রঙ্গিন প্যারাসুট বের করলো। তারপর সেটা কপিকলের সাথে ঠিকমত বাঁধাছাদা করতে লাগলো। তারপর ছেড়ে দিতেই ফুলে ফেঁপে সেটা একটা বিশাল রঙ্গিন বেলুনের আকার ধারন করলো। সব দড়িটড়ি ঠিক ঠাকমত চেক করে লোকগুলো তারপর আমাদের দিকে তাকালো। সবার আগে নিলয় এগিয়ে গেলো। নিলয়কে কপিকলের কোথায় জানি আটকে দিলো। যেই বোটটাকে চালাতে লাগলো আর ওমনি নিলয় সাঁ করে উড়ে গেলো। ঠিক উড়ে চলে গেলো না, দড়ি দিয়ে বাঁধা অবস্থায় বোটের উপর ভাসতে লাগলো। আমরা নিচ থেকে হাঁ করে দেখতে লাগলাম। ঠিক কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই নিলয় আবার নেমে আসলো। তারপর ঠিক একইভাবে পৃথ্বী, নিশাত আর মজুমদার উড়ে গেলো কয়েক সেকেন্ডের জন্য। আমরা নিজেরা একবার ‘ডিপ সি’র কথা বলাবলি করছিলাম, তখন মোটা লোকটা জোরে জোরে আমাদের আশ্বস্ত করতে লাগলো, ‘ কোয়ি রিস্ক নেহি, বিল্কুল সেফ হ্যায়, সুইমিং কি কোয়ি জরুরাত নেহি, বহত আচ্ছা হ্যায়’। রাজিবের পালা আসতেই রাজিব ২০০ রুপি হাতে নিয়ে চালক সেই মোটা লোকটার হাতে গুঁজে দিয়ে বললো, ‘ডিপ সি’। লোকটাও মাথা নেড়ে রাজি হয়ে গেলো। তারপর আমরা দেখতে লাগলাম, একইভাবে রাজিবও উড়ে গেলো। উড়ে যেতেই লাগলো অনেক দূর। তারপর প্রচন্ড বেগে ছুটতে ছুটতে আস্তে আস্তে নিচে নামতে লাগলো। নামতে নামতে অর্ধেক ওর ডুবে গেলো পানিতে। তারপর আবার কিছুটা উঠে গেলো উপরে। তারপর একইভাবে আবার নামতে লাগলো পানিতে। ওই অবস্থায় রাজিবকে দেখে আমরা যারা বাকি ছিলাম সবাই পকেট থেকে ২০০ রুপি বের করে হাতে নিয়ে বসে থাকলাম। কেউ আর নরমালটা করতে রাজি না, সবাই ডিপ সি করতে চায়। আমি মনে মনে হাসলাম, এটা তাহলে Deep Sea না হয়ে হবে Dip Sea।
অর্ধেক মানুষের হয়ে গেলে আগের সেই স্পিড বোট নতুন প্যাসেঞ্জার নিয়ে আসলো। যাদের যাদের হয়ে গেছে তারা নেমে গেলো, আর নতুন প্যাসেঞ্জাররা আমাদের সাথে বোটে উঠে আসলো। এক দল ছেলেমেয়ে, আমাদের সমানই হবে হয়তো বয়স। আর আমরাও একেকজনকে পানিতে নাকানি চুবানি খেতে দেখছিলাম আনন্দ নিয়ে। আমার পালা যখন এলো আমি উঠে দাঁড়ালাম। কপিকলটার সামনে দাঁড়াতেই কয়েকটা জয়েন্ট লক করে আমাকে একবার জিজ্ঞেস করলো, ‘রেডি?’ । আমি মাথা নাড়তেই প্যারাসুটটার প্রচন্ড টানে আমি উঠে গেলাম উপরে। প্রায় চল্লিশ থেকে পঞ্চাশ ফিট উপরে উঠে যাওয়ার পর আমার মনে হলো আমার পায়ের নিচে সারা পৃথিবীটা স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। অবাক হয়ে নিচে তাকিয়ে দেখতে লাগলাম নিশ্চুপ, শান্ত বিশাল নীলচে সবুজ রঙের সমুদ্রকে। অনেক দূরে একপাশে দেখা যাচ্ছে বিচের দিগন্ত রেখা। আর অন্য সব পাশেই শুধুই সমুদ্র। দূরে দূরে আরও কয়েকটা বোট থেকে আমার মতন আরও কয়েকজন আকাশে ভেসে আছে, তাদের ছায়া দেখতে পাচ্ছিলাম। টলটলে কাঁচের মতন পানি। সেখানে দেখা যাচ্ছে ছোট্ট বোটটাকে যার পাশে আমার প্যারাসুট আর আমার ছায়া পড়েছে বিশাল জায়গা জুড়ে। আমি সাবধানে পা নাড়িয়ে দেখলাম, বিশাল ছায়াটার বিশাল বিশাল পা দুটো নড়ছে। মনের মধ্যে এক অদ্ভূত আনন্দের অনুভূতি হলো। একবার মনে হলো চিৎকার করে সবাইকে জানিয়ে দেই মনের আনন্দটার কথা। কিন্তু কাকে বলবো? কে শুনবে? এই উচ্চতায় তো আমি একা। এই নিস্তব্ধ পৃথিবীটার দিকে যেন আমি একা তাকিয়ে আছি। কতক্ষন হবে- কয়েক সেকেন্ড? বড়জোড় এক মিনিট? কিন্তু আমার কাছে মনে হয়েছিলো যেন পৃথিবীটা থেমে গেছে কয়েক মুহুর্তের জন্য।
একটু পরেই টান অনুভব করলাম। আমাকে নিয়ে প্যারাসুট নিচে নামতে লাগলো। সোজা পানির উপরে। প্রচন্ড বেগে ছুটতে ছুটতে আমি পানি স্পর্শ করলাম। আস্তে আস্তে আমার শরীরের প্রায় অর্ধেক পানিতে ডুবে গেলো। সেই অবস্থায় স্পিড বোটের সাথে পাল্লা দিয়ে আমি প্রায় সমান তালে পানির মধ্যে দিয়ে ছুটতে লাগলাম। ব্যাপারটা যে কত মজার সেটা যে না করবে তাকে কোনদিনই বোঝানো সম্ভব না। আমাকে একবার পানির উপর তুলে কয়েক সেকেন্ড পর আবার ডুবানো হলো। আমি সেই অবস্থায় দাঁত বের করে হাসতে লাগলাম। নিশাত সবার প্যারাসেইলিংয়ের দৃশ্য ভিডিও করেছে। আমার সেই দাঁত বের করা হাসির দৃশ্যো ওর ক্যামেরায় বন্দি হয়ে রইলো। এরপর আমাকে সোজা উপরে উঠিয়ে আবার টেনে বোটে নিয়ে নামালো। আমি নামতেই লোকগুলো আমার বাঁধন খুলে দিলো। সব মিলিয়ে হয় তো আড়াই মিনিট হবে। আড়াই মিনিটের অভিজ্ঞতায় আমি ফুরফুরে আনন্দের অনুভূতি নিয়ে বসে পড়লাম অন্য সবার সাথে। আমার পর তুষার বাকি ছিলো। ওকে রাখলো সবচেয়ে বেশিক্ষণ। ওকে ডুবালো সব মিলিয়ে চারবার। একবার তো বলতে গেলে পুরাই ডুবিয়ে ফেললো!
আমাদের সবার হয়ে গেলে আমরা স্পিড বোটের জন্য অপেক্ষা করতে লাগলাম। ততক্ষণে অন্য যেই দলটা এসেছে তাদেরকে উঠানো হতে লাগলো। ওরাও আমাদের মত নরমাল টিকেট কেটেছে। প্রথম একজন কয়েক সেকেন্ড ভেসে থাকার পর ওদের একজন চ্যাঁচামেচি করতে লাগলো যে আমাদের বেশি সময় রাখা হয়েছে আর ওদের কমসময় রাখা হচ্ছে। স্টেয়ারিং হুইলে থাকা মোটা লোকটা তখন রেগে গেলো। সেই লোকটাও পালটা চিৎকার করে বলতে লাগলো যে আমরা ‘ডিপ সি’র টিকেট কেটে এনেছিলাম তাই আমাদের বেশি সময় রাখা হয়েছে। ওরাও তখন ডিপ সির জন্য বাড়তি টাকা দিতে চাইলো কিন্তু লোকটা তাদের সরাসরি না করে দিলো। সাফ জানিয়ে দিলো, টিকেট ছাড়া কাউকেই বাড়তি কিছু দেওয়া হবে না। ওরা কিছু বলতে না পেরে মুখ গোঁজ করে বসে রইলো। আর আমরা একজন আরেকজনের দিকে দৃষ্টি বিনিময় করে মিটিমিটি হাসতে লাগলাম। আমাদের সময় উনিই সবচেয়ে বেশি উৎসাহ দিয়েছিলেন, আর এখন উনিই কড়াভাবে না করে দিলেন!
স্পিড বোট আসলে আমরা উঠে পড়লাম। বোট আমাদের তীরে নিয়ে নামিয়ে দিলো। আমাদের অনেকে অন্যান্য রাইডের প্রতি আগ্রহ প্রকাশ করলো। জাফররা মনে হয় ব্যানানা রাইডে উঠার প্রিপারেশন নিলো। আমার আর কোন কিছুর প্রতি আকর্ষণ ছিলো না। আমরা কয়েকজন হেঁটে হেঁটে কালাঙ্গুটের দিকে যেতে লাগলাম। আমি আর রিন্তু পাশাপাশি হাঁটছিলাম। ফস করে কে যেন পাশ থেকে বলে উঠলো, ‘আয়সি কাপড়ে পেহেনকার ইয়াহা কোয়ি আতাহে?’। আমি শুনি নাই, কিন্তু রিন্তু শুনে ফেললো। এই বিচের মধ্যে হিজাব পরা লোকজন হয়তো খুব একটা দেখা যায় না, তাই আমাদের দেখে মন্তব্যকারীর মত অনেকেই হয়তো বেশ অবাক হয়েছে। আমি আর রিন্তু একজন অন্যজনের দিকে তাকিয়ে হাসলাম।
আজকেই আমাদের গোয়ায় শেষদিন। বিকালেই গোয়া ছেড়ে চলে যাবো। তাই শেষবারের মত কালাঙ্গুটে বিচে এসে পানির উপর বসলাম আমি আর তমা। মিম, অন্তরা আর রিন্তু হোটেলে ফিরে গেলো। ওদের গোসল করে বের হতে সময় লাগবে। তাই এই মুহুর্তে আমার হোটেলে ফিরে গিয়ে লাভ নাই। রুবাইদা, আমি আর তমা বেশ আয়েশ করেই পানিতে বসলাম। তারপর আমি আর তমা গল্প করতে লাগলাম। লোনা পানির ঢেউয়ের ঝাপ্টায় আমাদের গল্পে মাঝে মাঝে ছেদ পড়তে লাগলো। আমরা তাল সামলে আবার ঠিক হয়ে বসে গল্প করতে লাগলাম। প্যারাসেইলিং করবো বলে মোবাইল কিংবা ঘড়ি কোনটাই নিয়ে বের হই নাই। তাই কেউ ফোন করারও নাই, বা ঘড়িতে সময় দেখারও উপায় নাই। দুপুরের গনগনে সূর্যের তাপকে আমরা পাত্তাই দিলাম না। বিশাল সমুদ্রের তীরে বসে সব চিন্তা বাদ দিয়ে লোনা পানির ঢেউয়ে বসে বসে নিশ্চিন্ত মনে গল্প করতে লাগলাম আমরা। যখন মনে হলো অনেক সময় পার হয়ে গেছে, তখন আমরা তিনজন উঠে পড়লাম। শেষবারের মত বিদায় জানালাম ভুমধ্যসাগরকে। বিচ ছেড়ে হাঁটতে শুরু করলাম হোটেলের দিকে।
রুমে পৌঁছে দেখি ওদের গোসল প্রায় শেষ। আমি ঢুকে পড়লাম গোসল করার জন্য। ততক্ষণে বাথরুমে বালির এক বিশাল পাহাড় তৈরি হয়েছে। যতই পানিঢালা হোক না কেন সেই বালি কিছুতেই সরে না। আমার গোসল শেষে জামাকাপড় ধোয়ার পর সেই পাহাড় আরও বড় হয়ে গেলো। গোসল শেষে বের হয়ে দেখি রিন্তু চলে গেছে। ওদের সাথে ক্যাফে মোকায় যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু কি আর করা, আমার দেরি হয়ে গেছে। আমি তাড়াতাড়ি তমাদের বাড়ির দিকে হাঁটা ধরলাম। তমা, রিজভী আর আফরা বের হয়ে আসলো। ওরাও ক্যাফে মোকাতেই যাবে। আমি ওদের সাথে জুটে গেলাম। কিন্তু কমিটির লোকজন বার বার বলতে লাগলো ঠিক ঠিক চারটার সময় আমরা রওয়ানা দিয়ে দিবো। যে করেই হোক তার আগেই এসে বসে থাকতে হবে। আমরা বের হয়ে অটো ঠিক করতে গেলাম। কিন্তু অটোওয়ালা রাজি হলো না। আমরাও সময় হিসাব করে দেখলাম গিয়ে ফেরত আসা সম্ভব হবে না। তাই কি আর করা, মোকাতে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম আমরা। দুপুরে খাওয়ার জন্য ঢুকলাম ‘বৃন্দাবন হোটেল’ এ।
বেশ বড় খোলামেলা হোটেল। আমরা বসার সাথেসাথেই মেনু নিয়ে আসলো একজন লোক। আমি অর্ডার দিলাম প্রন হাক্কা নুডুলস আর ব্যানানা শেক। কিছুক্ষনের মধ্যেই বড় বড় চিংড়ি দেওয়া মজাদার নুডুলস এসে হাজির হলো। আমরা সবাই গোগ্রাসে খাওয়া শুরু করলাম। সবার খাওয়ার পরিমান এত বেশি ছিলো যে খেয়ে কিছুতেই শেষ করা গেলো না। খাওয়াদাওয়া শেষ করে আমি আর তমা বের হয়ে পড়লাম বাদাম কেনার জন্য। তমা বাদাম কিনতে চায়, কিন্তু কয়েকটা দোকানে বাদামের অস্বাভাবিক দাম দেখে ও না কেনার সিদ্ধান্ত নিলো। একটা আইসক্রিমওয়ালার কাছ থেকে ‘ভাদিলালাল’ এর একটা চকোবার কিনলো তমা। আমি খেয়াল করলাম লোকটা নিজেই আইস্ক্রিমের প্যাকেটটা ছিড়ে আইসক্রিম বের করে তমার হাতে দিলো। পরে তমা খেতে খেতে বললো আইস্ক্রিমটা একটু অন্যরকম। আমি বললাম- এটা দুই নম্বুরি ভাদিলাল। কারণ আমাদের প্যাকেট দেখতে দেয় নাই। ব্যাটা নিজেই ফেলে দিয়েছে। তমাও মনে হয় ব্যাপারটা বুঝতে পারলো। দুঃখি দুঃখি মনে তমা আইসক্রিম খেতে লাগলো।
হোটেলে ফেরার পথেই রুবাইদার সাথে দেখা। ও ১০০-১৫০ রুপি দিয়ে স্কার্ফ কিনেছে। আমাকে দেখানোর জন্য ঐ দোকানে নিয়ে গেলো ও। আমার তেমন পছন্দ হলো না। আমরা সেই দোকান থেকে বের হয়ে হোটেলের দিকে যেতে লাগলাম। হোটেলের সামনে গিয়ে দেখি সারি সারি বড় বড় মাইক্রো দাঁড়ানো। এইগুলোতে করে আমরা রেলস্টেশন যাবো। সেগুলোতে আমাদের লোকজন উঠে মালপত্র টানাটানি করে ঢুকাচ্ছে। কি সর্বনাশ, সবাই গাড়িতে উঠে গেছে! আমি আর রুবাইদা দৌড় দিলাম। দৌড়াতে দৌড়াতে সিড়ি দিয়ে দোতলায় উঠে বারান্দায় শুকাতে দেওয়া কাপড়গুলো একটানে নিয়ে লাগেজে ভরে লাগেজ টানতে টানতে নেমে পড়লাম। আবার সেই সিড়ি দিয়ে লাগেজ নামিয়ে কাঁচা রাস্তার উপর দিয়ে টেনে টেনে মাইক্রোর সামনে এসে দাঁড়ালাম। এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখি সব গাড়িই ভর্তি। কোনটাই খালি নাই। আমি রুবাইদা আর তুষার আমরা তিনজন লাগেজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছি রাস্তায়। কোন গাড়িতে উঠতে পারছি না। শুনলাম আরও একটা গাড়ি নাকি আসবে। সেটাতে আমরা উঠবো।
ওই দিকে জুবায়ের একটা গাড়ির সামনে বসে জানালো তুষারকে কোনমতে উঠে পড়ার জন্য সেই গাড়িতে। কিন্তু ভিতর থেকে সবাই বলতে লাগলো আমাকে উঠে পড়তে। জুবায়ে বললো, ‘লাগেজের জায়গা হবে না কিন্তু’। রুবাইদা আর তুষার আমাকে বললো লাগেজ ছাড়াই উঠে পড়তে। আমি কোন মতে উঠে পড়লাম। ভেতরে এক অদ্ভূত দৃশ্য! পুরো গাড়িটা মানুষ আর লাগেজে এমনভাবে পরিপূর্ণ যে কোন নড়াচড়ার জায়গা নেই। ভেতরে ঢুকতেও আমাকে বেশ বেগ পেতে হলো। সৌভাগ্যক্রমে আমি অন্তরার পাশে এক চিলতে বসার জায়গা পেয়ে গেলাম। আমি বসার পর মনে হলো, আমার লাগেজটাও মনে হয় কোনমতে এটে যাবে। আমি সেকথা বলতেই বাইরে থেকে তুষার আমার লাগেজটা ঠেলে ভিতরে ঢুকিয়ে দিলো। কিন্তু ভারি লাগেজটা আমি ধরে রাখতে পারছিলাম না। হাত থেকে ফস্কে যাচ্ছিলো। এগিয়ে এলো রিন্তু, ফাহাদ, ইশতিয়াক আর শুভ। সবাই মিলে হ্যাঁচকা টান দিয়ে হাতবদল করতে করতে লাগেজটাকে একদম পিছে পাঠিয়ে দিলো। এক চিলতে জায়গায় কোলের উপর ব্যাকপ্যাকটাকে নিয়েই বসলাম। অ্যাট লিস্ট গাড়িতে উঠার জায়গা পেয়েছি, এটাই বা কম কিসে?
বাইরে থেকে আমাদের হোটেলের একজন লোক উসখুস করতে লাগলো, কেন আমরা রওয়ানা দিচ্ছি না। উনিই বললো আরেকটা গাড়ি এসে যাবে, এখন যেই গাড়িগুলো আছে সেইগুলো রওয়ানা দিয়ে দেওয়া দরকার। যেতে নাকি অনেক সময় লাগবে। ওনার তাড়াহুড়া দেখে কমিটি নির্দেশ দিলো রওয়ানা দেওয়ার। একটা একটা করে গাড়ি চলতে শুরু করলো। আমরা দেখলাম, সৌরভ, তুষার আর রুবাইদা বেশ কিছু মালপত্র নিয়ে রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। ওরা অপেক্ষা করতে লাগলো ওদের গাড়ির জন্য। আর ওদের ফেলেই আমরা রওয়ানা দিলাম।
আমাদের ড্রাইভার জিজ্ঞেস করলো আমাদের ট্রেন কয়টায়। সাড়ে ছয়টায় ট্রেন শুনে ড্রাইভার অবাক হয়ে হিন্দিতে বললো, ‘এত দেরিতে কেন রওয়ানা দিয়েছেন? আপনারা তো পৌঁছাতে পারবেন না’। হোটেলের লোক আমাদেরকে স্টেশন এক দেড় ঘন্টার পথ বলেছে- এই কথা শুনে সে বললো, ‘সে তো অন্যসব দিনের জন্য, কিন্তু আজকে তো ভ্যালেন্টাইন ডে- আজকের জন্য তো আলাদা হিসাব’। এই বলে ড্রাইভার বেশ তাড়াহুড়া করে চালাতে লাগলো। জুবায়ের বারবার ওনাকে আস্তে ধীরে চালাতে বললো। কিন্তু ঊনার মুখে একটাই কথা, ‘আপনারা তো পৌঁছাতে পারবেন না’। বারবার একই কথা বলা আমরা একটু ভয় পেয়ে গেলাম।
মোটামুটি ফাঁকা রাস্তা দিয়েই আমাদের গাড়ি চলতে লাগলো। একটা হাইওয়েতে উঠে টের পেলাম ‘ভ্যালেন্টিন ডে’র মাহাত্ম। পুরো হাইওয়ে জ্যাম। বিশাল হাইওয়ে জুড়ে হাজার হাজার গাড়ি থমকে বসে আছে। কেউ নড়াচড়া করছে না। শুনলাম সামনে নাকি কি এক কার্নিভাল আছে ভ্যালেন্টাইন ডে উপলক্ষে- সেই জন্য এত জ্যাম। বেশ খানিক্ষণ জ্যামে বসে থেকে আমরা ছটফট করতে লাগলাম। ঘড়ির কাঁটা এগিয়ে যেতে লাগলো, কিন্তু আমরা থেমেই রইলাম। গাড়ির পিছনে ততক্ষণে নানা আলোচনা শুরু হয়ে গেছে। শুভ বলছে যে ট্রেন যখন মিস করবোই তখন আর সামনে গিয়ে লাভ কি, ব্যাক করে গোয়াতে ফিরে গেলেই হয়। আবার রিন্তু বলতে লাগলো, ট্রেন পাই আর না পাই, স্টেশন পর্যন্ত যেতে তো আর অসুবিধা নাই। ইশতিয়াক বলতে লাগলো, অত রাত করে স্টেশনে পৌঁছে ব্যাক করার সুযোগ পাবো না, তারচেয়ে সময় থাকতে থাকতে ব্যাক করে ফেলা ভালো। শুভ ওইদিকে বসে বসে ‘প্ল্যান বি’ চিন্তা করতে লাগলো। ট্যুর প্ল্যান থেকে সাউথের পার্টটা বাদ দিয়ে কাশ্মির কিংবা দার্জিলিং অ্যাড করলে কেমন হয় সেই নিয়ে জোর আলোচনা হতে লাগলো। সব শুনে আমাদের মনে হতে থাকে, আজকের দিনে দারুণ একটা ঘটনা ঘটবে। ট্যুর প্ল্যানটা বোধহয় এইবার লন্ডভন্ড হয়ে গেলো!
ওদের প্ল্যান বি মোটামুটি ফাইনাল হয়ে গেলো, রিন্তু আর ফাহাদ একটু পর পর ম্যাঁও ম্যাঁও ডাকতে লাগলো, জুবায়ের গাড়ি থেকে নেমে আশেপাশে ঘুরে বেড়াতে লাগলো- কিন্তু আমরা আর জ্যাম ছেড়ে বের হতে পারলাম না। মাঝে মাঝে একটু আধটু নড়াচড়া হয়, কিন্তু জ্যাম থেকে আর বের হতে পারি না। এরমধ্যেই মোটামুটি ৬টা বেজে গেলো। আমরা যখন শিওর যে পৌঁছানো সম্ভব নয়, তখন জুবায়ের জানালো ট্রেন ডিলে করেছে এক ঘন্টা। আমরা খুশি হয়ে গেলাম, কিন্তু ড্রাইভার আগের মতই বলতে লাগলো, ‘লাভ নাই, ট্রেন মিস করবেন’। এক সময় আমাদের কথার সব স্টক শেষ হয়ে গেলো। আমরা ক্লান্ত হয়ে চুপ হয়ে গেলাম। সূর্য ডুবে গেলো। আমাদের মাইক্রো একটু একটু করে এগিয়ে যেতে লাগলো। রাত হয়ে গেলে আমাদের গাড়ি একটু ফাঁকা রাস্তা পেয়ে গেলো। ড্রাইভার প্রাণপণে গাড়ি চালাতে লাগলো।
আমরা যখন মারগাও স্টেশনে পৌঁছাই তখন আরও দুইটা গাড়ি এসে পড়েছে। আমরা তিন গাড়ির লোকজন দ্রুত গতিতে মালপত্র নামাতে লাগলাম। লাগেজটা হাতে নিয়ে দৌড়াতে দৌড়াতে স্টেশনে ঢুকে পড়লাম আমরা। হাঁপাতে হাঁপাতে যখন ওয়েটিং রুমে পৌঁছালাম তখন বাজে রাত পৌঁনে আটটা। সেখানে ঢুকে খবর পেলাম ট্রেন আরও এক দফা ডিলে হয়ে আসার টাইম হয়েছে রাত পৌনে দশটা। আমরা বুকের ভিতর আটকে থাকা নিশ্বাস ছাড়লাম। যাক বাবা, বাঁচা গেলো! আগের মত আমরা আমাদের মালপত্র বাঁধাছাঁদা করে বিশাল স্তুপ করে রাখলাম। আমার মোবাইলে রিচার্জ করা দরকার। আমি আর চিং খুঁজতে বের হলাম রিচার্জ করার দোকান।
অদ্ভূত ব্যাপার হলো রিচার্জ খুঁজতে খুঁজতে আমরা একটা ওভারব্রিজ পার হয়ে স্টেশন থেকে বের হয়ে পড়লাম। তাও কোন দোকান খুঁজে পেলাম না। এত্ত বড় স্টেশনে কোন মোবাইল রিচার্জের দোকান নাই, কি আজব! খুঁজতে খুঁজতে এক সময় যখন বুঝলাম কোন লাভ নাই, তখন আমি আর চিং ব্যাক করলাম। আমাদের দুজনের পায়েই স্পঞ্জের স্যান্ডেল- সেটা নিয়ে আমরা বেশ হাসাহাসি করলাম। স্টেশনের ভিতরে একটা দোকান থেকে আমি পানি আর বিশাল একটা স্যান্ডউইচ কিনে নিলাম। আপাতত এটাই আমার রাতের খাবার। এইসব নিয়ে আবার ওয়েটিং রুমে ফেরত গেলাম। সেখানে বসে খাওয়াদাওয়া করে নিলাম। তারপর গেলাম ‘সুলভ শৌচালয়’ এ। একেবারে দাঁতটাত মেজে ফ্রেশ হয়ে বের হলাম।
আগেরবারের মত এবার আর আমরা ভুল করলাম না। সাড়ে নয়টা বাজতেই আমরা ব্যাগপত্র নিয়ে প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দাঁড়ালাম। আমি, উর্মি, চিং আর নিলয় ছাড়া বাকি ৪২ জনের সিট পড়েছে এক বগিতে। আমরা চারজন শুধু আলাদা বগিতে। ওরা ৪২ জন ওদের বগির নম্বর লিখা প্ল্যাটফর্মে গিয়ে দাঁড়ালো। ট্রেন নাকি থামবে কয়েক মিনিটের জন্য। এরমধ্যে সব মালপত্র নিয়ে এতজন মানুষের ট্রেনে ওঠা একটা বিশাল চ্যালেঞ্জ। তাই ওরা বুদ্ধি করে ২১ জনের দুইটা দলে ভাগ হয়ে গেলো। একদল ঢুকবে ডান পাশের দরজা দিয়ে, আরেকদল ঢুকবে বামপাশের দরজা দিয়ে। নিজেদের মধ্যে অনেক প্ল্যান প্রোগ্রামও হয়ে যাচ্ছিলো যে কিভাবে কে আগে উঠবে আর কিভাবে মালপত্র আর অন্যরা উঠবে। আর এদিকে আমরা চারজন খানিক দূরে প্ল্যাটফর্ম ১৮তে দাঁড়িয়ে আছি। আমরা খুব বেশি মানুষজন না, তাই আমাদের চিন্তাও কম। আমরা অধীর আগ্রহে ট্রেনের জন্য দাঁড়িয়ে রইলাম। উল্টাপাশের প্ল্যাটফর্মে একটা ট্রেন এসে থামলো। আমরা বাকিদের দিকে তাকাতে লাগলাম, ঐটা আমাদের ট্রেন নয়তো? দূর থেকে ওরাও ইশারা দিলো, না-ঐটা না। আমরা আবার অপেক্ষা করতে লাগলাম। এরমধ্যে একটা অদ্ভূত ট্রেন দেখলাম। এটা মালগাড়ি। তবে কন্টেনারের বদলে ট্রাক টানছে। মাল বোঝাই ট্রাকগুলোর ভিতরে ড্রাইভার আর হেল্পার বসে আছে। ট্রেনের ইঞ্জিন দিয়ে ট্রাক টেনে নেওয়ার ঘটনাটা আমি কখনও দেখি নাই। আমরা অবাক হয়ে দেখতে লাগলাম।
পৌনে দশটা বেজে পার হয়ে গেলো অথচ ট্রেন আসছে না দেখে আমরা চিন্তায় পড়ে গেলাম- কোন ভুল করলাম না তো?। এদিকে পুরো প্ল্যাট ফর্মে আমরা ছাড়া তেমন আর কোন মানুষজন নাই। এর মধ্যে কতগুলো কুকুর ঘাউঘাউ করতে লাগলো। একজন লম্বা মতন লোক কুকুরগুলোর থেকে দূরে সরে আমাদের কাছে এসে দাঁড়ালো। উনি উর্মিকে জিজ্ঞেস করতে লাগলো যে আমরা কই যাবো, কোথা থেকে এসেছে- এইসব। অন্য সবার মত আমাদের বিশদ কাহিনী শুনে লোকটাও বেশ অবাক হলো। লোকটা আমাদের নিশ্চিত করলো যে আমাদের ট্রেন এই জায়গাতেই আসবে। লোকটা নিজেকে একজন ইন্ডিয়ান আর্মি অফিসার হিসেবে পরিচয় দিলো। উনার কথাশুনে আমরা কিছুটা ভরসা পেলাম যে, ট্রেন আমাদের মিস হয় নাই!
অবশেষে রাত সাড়ে ১০টার দিকে ট্রেন আসলো। আমরা স্নায়ু টানটান করে দাঁড়িয়ে রইলাম। যেই ট্রেনটা থামলো সবার আগে আমি উঠে গেলাম দরজা দিয়ে। নিলয় নিচ থেকে টপাটপ আমাদের লাগেজগুলো তুলে দিতে লাগলো। আমরা সেগুলো টেনেটেনে ভিতরে ঢুকাতে লাগলাম। আমাদের তিনটা বড় লাগেজ ওঠানো হয়ে গেলে নিলয় উঠে পড়লো। সব মিলিয়ে মাত্র দশ থেকে পনের সেকেন্ড সময় লাগলো। আমরা একজন আরেকজনের দিকে তাকিয়ে হেসে ফেললাম। নিজেরদের কর্মে নিজেরাই মুগ্ধ হয়ে গেলাম। তারপর মালপত্র ঠেলে বগির ভিতরে ঢুকলাম। আমাদের সিট নম্বরগুলো পেয়ে গেলাম সহজেই। আমাদের খোপে একপাশে সবার উপরে নিলয়, তারপরেরটায় উর্মি আর সবচেয়ে নিচেরটায় আমি। আমার ঠিক উল্টো পাশে চিং। আমাদের বিশাল বিশাল লাগেজ ঢোকাতেই দুই সিটের মাঝখানের জায়গাটা ভরে গেলো। আগে তাও সিটের তলায় লাগেজ ঢুকেছিলো। এখন সব ফুলে ফেঁপে বড় হয়ে যাওয়ায় আমারটা ছাড়া আর কারওটা সিটের নিচে গেলো না। আমার লাগেজ আর সবার ব্যাকপ্যাকগুলো ঢুকানো হলো সিটের নিচে। নিলয়ের হ্যাভারস্যাক, উর্মি আর চিঙয়ের লাগেজটা রাখা হলো লাইন ধরে দুইসিটের মাঝখানে। আমাদের সব কিছু গোছগাছ করতে করতে ট্রেন ছেড়ে দিলো। একটু গুছিয়ে নিয়ে আমরা ফোন দিয়ে অন্যদের খবর নিলাম। ওরাও অন্য বগি থেকে আমাদের খবর নিলো আমরা ঠিক মত উঠেছি কিনা!
আমি একবার অন্য বগিতে সবার সাথে দেখা করে আসতে চাইলাম। কিন্তু কিছুদূর গিয়ে টের পাই মাঝে এক বগির দরজা সিল করে দেওয়া। তাই অন্যদের সাথে দেখা না করেই ফিরে আসি। এদিকে চিঙয়ের উপরের সিটটা একজন চমৎকার আংকেলের। উনি ব্যাগ গোছগাছ করতে আমাদের সাহায্য করলেন। ভদ্রলোক সাউথ ইন্ডিয়ান। হিন্দি বোঝেন না। অল্পবিস্তর ইংরেজি জানেন। তাই দিয়ে আমাদের সাথে কথা বলতে লাগলেন। আমাদের কাহিনী শুনে বেশ মজা পেলেন। চিং ওনাকে ইশারায় বললো যে ও রাতের খাবার খেয়েই মাঝের বাংকারটা মেলে দিবে। উনিও হাসিমুখে সায় দিলেন। কিন্তু কয়েক মিনিট পর ঘুমের চোটে ঝিমাতে লাগলেন। চিং তাড়াতাড়ি খেয়ে ওনার বাঙ্কারটা মেলে দিতেই উনি ঘুমিয়ে পড়লেন। আমি, নিলয় আর উর্মি কিছুক্ষণ কথা বার্তা বলে যার যার জায়গায় শুয়ে পড়লাম। শুয়ে পড়তেই ঘুম চলে আসলো। টের পেলাম প্রচন্ড গতিতে আমাদের নিয়ে ছুটে চলছে এই ট্রেন।