একটি প্রাচীন উপদেশ

বিশাল মরু প্রান্তর। বিশাল সিট্রনটা দাপিয়ে বেড়াচ্ছে চারদিকে। সিট্রনের যান্ত্রিক চিৎকারে আকাশ বাতাস কেঁপে উঠছে। রয়া একটা বড় পাথরের চাঁইয়ের দিকে হামাগুড়ি দিয়ে এগিয়ে যেতে লাগলো। হাতের এটমিক ব্লাস্টারটাই একমাত্র সম্বল। জ্বালানী খুব বেশি নেই, হিসেব করে ব্যবহার করতে হবে- ভাবলো সে। সিট্রন নামক বিশাল রোবটটা যথেষ্ট দূর্বল হয়ে পড়েছে। আর বেশিক্ষণ সময় লাগবে না। রয়া এটমিক রকেটটা রিলোড করে প্রস্তুত হয়ে নিলো। সোজা বের হয়ে সিট্রনের পিছনে দাঁড়ালো। ”তোমার খেলা শেষ, সিট্রন”- বলে যেই চিৎকার দিয়ে রকেটটা ছাড়তে যাবে তখনই রয়ার কানের কাছে বিপবিপ করে সিগনাল বাজতে লাগলো। ততক্ষণে সিট্রন তার দিকে তাক করে ফেলেছে লেজার গান। যেকোন সময়ে রয়ার দিকে ছুটে আসবে একঝাঁক লেজার, ছিন্নভিন্ন করে দিবে তাকে। বাঁচার আর কোন আশা নাই দেখে বিরক্ত হয়ে মাথা থেকে হেডপিসটা খুলে ফেললো সে। মুহূর্তেই মরুপ্রান্তর, বিশাল আকারের রোবট সিট্রন, সিট্রনের যান্ত্রিক ঝনঝনানি হাওয়ায় মিলিয়ে গেলো। বরং সেখানে ফুটে উঠলো একটা ঘরের ছবি। রয়া এখন তার ঘরের ভেতর।

একপাশের হলোগ্রাফিক ফোন থেকে এখনও ভেসে আসছে বিপ বিপ শব্দ। রয়া বিরক্ত হওয়ার ভঙ্গিতে হেডপিসটা একপাশে রেখে ফোন অন করে দিলো। ঘরের মাঝে তারই সমবয়সী একটা মেয়ের ভীষণ উত্তেজিত হলোগ্রাফিক ছবি ফুটে উঠলো।

”রয়া, তুই এক্ষুণি আমার বাসায় চলে আয়।”

”দিবিন, তুই জানিস তুই আমার কি ক্ষতিটা করেছিস? আমি আজকেও তোর কারণে একটুর জন্য সিট্রনকে মারতে পারলাম না। আমি প্রায় মেরেই ফেলেছিলাম………. তুই এমন সময় কল দিলি……….আমি একটু অন্যমনস্ক হয়ে গেলাম। তাতেই ব্যাটা আমার দিকে লেজার গান তাক করে ফেললো। ধুৎ, আবার সব শুরু থেকে করতে হবে” -রয়া বেশ দুঃখের সাথেই কথাগুলো বললো।

”তুই আছিস সারাদিন তোর থ্রিডি গেম নিয়ে। তোর এই বদমাশ সিট্রনকে আজকে না মারতে পারলে কালকে মারবি, এটা আর এমন কি ব্যাপার?-” দিবিন তার কথা শেষ করতে পারলো না।

রয়া চিৎকার দিয়ে বললো ” তুই জানিস, আমি তিনদিন ধরে চেষ্টা করছি-”

” চুপ থাক। কোন মেয়েকে আমি এভাবে গেম খেলতে দেখি নাই-”

” আমি মেয়ে হয়ে এভাবে গেম খেললে তোর অসুবিধা কি?”

দিবিন এবার নরম হয়ে যায়,” আহ-হা, আমি কি সে কথা বলেছি? আমি তো শুধু তোকে আমার বাসায় আসতে বলার জন্য কল দিচ্ছিলাম। তুই যে এভাবে সিট্রনের সাথে মরণপণ যুদ্ধ করতে থাকবি এবং আমার কারনে হেরে যাবি এত সব ব্যাপার আমি কেমন করে জানবো? ”

রয়াও এবার শান্ত হয়ে যায়। বেস্টফ্রেন্ডের উপর সে বেশিক্ষণ রাগ করে থাকতে পারে না। স্বাভাবিক গলায় বলে,” আচ্ছা বল, তোর বাসায় আমার কেন আসতে হবে?”

দারুণ উত্তেজিত হয়ে উঠে দিবিন, ” বাবা, দারুণ একটা জিনিস বাসায় নিয়ে এসেছে।”

” কি জিনিস?”

” বইয়ের পাতা!”

” বইয়ের পাতা? (একমুহূর্ত চিন্তা করে) জাদুঘরে বই দেখেছি। এটা নিশ্চয়ই সেটারই একটা পাতলা অংশ হবে। কিন্তু এটাতে তুই এত উত্তেজিত হচ্ছিস কেন?”

দিবিন একটু আশাহত হয়, ” আমি কখনও এত কাছ থেকে বই দেখি নাই। আর তাছাড়া এই পাতাটার অবস্থা ভালো। চেষ্টা করলে পড়া যেতে পারে। আমি ভাবলাম তুই আর আমি মিলে যদি এটার অর্থ জানতে পারি-”

”তাহলে তো আমাকে আসতেই হয়। তুই দাঁড়া, আমি মাকে বলে এক্ষুণি তোর বাসায় আসছি।”

দিবিন খুশি হয়ে যায়, ” তাড়াতাড়ি আয়” বলে সে লাইন কেটে দেয়।

রয়া হালকা দীর্ঘশ্বাস ফেলে। দিবিনের বাবা প্রত্নতত্ত্ব ও পুরাকীর্তির জগতে বেশ বিখ্যাত মানুষ। সেই সুবাদে দিবিনের বাসায় প্রায়ই আজব আজব জিনিস আসে। সেসব নিয়ে রয়ার বিন্দুমাত্র আগ্রহ না থাকলেও দিবিনের কারনে সে এমন ভাব করে যেন সে খুবই আনন্দ পাচ্ছে। রয়া খুব দ্রুত ওর মায়ের সাথে যোগাযোগ করে।

‘হ্যালো মা।”

”কি ব্যাপার, কোন সমস্যা?” মা কপাল কুঁচকে তাকালেন।

”না, কোন সমস্যা না। আমি একটু দিবিনদের বাসায় যেতে চাচ্ছিলাম আর কি।”

”কেন? ওর বাবা আবার কি বিচিত্র জিনিস এনেছে?” মা একটা বাঁকা হাসি দেন।

” আহ- মা, থাক না।” দিবিনও হাসি চেপে রাখার চেষ্টা করে।

” গেলে যাও। তবে সাথে নেক্সিকে নিয়ে যাও।”

রয়ার মুখটা কালো হয়ে গেল, ” দিবিনের বাসা একদম কাছে। রাইডারে চড়ে গেলে সাত মিনিট সময় লাগে। এখানে নেক্সিকে নিয়ে যাওয়ার দরকার কি? আর তাছাড়া নেক্সি সিকিউরিটি রোবট নয়, হাউস কিপার রোবট-”

”তুমি কি চাও আমি তোমার বাবাকে বলে তোমার জন্য সিকিউরিটি রোবট ঠিক করি?” মা শক্ত গলায় কথাগুলো বললেন।

রয়া মুখ গোঁজ করে উত্তর দিলো, ” না।”

” তাহলে চলে যাও। আর রাইডারটা সাবধানে চালাবে।”

দশ মিনিটের মধ্যে দিবিনের বাসার সামনে রাইডারটা থামলো। রাইডার থেকে রয়ার পিছু পিছু নেক্সিকে নামতে দেখে দিবিন খুব খুশি হলো।

”যাক বাবা, তুই বুদ্ধি করে নেক্সিকে নিয়ে এসেছিস। আমি তো নেক্সির কথা বলতেই ভুলে গিয়েছি।”

”নেক্সিকে দিয়ে তুই কি করবি?” রয়া একটু অবাক হয়।

” বা-রে, নেক্সি না থাকলে ঐ কাগজটা পড়বে কে? তুই?”

”কেন, তোদের জ্ঞানী রোবট লরাক্স কই?”

”লরাক্সের সেন্ট্রাল সিস্টেম ড্যামেজ হয়েছে। ওর সিস্টেম নতুন করে লোড করার জন্য ওকে রোবট ফার্মে পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে।”

”কিন্তু লরাক্স ছিলো ইতিহাস, পুরাতত্ত্ব, ভাষা এইসব বিষয়ে এক্সপার্ট। আর নেক্সি হচ্ছে সাধারণ রোবট। ও কি পারবে এই প্রাচীনকালের লিখা পড়তে?”

”যা পারবে তাতেই চলবে। তোকে এত চিন্তা করতে হবে না।”

দিবিন খুব সাবধানে ট্রান্সপারেন্ট ম্যাটার দিয়ে সিল করা বইয়ের পাতাটা এনে দিলো। রয়া দেখলো ময়লা একটা ছাই রঙের জিনিস, এটাকে কাগজ বলে। কাগজটার চারপাশ ছেঁড়া থাকলেও মাঝখানটা মোটামুটি অক্ষত আছে। কিছু হিজিবিজি লিখা আছে, তবে রয়া কিংবা দিবিনের পক্ষে তা পড়া সম্ভব নয়।

নেক্সি তার রোবোটিক আই দিয়ে কাগজটা থ্রিডি স্ক্যান করে যান্ত্রিক কন্ঠে বলে উঠলো, ” প্রাচীন সভ্যতার একটি দূর্লভ নমুনা-”

রয়া তাকে থামিয়ে দিয়ে বললো, ”আমরা তোমার কাছে এসব জানতে চাই নাই। তুমি শুধু আমাদের লিখাটা পড়ে শোনাও।”

”কিন্তু মহামান্য রয়া, আমি এ বিষয়ে অভিজ্ঞ নই। আমার সেন্ট্রাল সিস্টেমে ভাষা, অনুবাদ বিষয়ক কোন প্রোগ্রাম নাই।”

রয়া দাঁতে দাঁত ঘষে বললো,”তোমার সিস্টেমে কি কি প্রোগ্রাম আছে তা আমি জানি। তারপরও আমি তোমাকে এটা পড়তে বলছি। তুমি আর কোন কথা না বলে দয়া করে পড়া শুরু কর।”

নেক্সি আর কোন কথা বাড়ালো না। যান্ত্রিক কন্ঠে পড়তে শুরু করলো,”সহজ ব্যাকরণ ও রচনাশৈলী।২৫৮”

” কি? কি বললে?” দুজনেই উৎসুক হয়ে উঠলো, ” ব্যাকরণ, রচনাশৈলী মানে কি? আর ২৫৮ ই বা কি?”

নেক্সি যান্ত্রিক কন্ঠে গড়গড় করে বলতে লাগলো, ” ব্যাকরণ মানে ভাষার নিয়ম কানুন। রচনা মানে কোন বিষয় সম্পর্কে তথ্যসমৃদ্ধ প্রতিবেদন। শৈলী মানে সৌন্দর্যের শিল্প। আর ২৫৮ একটি সংখ্যা।”

”বাপ রে বাপ।” রয়া আড়চোখে দিবিনের দিকে তাকায়।

দিবিন খুব আগ্রহ নিয়ে বলল, ” চমৎকার, নেক্সি। দারুণ হচ্ছে। পড়ে যাও।”

নেক্সি আবার পড়তে লাগলো,” পরীক্ষার পূর্বরাত্রি। এখানে পরীক্ষা মানে নিরীক্ষণ। পূর্ব মানে পূর্ব দিক। রাত্রি মানে রাত।”

দিবিন মাথা চুলকে বললো, ” আমার না মনে হচ্ছে পরীক্ষা মানে আমরা যে পরীক্ষা দেই সেই পরীক্ষা।”

রয়া বললো, ”অসম্ভব। সেই আমলে থ্রিডি স্ক্রিন ছিলো না। কেন্দ্রীয় ডাটাবেস ছিলো না। এসব ছাড়া পরীক্ষা দেওয়া সম্ভব নয়। আর তাছাড়া-”

”তাছাড়া পূর্ব রাত্রি মানে কি? পূর্ব দিকে যে রাত উঠে- সেটা?” দিবিন জিজ্ঞেস করে।

” পূর্ব দিকে যে রাত উঠে- এটা মানে কি? পূর্ব দিকে কোন রাত উঠে নাকি?”

” না মানে পূর্ব দিকে সূর্য তো উঠে-”

”সূর্য আর রাত এক জিনিস হলো নাকি?”

” তা ঠিক। তবে-”

”তুই থাম। আমার মনে হয় শুধু নেক্সিকে বাকি অংশটুকু পড়তে বলা উচিৎ। কারণ এভাবে অর্থ শুনে আলোচনা করতে থাকলে সারা দিন লেগে যাবে।”

দিবিনও রয়ার কথায় সায় দেয়। নেক্সি আবারও পড়তে শুরু করে।

” এই কান ধরিতেছি, আর কোনদিন ক্লাস পালাইয়া সিনেমা দেখিতে যাইবো না। আর কোনদিন ক্লাসের সময় পিছনের সারিতে বসিয়া ঘুমাইয়া লইবো না। আর কোনদিন বাড়ির কাজ না করিয়া ক্লাসে যাইবো না-”

”দাঁড়াও, দাঁড়াও।” দুইজন একসাথে বলে উঠলো।

”দেখেছিস! আমি বলেছিলাম না আমাদের মতন পরীক্ষার কথা হচ্ছে।” দিবিন হাতে কিল দিয়ে ওঠে।

”হুম, সেইরকমই তো মনে হচ্ছে। বিশেষ করে যখন ‘ক্লাস’ শব্দটা আছে। তবে যাই বলিস, ভাষাটা দারুণ কঠিন। কিছুই বুঝতে পারছি না।”

” আমি মনে হয় একটু একটু বুঝতে পারছি। ‘কান ধরা’ ছিলো এক ধরনের শাস্তি। এখানে নিশ্চয়ই কাউকে শাস্তি দেওয়ার কথা বলা হচ্ছে যে ‘ক্লাস পালাইয়া সিনেমা দেখিতে’ যেতো। যদিও একথাটার কোন অর্থ আমি বুঝলাম না। সে নিশ্চয় বেশি ঘুমাতো আর ‘বাড়িতে’ মানে ঘরে কোন কাজ করতো না।”

রয়া একটু অবাক হয়ে বললো, ”ঘরে আবার কি কাজ করবে?”

”যেমন ধর রোবটের কাজ। তখন তো আর রোবট ছিলো না, সব কাজ মানুষকেই করতে হত।”

”আহ -হা রে। রোবটের কাজ না করার জন্য মানুষকে শাস্তি? বেশি অমানবিক লাগছে।” রয়া মানুষটার কথাচিন্তা করে দুঃখ পায়।

”………………দুই চোখে রাজ্যের ঘুম নামিতেছে। কখন বাকি অধ্যায়গুলো পড়িব সে উপায় খুঁজিতেছি। আহ, এমন নিশুতি রাত বোধহয় জীবনে আর দেখি নাই। বাড়ির সকলেই ঘুমাইয়া পড়িয়াছে। এই নিস্তব্ধ জগৎ সংসারে বোধ করি আমি ছাড়া দ্বিতীয় জনপ্রানী নাই। যদি সারা বছর পড়ায় হেলা না করিতাম, তবে অন্যদের মত আমিও আজ আরাম করিয়া ঘুমাইতে পারিতাম।”

”থামো, থামো।” রয়া দিবিনের দিকে তাকিয়ে বললো, ”কিছু বুঝলি?”

দিবিন মাথা চুলকে বললো,” ইয়ে- মানে এই লাইনগুলো একটু বেশি কঠিন। বুঝতে পারছি না।”

”আমার মনে হয় কোন একজন মানুষের খুব দুঃখের কথা বলা হয়েছে। শব্দগুলোর অর্থ ঠিক বুঝতে পারি নাই। তবে ‘ঘুম’ কথাটা বারবার এসেছে। মনে হচ্ছে সেই শাস্তি পাওয়া লোকটার কোন কারণে ঘুমাতে খুব অসুবিধা হচ্ছে।”

”হতে পারে।” দিবিন ইতস্তত করে বলে,” কিন্তু ঘুমাতে কি অসুবিধা হতে পারে? একজন মানুষ চাইলেই তো ঘুমাতে পারে।”

রয়া হঠাৎ বলে ওঠে,”আমার মনে হয় এটাও ওই লোকটার শাস্তি।”

”কোনটা?”

”ঘুমাতে না দেওয়াটাই শাস্তি।”

”ছিঃ এরকম শাস্তি হয় নাকি? মানুষ তো খুবই নিষ্ঠুর ছিলো। এটা তো চরম অমানবিক শাস্তি। তাও আবার শুধু ঘরের কাজ না করার জন্য- ”

”ঠিকই বলেছিস। কি জানি, রোবট না থাকলে আমরাও হয়তো এরকম শাস্তি পেতাম।” রয়া জীবনে প্রথম বার নেক্সির দিকে কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে তাকালো।

”…………আর চোখ খোলা রাখিতে পারিতেছি না। নরম তুলতুলে বালিশটা যেন হাতছানি দিয়া ডাকিতেছে। আধা ঘন্টা ঘুমাইয়া লই। পরে উঠিয়া বাকি অধ্যায়গুলো পড়িয়া লইবো। কিন্তু সিলেবাসের এক চতুর্থাংশও যে শেষ হয় নাই। মাঝরাত্রি প্রায় হইয়া পড়িয়াছে। বাকি অধ্যায়গুলো কখন পড়িবো …………”

দিবিন চিৎকার দিয়ে বলে, ”বালিশ কি জিনিস আমি জানি!”

”কি জিনিস?”

”বালিশ এমন একটা জিনিস যেটা মাথায় দিয়ে আগেকার দিনের মানুষরা ঘুমাতো। চারকোনা, নরম একটা জিনিস। ওদের তো স্লিপিং সেট ছিলো না, তাই আরাম করে ঘুমানোর জন্য মাথার নিচে এই জিনিসটা রেখে ঘুমাতো।”

”ঘুরে ফিরে আবারও ঘুমের ব্যাপারস্যাপার চলে আসছে। আরেকটা কথা দেখেছিস, অনেককিছু ‘পড়া’-র কথা হচ্ছে। কি পড়ছে বল তো?”

” কি জানি? একবার মনে হলো রাত পড়ে যাচ্ছে। আরেকবার মনে হলো ‘অধ্যায়’ নামের কোন জিনিস পড়ে যাচ্ছে।”

” হি হি হি” রয়া হেসে ফেলে, ” রাত কি একটা এটমিক ব্লাস্টার যে হাত থেকে পড়ে যাবে?”

দিবিন গম্ভীর মুখে বলে, ” হাসিস না রয়া। এটা বেশ সিরিয়াস ব্যাপার। প্রাচীনকালে কিভাবে একটা মানুষকে শাস্তি দেওয়া হত সেই ব্যাপারটা আমরা জানতে পারছি। শাস্তিটা খুব সিরিয়াস কিন্তু কারণটা খুব সাধারণ।”

”………যাহা হউক, পাস করিতে না পারলে মুখ দেখানোর জো রইবে না। কিন্তু যাহা পড়িলাম তাহাতে পাস করিব এ কথা প্রশ্ন কর্তাও বলিতে পারিবে না। সকলে নতুন ক্লাসে উঠিবে আর আমি আবারও এখানেই বসিয়া রইবো এইকথা ভাবিতেই চোখে জল চলিয়া আসিলো। আজ সময়ের কাজ সময়ে না করার চরম শিক্ষা হাড়ে হাড়ে টের পাইতেছি। একথা যদি আগে বুঝিতাম তাহা হইলে আজ এই বিপদে পড়িতে হইতো না।”

নেক্সির পড়া শেষ হতেই দুজনে একজন আরেকজনের দিকে তাকালো।

” চোখে জল আসা মানে কাঁদা না?” রয়া জিজ্ঞেস করে।

”তাই তো জানতাম, তুইও জানিস দেখছি।”

রয়া দাঁতে দাঁত ঘষে বললো, ”বদমাশগুলো লোকটাকে এমন শাস্তি দিয়েছে যে লোকটার চোখে পানি চলে এসেছে।”

” মনে হয় শারীরিক নির্যাতনও করেছে।” দিবিন বলে।

” কি করে বুঝলি?”

”শুনিস নাই ‘হাড়ে হাড়ে’ কথাটা? আমার তো মনে হয় পিটিয়ে হাড় ভেঙ্গে দেওয়ার কথা বলা হয়েছে।”

রয়া শিউরে উঠে, ” কি সাংঘাতিক!” এক মূহুর্ত চুপ থেকে সে বলে,” তোর বাসায় এসেছিলাম এমন কিছু দেখতে যাতে মন ভালো হয়ে যায়। কিন্তু কি বাজে জিনিস শুনলাম, প্রাচীনকালে মানুষ এতটা বর্বর ছিলো- ভাবতে গা শিরশির করে উঠছে।”

”আগে আমাদের কখনও এমন হয় নাই। সবসময় আমরা দারুন দারুন তথ্য জানতে পেরেছি। কিন্তু শুধু এইবার-”

”কেন হয়েছে জানিস?”

”কেন?”

”কারণ সবসময় জিনিসগুলোর ব্যাখ্যা দেয় তোদের রোবট লরাক্স। শুধুমাত্র এইবার আমরা নিজেরা জিনিসটা বুঝতে চেষ্টা করেছি।”

”তারমানে- তারমানে- তুই বলতে চাচ্ছিস লরাক্স আমাদের ভুল ব্যাখ্যা দেয়?”

”খুব সম্ভবত তাই।”

”তার মানে এতদিন আমরা যা যা জেনে এসেছি সবই ভুল?”

”হতে পারে। সম্ভবত লরাক্স আমাদের ভুল ইনফর্মেশন দেয়।”

”আর দিবেই না কেন?” দিবিন দুঃখের সাথে বলতে থাকে,”যে ইতিহাসে মা তার সন্তানকে ঘরের কাজ না করার জন্য এত মারাত্মক শাস্তি দিতে পারে-”

”মা!” চমকে উঠে রয়া,” কি আশ্চর্য, মা তার সন্তানকে শাস্তি দিচ্ছে তুই বুঝলি কিভাবে?”

” মা ছাড়া ঘরের কাজ না করার জন্য আর কেই বা শাস্তি দিবে?”

রয়া মিনমিন করে বলে,” তা ঠিক বলেছিস। ভাগ্য ভালো, আমাদের মায়েরা এমন জল্লাদ না। ”

দিবিন গম্ভীর গলায় বলে উঠে,” এখন আমাদের কি করতে হবে জানিস?”

”কি করতে হবে?”

”যেহেতু আমাদের মায়েরা এরকম জল্লাদ না, তাই তাদের কিছু পুরষ্কার দিতে হবে। মায়েদের সব কথা আমাদের শুনতে হবে।”

” ঠিকই বলেছিস। মাঝে মাঝে নেক্সি অকেজো হয়ে গেলে ঘরের সব কাজ মা অফিস করে এসে করে। আমি কিছুই করি না। এজন্য আগেকার দিনে নির্মমভাবে শাস্তি দেওয়া হত। অথচ মা আমাকে কিছুই বলে না।”

”আজকে থেকে আমরা আমাদের মায়েদের সব কথা শুনবো। ঠিক তো?”

”একদম ঠিক।” রয়াও গলা মেলালো।

” কিন্তু-” দিবিন ইতস্তত করে, ”- ইয়ে, আমাদের ঘরের কাজে সাহায্য করার সময় কই? সারাদিন কোন না কোন কাজ নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়।”

” ধুর গাধা, তোকে কি রোজ রোজ কাজ করতে হবে নাকি? যখন দরকার পড়বে শুধু তখন- তা ছাড়া সব কিছুর জন্য সময় ভাগ করে নিবি। আর দেখিস না, আমি রোজ কিভাবে আমার থ্রিডি গেম খেলার জন্য সময় বের করে নেই?”

দিবিন গম্ভীর হয়ে মাথা নাড়লো, ”বুঝেছি। আর বলতে হবে না।”

তারপর বাচ্চাদুটোর মায়েরা অবাক হয়ে খেয়াল করলো তাদের মেয়েরা বেশ বদলে গেছে। তারা মাকে কাজে অনেক সাহায্য করে আর মায়ের কথার অবাধ্য হয় না। সবচেয়ে বড়কথা তারা সময়ের কাজ সময়ে করে।

সম্পূর্ণ সঠিক উপদেশ সম্পূর্ণ ভুলভাবে জেনে সম্পূর্ণ সঠিকভাবে পালনের এর চেয়ে চমৎকার উদাহরন বোধহয় এরচেয়ে ভালো নেই।

 

 

3 Replies to “একটি প্রাচীন উপদেশ”

  1. বাহ! সায়েন্স ফিকশন আমার খুবই ভালো লাগে। গল্পটা পড়ে খুবই ভালো লাগলো (y) স্থপতি চালিয়ে যান।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *