লাইফে আর কি (Archi)!

মানুষের কল্পনারও পরিধি থাকে, আমারও ছিলো। কিন্তু বাস্তবতা আমার কল্পনাকেও হার মানিয়েছে। কল্পনায় অনেক কিছুই দেখতাম, বড় হয়ে এই হবো, সেই হবো । কিন্তু কোনদিন ভুলেও ভাবিনি আর্কিটেক্ট হবো। নিয়তির কি অদ্ভুত খেয়াল, আমার ঠিকানা এখন স্থাপত্যে। তো যাই হোক, ভর্তি পরীক্ষার পর থেকে ক্লাশ শুরু হবার আগ পর্যন্ত কি কি ঘটেছে সেই কথা আর নাই বললাম, লেভেল ১ টার্ম ১ শেষ করে তিন মাস পিছনে ফিরে দেখতে ইচ্ছা করছে কেমন কাটলো আমার প্রথম আর্কি লাইফ।

ফেব্রুয়ারী মাসে প্রথম যেদিন ক্লাশ করতে আসলাম, সবার আগে দেখা হলো আমার মতই ইতস্তত ভঙ্গিতে দাঁড়ানো সারার সাথে। একটু সামনে এগিয়ে আমার স্কুল কলেজের কিছু পুরানো মানুষজন খুঁজে পেলাম। সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে ক্লাশে ঢুকলাম। ক্লাশ নিতে যিনি আসলেন তাঁকে দেখে আর যাই মনে হোক টিচার মনে হয় নাই। ক্লাশ শেষ হওয়ার পর টপাটপ দুজন সিনিয়র ভাইয়া ঢুকে গম্ভীর গলায় বললেন, “ক্লাশ শেষে প্রত্যেককে যেন ডিজাইন স্টুডিওতে পাই। দুজনের মধ্যে একজনকে আমি চিনতে পারলাম, টিভিতে নাটক করে। সামান্য ভয় লাগলো আসন্ন র‍্যাগএর কথা চিন্তা করে।

ডিজাইন ক্লাশ শেষে আমরা বিরিয়ানি আর কোক পেলাম। কিন্তু খাওয়ার আগেই সিনিয়ররা এসে পড়লো। তক্ষুণি টের পেলাম র‍্যাগকি জিনিস! যাই হোক, অনেক ঝামেলার শেষে ক্লাশ ও ওরিয়েন্টেশন শেষ করে যখন বাসায় ফিরলাম, তখন শরীরে আর কোন শক্তি অবশিষ্ট নেই। দীর্ঘ তিন মাস আরামে লুতুপুতু হয়ে যাওয়া শরীরের পক্ষে সারা দিনের ধকল সহ্য করতে পারা কষ্ট বইকি।

সপ্তাহ খানেক ক্লাশ করে যেটা বুঝতে পারলাম তা হলো আমরা অন্য সব ডিপার্টমেন্ট থেকে আলাদা। আমাদের সিনিয়ররা আমাদের র‍্যাগ দিয়ে চরম আনন্দ পায় যা আর কোন ডিপার্টমেন্টে নেই। তবে র‍্যাগ জিনিসটা যে একেবারে খারাপ তা বলবো না, কারণ এই র‍্যাগের কারণেই সিনিয়রদের সাথে আমরা খুব সহজেই পরিচিত হতে পেরেছি। তাই অন্য ডিপার্টমেন্টের বন্ধুরা যখন বলে যে সিনিয়রদের সাথে তাদের কোন যোগাযোগ নেই, তখন একটু অবাকই লাগে। আরও একটা জিনিস বুঝতে পারলাম, এখানে সব কিছু ভাগ্যের উপর ছেড়ে দিতে হয়। আমার ডিজাইন স্যারের পছন্দ হবে কিনা সেটা বুঝার কোন উপায় নেই। সবচেয়ে বড় যে কথা সেটা হল, আর্কিটেকচার পড়তে চাইলে অবশ্যই পকেট ভারী থাকতে হবে।

নবীন বরণ অনুষ্ঠানে গিয়ে যেটা আবিষ্কার করলাম সেটা হলো, স্টেজে পারফর্মার উঠলে তাকে দলগতভাবে পঁচিয়ে সবাই বিমলানন্দ পায়। আমাদের তো সিনিয়ররা পঁচানি দিচ্ছিলোই পাশাপাশি আমাদের ইমিডিয়েট সিনিয়র, যারা অনুষ্ঠান পরিকল্পনা করেছিলো তাদের সহ পঁচানো হচ্ছিলো। তবে এ কথা ঠিক যে, যাকে পচানো হয় সে ছাড়া বাকি সবাই ব্যাপারটা খুব উপভোগ করে। যেমন গান শুরু করার আগে গিটার টেস্ট করতে অনেকক্ষণ লাগছিলো বলে পিছন থেকে সব আপু ভাইয়ারা একসাথে আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারীগানটার কোরাস ধরেছিলো। স্টেজে থাকা ভাইয়ারা তখন কি যে বিব্রত হয়েছিলো…………

একই ঘটনা দেখা গেলো পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে। সেখানে একটা হাই থট নাটক হচ্ছিলো যার নাম দুইয়ে দুইয়ে চার‘ ( অবশ্য আমার এক বন্ধুর ভাষ্য অনুযায়ী নাম হওয়া উচিত ছিলো মাথার স্ক্রু ঢিলাGrin )। তো যেহেতু হাই থট নাটক, তাই অর্থ বোধগম্য হবে না এটাই স্বাভাবিক, কিন্তু আশ্চর্য হচ্ছে আমরা ভাষাটাও বুঝতে পারলাম না। তাই বারবার পিছন থেকে আবেদন আসছিলো, “সাবটাইটেল চাই” কিংবা ট্রানশলেশন করে দেন। খানিক পর সরাসরি আক্রমণ আসলো বন্ধ কর নাটক”, “ভাই মাফ করেন, আর না”। অবশেষে নাটক শেষ হবার সময়ও নানারকম খোঁচা মার্কা মন্তব্য করে বেচারা পারফর্মারদের চৌদ্দ গুষ্ঠি উদ্ধার করা হলো।

আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে ভবিষ্যতে যখন কোন অনুষ্ঠান হবে সেখানেও এই পঁচানোর ধারা অব্যাহত থাকবে। এটাই হয়তো এই ডিপার্টমেন্টের ঐতিহ্য যা আর কোন ডিপার্টমেন্টে নাই।

15 Replies to “লাইফে আর কি (Archi)!”

    1. আরে তানভীর! তোমারও একটা হাই থট সাইট আছে দেখছি। ভিজিট করতেই হবে দেখা যাচ্ছে।

  1. হে হে… অন্য ডিপার্টমেন্টের সিনিয়ররা তো আতঁলামী কইরাই টাইম পায় না… র‍্যাগ দিব কখন???!!!! আমদের কোন র‍্যাগ ই দিল নাThinking

    1. আঁতেল হলে র‍্যাগ দেওয়া যায়না এই কথা ফার্স্ট শুনলাম। যাই হোক ভাই, বেঁচে গেছেন। র‍্যাগ কেন দিলো না এইটা নিয়ে মন খারাপ করবেন না। (হি হি হি……)

  2. আপনার দাদার গুহা থেকে বাউন্স করে আপনার বাসায় এসে পড়েছি । পড়ে বেশ ভালো লাগছে । আপনাদের পরিবারের সবাইয়ের লেখার হাত দেখে মনে হয় যেন সবাই সোণার কলম হাতে নিয়েই জন্মেছেন ।
    আমি কলকাতার বাঙালী ( তথাকথিত “ঘটি” ) । পঁচানো বা পঁচানি মানে কি (কলকাতার ভাষায়) “আওয়াজ দেওয়া” বা “প্যাঁক দেওয়া” বা সাধু ভাষায় ব্যাঙ্গ করা ?
    আমি আপনার আগের প্রজন্মের মানুষ । কলকাতার অতি সাধারন মধ্যবিত্ত চাকুরীজীবি বাঙালী । একটু সঙ্কোচ লাগছে , আমি এখানে অনধীকার প্রবেশকারী নই তো ?
    যাই হোক অভয় দিলে আপনার অন্যান্য লেখাগুলোও পড়বো । আমার মাতৃভাষা বাংলা খোদ কলকাতায় মৃতপ্রায় । বলতে গেলে অক্সিজেনে বঁচে আছে । বাংলাদেশে বাংলা তবুও তো স্বাভাবিকভাবে শ্বাস – প্রশ্বাস নিতে পারছে । তার টানেই মূলত বাংলাদেশের বিভিন্ন ওয়েবসাইটগুলোতে ঘোরাফেরা করি ।
    ভালো থাকুন ও আরও লিখে যান । আপনাকে ও আপনার বন্ধুবান্ধবদের সবাইকে আমার নমস্কার ও অভীনন্দন ।

    1. আদাব নিবেন। আমার ভাইয়ের গুহা থেকে আমার নীড়ে ‘কষ্ট’ করে আসার জন্য আন্তরিক ধন্যবাদ।
      আমার ভাইয়া অনেক উঁচু লেভেলের মানুষ, সে তুলনায় আমি নিতান্তই সাধারণ একজন মানুষ। তাই ভাইয়ার লিখার সাথে আমার লিখার তুলনা দেওয়াই ভুল হবে। তবে এই ফাঁকে জানিয়ে রাখি, আমার মা বাংলার শিক্ষিকা হিসেবে দীর্ঘদিন কর্মরত ছিলেন। তাই আপনার ভাষায় ‘সোনার কলম’ যদি পেয়েই থাকি, তবে সেটা আমার মায়ের কল্যাণে।
      আপনি নিজেকে ‘ঘটি’ বলায় বেশ মজা পেলাম। কিন্তু বুঝতে পারলাম না কেন নিজেকে খাটো করছেন নিজেকে পশ্চিমবঙ্গের অধিবাসী ভেবে? আমি তো কোন বিধিনিষেধ আরোপ করিনি। আমার এই সাইট সবার জন্য উন্মুক্ত। ভাবতে ভালো লাগছে যে আপনি সূদূর কলকাতায় বসে আমাদের বাংলাদেশিদের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করছেন।
      আপনি ‘পঁচানো’ কথাটা বুঝতে পারেন নি দেখে আবার মজা পেলাম। আমরা বাংলায় কথা বলি, আপনারাও বলেন। কিন্তু আপনাদের সাথে আমাদের বাংলার অনেক পার্থক্য আছে। যেমন উচ্চারণগত (ছোট্ট একটা উদাহরণ দেই, ‘হয়েছে’ কথাটাকে আপনারা উচ্চারণ করার সময় বলেন ‘হয়েচে’ আর আমরা বলি ‘হইসে’। ) আর ব্যবহারগত। আমরা বলার সময় অনেক রকম কথাই বলে ফেলি, উদাহরণস্বরূপ জোস হইসে, ফাটাফাটি, কোপা সামসু, আবার জিগায় ইত্যাদি ইত্যাদি। এসব কথার সাথে আপনারা পরিচিত নন বলে বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে। যাই হোক, ‘পঁচানো’ মানে সহজ বাংলায় কাউকে তীব্র মন্তব্য করে সবার সামনে বিব্রত করে ফেলা। আশা করি এবার বুঝতে পেরেছেন।
      ভালো থাকবেন।

  3. হা হা হা, মজা পেলুম অভিজ্ঞতা পড়ে। অল্প-বিস্তর র‍্যাগ ভালো জিনিস, কিন্তু জাহাঙ্গীরনগরের মত হলেই খারাপ। ছেলেরা র‍্যাগ খায় বেশী।

    যাইহোক, অার্কি লাইফ সুখের হোক Grin

  4. বর্ণনা ভালো লেগেছে, লেখার হাত বেশ ভালো তোমার। তুমি বোধ হয় ২০১০ ব্যাচের, তাই না?

    তুমি করেই বললাম Smile

  5. অনেক মজা পেলাম পড়ে।আপনার লেখার হাত ভালো।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *