আমার বেকুব হওয়ার কাহিনী (পর্ব-৩)

ভারতীয় উপমহাদেশে চারশত খ্রিস্টাব্দে গুপ্ত শাসনামলে প্রথম মন্দির বা ‘টেম্পল’ এর ধারনা আসে। গুপ্ত সম্রাজ্যের পর প্রভাকরবর্ধন (৫৮০-৬০৫), রাজ্যবর্ধন(৬০৫-৬০৬) এবং হর্ষবর্ধন(৬০৬-৬৪৭)নতুন সম্রাজ্যের শুরু করেন সে সময় শাসক রাজ্যবর্ধনের সাথে বর্তমান বাংলাদেশ এলাকার রাজা শশাঙ্কের সাথে কিছুটা গন্ডগোল হয়, যার ইঙ্গিত সংক্ষিপ্ত শাসনামল দেখেই কিছুটা পাওয়া যায়। তবে আসল মিরাকেল ঘটে হর্ষবর্ধনের শাসনামলে। গুপ্ত সম্রাজ্যের সময়ই সর্বপ্রথম নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়। এই প্রাচীন বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিলো পাটালিপুত্রের পাশে পাটনা শহরের ৫৫ মাইল দক্ষিণ-পূর্বে। হর্ষবর্ধনের সময় এই বিশ্ববিদ্যালয় উন্নতির চরম শিখরে উঠেছিলো।

মোটামুটিভাবে সেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ৮টা কলেজ ছিল সব মিলিয়ে যার ছাত্র সংখ্যা ছিলো ১০ হাজার। সুন্দরভাবে প্ল্যান করা ৮টা আলাদা বিল্ডিং ছিলো যা দেখতেও ছিলো খুব চমৎকার। তিনটা ভিন্ন দালানে ছিলো সমৃদ্ধ পাঠাগার যাদের নাম ছিলো রত্নসাগর, রত্নদধি ও রত্ন্ররঞ্জক। সম্ভবত প্রত্যেকটা দালান প্রায় ৯ তলা বিল্ডিঙের সমান উঁচু ছিলো। উল্লেখ্য পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ইটের তৈরি ছিলো। এটি ছিলো পোস্ট গ্র্যাজুয়েট বিশ্ববিদ্যালয়। বিশ্ববিদ্যালয়ে অত্যন্ত উঁচু মানের পড়াশোনা হতো। বৌদ্ধ দর্শন, গনিত, আয়ুর্বেদ, চিকিৎসা বিজ্ঞান, আইন, বৈদিক দর্শনসহ আরও অনেক বিষয়ে পড়াশোনার সুযোগ ছিলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ভাইস চ্যান্সেলর একজন বাঙালি ছিলেন। ভদ্রলোকের নাম ছিলো শীল ভদ্র। পড়াশোনার পাশাপাশি এক্সট্রা কারিকুলার অ্যাক্টিভিটিও ছিলো। নিয়মিত বিতর্ক হতো। ছাত্রদের ক্লাস অ্যাসাইন্মেন্ট দেওয়া হত। বিশ্ববিদ্যালয় ২৪ঘন্টা খোলা থাকতো। বাইরের দেশ থেকে ভিজিটিং প্রফেসররা আসতেন। কোরিয়া, জাপান, ইন্দোনেশিয়া, চীন, তুরস্ক এবং ইরান থেকেও ছাত্ররা এ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসতো।

সবচাইতে চমৎকার ব্যাপার হলো বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা ব্যবস্থা। এত বিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের জন্য সরকার থেকে কোনও বরাদ্দ দেওয়া হত না। আশেপাশের ১৮০টা গ্রামের সকল আয় ব্যায় করা হত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের পিছনে।

হর্ষবর্ধনের সময় পরিব্রাজক হিউয়েন সাং উপমহাদেশে এসেছিলেন। তার বিবরণ থেকে নালন্দা সম্বন্ধে জানা যায়। ‘হর্ষচরিত’ বই থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবরণ পাওয়া যায়। লেখক এ. ঘোষ এর বই ‘এ গাইড টু নালন্দা’ থেকে বর্তমান যুগে নালন্দা ভ্রমনের অভিজ্ঞতা জানা যায়।

এবার আসা যাক তুলনায়। আমরা আবার সবসময় নিজেদের ‘মূর্খ, অসভ্য, অশিক্ষিত’ জেনেছি আর ইউরোপিয়ানদের ‘জ্ঞানী, সভ্য, শিক্ষিত’ জেনে এসেছি তো, তাই তাদের সাথে ছোট্ট একটা তুলনা না করার লোভ সামলাতে পারছি না। ৬৩০ খ্রিস্টাব্দে হিউয়েন সাং যখন নালন্দার কথা লিপিবদ্ধ করতে ব্যস্ত, ঠিক সেই সময়ে বর্তমান ইতিহাসখ্যাত অক্সফোর্ড ও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় তখনও জংগল হয়ে পড়ে আছে। আর আমেরিকা? আমেরিকা তখনও কলম্বাস আবিষ্কার করেন নি। সভ্যতার ছোঁয়া সেখানে পৌঁছাতে আরও শত শত বছর বাকি।

স্যারের কথা শুনে আমি চুপ করে বসে থাকি। প্রায় এক হাজার বছর আগে এই ছিলো আমাদের সাথে ইউরোপ-আমেরিকার তুলনা। আর এখন?

7 Replies to “আমার বেকুব হওয়ার কাহিনী (পর্ব-৩)”

  1. মাশাআল্লাহ! তুই তো দারুন লিখিস! খুব ভাল লিখেছিস। চালিয়ে যা। আর্কসা তে দেখে উঁকি দিতে এলাম। আমি বিস্মিত এবং অভিভূত। পুরো সাইটটাই খুব সুন্দর হয়েছে। সিম্পলি ওয়ান্ডারফুল! Now there’s a reason good enough to be proud of my Kamla!

    1. অনেক ধন্যবাদ আপু।
      প্রথম কোন আমলা আমাকে কমেন্ট করলো।
      খুশিতে একেবারে বাকবাকুম হয়ে গেলাম। Grin

  2. “ভারতীয় উপমহাদেশে চার হাজার খ্রিস্টাব্দে গুপ্ত শাসনামলে প্রথম মন্দির বা ‘টেম্পল’ এর ধারনা আসে।”
    এখন তো মোটে ২,০০০ খ্রিষ্টাব্দ। আপনি ৪,০০০ কই পাইলেন??!!

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *